মৃত্যুর পরেও মেলেনি কবর! কীভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা?

Cleopatra Death Mystery: ২,০০০ বছরেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রার সমাধি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ক্লিওপেট্রা। সৌন্দর্য যার পায়ের সামনে মাথা নিচু করে বসে থাকে, রহস্য, আভিজাত্য আর নানা গল্পকথা ঘিরে রয়েছে এই একটি নামকে ঘিরে। মিশরীয় ফারাওদের মধ্যে সর্বশেষ ছিলেন ক্লিওপেট্রা। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের পতনের পর তাঁর মৃত্যুই টলেমাইক রাজবংশের সমাপ্তি ঘটায়। ৩০৫/৩০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে মিশর শাসন করেছিল এই রাজবংশ। ২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অগাস্টাস হয়ে ওঠা প্রথম রোমান সম্রাট অক্টাভিয়ান ক্লিওপেট্রার রাজত্বের দখল নেন। সেনানায়ক অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রা অক্টাভিয়ানের পথ আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাঁকে পরাজিত করার জন্য নিজেদের সেনাবাহিনীকে একত্রিত করেছিলেন। কিন্তু গ্রিসের বিখ্যাত অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে মিশরের এই রানি ফিরে যেতে বাধ্য হন। আর এই ফিরে যাওয়ার পর থেকে তাঁর মৃত্যু অবধি যাত্রাখানি রহস্যে ভরা। বলা হয় আত্মহত্যা করেছিলেন রানি, কিন্তু ঠিক কীভাবে জানা যায়নি আজও। এমনকী এতকাল পরেও তাঁর কবর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর পরেও অধরা ক্লিওপেট্রার রহস্য, আর তাঁর আকর্ষণ কিংবদন্তি।

অক্টাভিয়ান মিশর দখল করার পরে, এর নামকরণ করা হয় ইজিপটাস এবং রোমান অর্থনীতির অন্যতম কাণ্ডারি হয়ে ওঠে এই অঞ্চল। আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরটি সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হয়ে ওঠে। অক্টাভিয়ানের সৈন্যরা আলেকজান্দ্রিয়ার দিকে এগনোর সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টনি ফের যুদ্ধে যোগ দেন। অন্যদিকে, ক্লিওপেট্রা তখন তার ধনসম্পদ এবং দুই দাসী সহ নিজেকে লুকিয়ে রাখেন এক গোপন জায়গার মধ্যে। কিন্তু অ্যান্টনির কাছে খবর যায় ক্লিওপেট্রা মারা গেছেন। এই খবর পেয়ে বিধ্বস্ত অ্যান্টনি টাল সামলাতে না পেরে নিজের তরবারির উপর পড়ে যান। ভয়ানয় আহত হন তিনি। এর কিছু সময় বাদে তিনি খবর পান, ক্লিওপেট্রা এখনও বেঁচে আছেন। গুরুতর আহত অবস্থাতেই তাঁকে ক্লিওপেট্রার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। রানি তাঁর প্রেমিক অ্যান্টনিকে এই অবস্থায় দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। মৃত্যুর আগে অ্যান্টনি অক্টাভিয়ানের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে অনুরোধ করে যান ক্লিওপেট্রাকে।

আরও পড়ুন- মাটি খুঁড়তেই মেলে ৪৫০০ বছরের প্রাচীন সূর্যমন্দির, শিহরণ জাগায় মিশরের যে ইতিহাস

অক্টাভিয়ান অবশ্য কোনও চুক্তিতেই রাজি ছিলেন না। রোমের শোভাযাত্রায় ক্লিওপেট্রাকে প্রদর্শন করার 'ট্রফি' হিসাবে চেয়েছিলেন অক্টাভিয়ান। শোনা যায়, নিজের মান বাঁচাতে আত্মহত্যা করেন ক্লিওপেট্রা। কিংবদন্তি অনুযায়ী, একটি সাপকে নাকি তাঁকে কামড়াতে বাধ্য করা হয়। যদিও তাঁর দুই দাসীরও একইসময় মৃত্যু ঘটে। ফলত অন্য কিংবদন্তি বলে, বিষ খেয়েছিলেন সকলে।

রোমান ইতিহাসবিদদের অনেকেই বলেন, চুলের কাঁটা দিয়ে বিষাক্ত মলম বা বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন ক্লিওপেট্রা। রোমান ইতিহাসবিদ ডিও ক্যাসিয়াস ক্লিওপেট্রার মৃত্যু সম্পর্কে লিখেছিলেন, "কেউ স্পষ্টভাবে জানে না যে কীভাবে তিনি মারা গিয়েছিলেন, কারণ তাঁর শরীরের একমাত্র চিহ্ন ছিল বাহুতে সামান্য আঘাত।"

অনেকের মতে, জলের পাত্রে বা সম্ভবত কিছু ফুলের মধ্যে লুকিয়ে আনা হয়েছিল এক বিষাক্ত সাপকে। সেই সাপকে দিয়ে কামড়ানোর পরেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যরা বলেন, চুলের খোঁপায় যে কাঁটা বাঁধতেন তাতে বিষ মাখিয়ে রেখেছিলেন তিনি, যার সামান্য অংশও দেহে গেলে ব্যথাহীনভাবে মৃত্যু ঘটতে পারে। ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করার পর তাঁর সম্পত্তি এবং মৃত অ্যান্টনিকেও একই সমাধিতে একসঙ্গে সমাহিত করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন- নুন দিয়ে দেহ শুকনোর পর কী এমন মাখানো হতো দেহে? অবশেষে ফাঁস মমি তৈরির রহস্য

মিশরীয় কোবরা: এই সাপটিই হত্যা করে ক্লিওপেট্রাকে?

মিশরীয় কোবরা (ওরিয়াস), উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলির মধ্যে একটি। আলেকজান্দ্রিয়া শহরের আশেপাশে যেখানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হয়, তার চারপাশে এই সাপটিকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যেত। তবে অনেকে বলেন, সাপ আসলে প্রতীক মাত্র। সাপ দীর্ঘকাল ধরেই যৌনতার প্রতীক। ক্লিওপেট্রার যৌন আবেদন ও আখাঙ্খাকেই কি তুলে ধরছে সাপ? রোমান জেনারেল মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে ক্লিওপেট্রার প্রেম ও যৌনতা চিরকালের চর্চার বিষয়। অনেকেই যুক্তি দেন, সাপটি আসলে এক কাব্যিক প্রতীক। দূর দেশ থেকে আসা এক রহস্যময় নারীর মৃত্যু হিসাবে এই সাপের রহস্যকে সাজানো হয়েছিল।

এছাড়া প্রায়শই ফারাওদের মুকুটে প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হত মিশরীয় কোবরা। নিজের ক্ষমতার প্রতীকটিকে নিজেরই জীবন শেষ করতে ব্যবহার করেছিলেন ক্লিওপেট্রা, এমনও সম্ভব।

ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর আরেকটি রহস্য জড়িয়ে আছে তাঁর কবর ঘিরে, যেখানে তাঁর মৃতদেহ সমাহিত করা হয়েছিল। ২,০০০ বছরেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রার সমাধি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেহেতু রানির কোনও পরিচিত দৈহিক অবশেষ নেই, তাই বর্তমানে তাঁর মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই একমাত্র ভরসা। প্রত্নতাত্ত্বিকদের একাংশ ২০২২ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার ঠিক পশ্চিমে ৪,২৮১ ফুট দীর্ঘ একটি টানেল আবিষ্কার করেন। তাঁদের অনুমান, ক্লিওপেট্রার সমাধির দিকেই গিয়েছে এই সুড়ঙ্গ। যদিও শেষ অবধি তা রহস্যই রয়ে গেছে।

 

More Articles