মোদিকে সিংহাসনে রাখতেই জাল ভোটার তালিকা?
Rahul Gandhi : ভুয়ো ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে ৪০,০০৯ জনের। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঠিকানাও রয়েছে বলে দাবি করেন রাহুল।
প্রধান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী দু-দিন আগেই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর কথা বলেছিলেন। ৭ অগাস্ট একটি সাংবাদিক সম্মেলনে সেই ইঙ্গিত মিলল। ১ ঘণ্টা ১২ মিনিটের এই সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক সম্মেলনটির শিরোনাম ছিল - 'ভোট চোরি কা অ্যাটম বোমা সবুত'। যার বাংলা অর্থ- ভোট চুরির বোমার মতো প্রমাণ। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ তুললেন রাহুল?
রাহুলের অভিযোগ, দেশ জুড়ে ভোট কারচুপি হচ্ছে। কীভাবে ভোট চুরি হচ্ছে তা জানতে তাঁদের অনেক সময় লেগেছে বলে জানান তিনি। ভোটার তালিকা নিয়ে পাঁচটি স্তরে ছ’মাস ধরে তদন্ত করেছে কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। তাঁর অভিযোগ, লোকসভাব নির্বাচনে কমিশন জাল ভোটার এবং নকল ভোটারদের ভোটদানের সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-কে সুবিধা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন আর বিজেপি সেই সুযোগে ভোটে কারচুপি করেছে।
রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মূলত ৫ প্রকার ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। তার মধ্যে ডুপ্লিকেট ভোটার, অবৈধ ঠিকানা, অবৈধ ছবি ব্যবহার করে ভোটার তালিকা তৈরির কথা আমরা আগেও শুনেছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো রাহুল অভিযোগ করেছেন, মহারাষ্ট্রের শিরডি বিধান সভায় শুধুমাত্র একটি বিল্ডিং থেকে ৭,০০০ নতুন ভোটারের নাম যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, "লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং তার জোট দলগুলিই রাজ্যের সিংহভাগ আসনে জিতেছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে তারা হেরে গেল।" এর মধ্যে ১ কোটি নতুন ভোটারকে যুক্ত করে ভোট তোলার অভিযোগ তুলছেন রাহুল।
আরও পড়ুন- WB Electoral Roll : নির্বাচন কমিশনের অভূতপূর্ব নির্বাচনী তালিকা সংশোধন এবার বঙ্গেও
তাঁর কথায়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটচুরি হয়েছে বেঙ্গালুরুর বিধানসভা কেন্দ্র মহাদেবপুরায়। বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রালের অধীনে এই বিধানসভা কেন্দ্র। রাহুল বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বেঙ্গালুরু সেন্ট্রালে কড়া প্রতিযোগিতা হয়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থী মনসুর আলি খানা বেশির ভাগ সময়ে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু দেখা গেল কংগ্রেস বিজেপির পিসি মোহনের কাছে ৩২,৭০৭ ভোটে হেরেছে। তাঁর দাবি, মূলত ফর্ম ৬ ব্যবহার করে জাল ছবি, জাল ঠিকানা দিয়ে নতুন ভোটাদের নাম তালিকায় যোগ করা হয়। এই ফর্ম ১৮-২৫ বছর বয়সী ভোটারদের জন্য। শুধুমাত্র জন্ম শংসাপত্রে নিজের সই থাকলেই এই ফর্ম ভরা যায়। দেখা গিয়েছে, মহাদেবপুরের ৩২,৭০৭ নতুন ভোটারদের বেশির ভাগেরই বয়স ৯৭-৯৮।
রাহুলের দাবি, কংগ্রেস কর্ণাটকের ২৮টি আসনের মধ্যে ১৬টি জিতবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু কংগ্রেস শুধুমাত্র নয়টি আসনই পেয়েছে। তিনি এর জন্য ভোট কারচুপিকেই দায়ী করছেন। তাঁর কথায়, “বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভায় মোট ভোট পড়েছে ৬.২৬ লক্ষ। বিজেপি জিতেছে ৩২,৭০৭ ভোটের ব্যবধানে। মহাদেবপুরায় কংগ্রেস পেয়েছে ১,১৫,৫৮৬ ভোট এবং বিজেপি পেয়েছে ২,২৯,৬৩২ ভোট। কংগ্রেস সব বিধানসভা জিতেছে, কিন্তু এই একটি আসন ছাড়া।" তাঁর আরও দাবি, "আমরা ১,০০,২৫০টা ভোট চুরির প্রমাণ পেয়েছি।"
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি শুধু দাবিই করেননি ভোটার তালিকা তুলে ধরে নিখুঁত ভাবে বুঝিয়ে দিলেন কী করে একটার পর একটা ভোটে ‘কারচুপি’ হয়েছে। ওই তালিকায় দেখা গিয়েছে, চারটি ভিন্ন ভোটকেন্দ্রেই একটি ব্যক্তির নাম রয়েছে। "এরকম শত শত ঘটনা ঘটেছে," বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, "৬৮ জন ভোটারের ঠিকানা ছিল একটি পানশালায়।" রাহুল বলেছেন, কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা এই জায়গাগুলিতে গিয়েছিলেন।
হরিয়ানার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হরিয়ানায় ভালো ফল করেছিল কিন্তু দেখা গেল বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেল কংগ্রেস। বিধি বদলে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ দেয়নি। এই নিয়ে সমালোচনা করেন রাহুল। তিনি নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করেছেন। হরিয়ানায় ভুয়ো ভোটার-১১,৯৬৫। একই ভোটারের নাম একাধিক বার রয়েছে তালিকায়। ভুয়ো ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে ৪০,০০৯ জনের। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঠিকানাও রয়েছে বলে দাবি করেন রাহুল।
আরও পড়ুন- ১৯৭৭ আর ২০২৪: ইন্দিরা আর মোদির দুই নির্বাচনে কী কী আশ্চর্য মিল?
রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচন কমিশন কেন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেনি? এই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলে ৩০ সেকেন্ডে তাদের জালিয়াতি সামনে এসে যেত। রাহুল স্পষ্ট বলেন, মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে। আর তার জন্যই নির্বাচনে হেরেছে কংগ্রেস। ৪০ লক্ষ সন্দেহজনক ভোটারের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। রাহুল প্রশ্ন তোলেন, পাঁচ বছরে মহারাষ্ট্রে যে ভোটারের সংখ্যা ছিল তা পাঁচ মাসের মধ্যেই হঠাৎ বেড়ে গেল কী করে?
একদম শেষে রাহুল গান্ধী বলেন, "যদি তারা (বিজেপি) আরও ২৫টি আসন হেরে যেত" তাহলে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা হারাত। তাঁর দাবি, এই কারণেই বিজেপি এই ঘটনাগুলি সাজিয়েছিল।
রাহুল নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘আপনারা যে পদেই থাকুন না কেন, সিনিয়র হোন বা জুনিয়র, আপনাদের রেয়াত করা হবে না।’’ তিনি দাবি করেছেন, একাধিক আসনে ভোটার তালিকার কারচুপি জবাব দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। গুরুত্বপূর্ণ হলো রাহুল বলেছেন, ভারতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ব্যালট পেপার নিয়ে বিতর্কের থেকেও জরুরি বিষয় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা। নির্বাচন কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলেই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়া সম্ভব।
প্রসঙ্গত, রাহুল গান্ধী বারবার বলেছেন মহাদেবপুরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল তারপরও কংগ্রেস নির্বাচনে হারল। হরিয়ানাতেও লোকসভা ভোটে ভালো ফল করে বিধানসভা ভোটে হারল। মহারাষ্ট্রেও লোকসভা ভোটে ভালো ফল করে বিধানসভা ভোটে হেরে গেল কংগ্রেস। প্রশ্ন উঠছে, বিরোধী দলের ক্ষমতা থাকা রাজ্যেও যদি এই হারে ভোট কারচুপি হয় তাহলে বিজেপি শাসিত রাজ্যে কী হচ্ছে?
এতদিন নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের এই অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। প্রশ্ন হলো, এবার কি প্রমাণ পেয়ে নির্বাচন কমিশন জেগে উঠবে? যদি তা না হয় তাহলে সাংবিধানিক সংকট ঘটবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।

Whatsapp
