রোনাল্ডোর গোপন খাবার থেকে ক্রোয়েশিয়ার 'সেক্সিয়েস্ট ফ্যান', বিশ্বকাপ রঙিন হয়ে থাকল যে ঘটনায়

FIFA World Cup 2022 : এই ফ্রেমের বাইরেও বিশ্বকাপের আরও বেশকিছু মুহূর্ত রয়ে গেল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এমনই কিছু বিশেষ মুহূর্তের ঝলক রইল

১৮ ডিসেম্বরের পর রাত জাগার পালা শেষ হয়েছে। স্কুল, কলেজ বা অফিসের গ্রুপে বন্ধুদের সঙ্গে তর্ক বিতর্কও এখন খানিক স্তিমিত। হাতের কাজ তাড়াতাড়ি সেরে নিয়ে, খেয়ে পছন্দের ফুটবলারকে খেলতে দেখার পালাও আপাতত শেষ। এবার চার বছরের অপেক্ষা। ২০২৬ সালে ফের একবার আসর জমাতে মাঠে নামবেন এমবাপে, হাকিমি, রিচার্লিসনরা। ২০২২-এর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর খেলা পাগল মানুষদের একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে বৈকি!

এই বিশ্বকাপের সবথেকে উত্তেজক ম্যাচটি বোধহয় সবার শেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের ফাইনাল ম্যাচটি যে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে, তা বলে দিয়েছেন অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। ১২০ মিনিটে ৩-৩ স্কোর, তারপর পেনাল্টির টানটান উত্তেজনা – বিশ্বকাপ ফাইনাল হয়তো এমনই হওয়া উচিত। লিও মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্নও অনেকের পূরণ হয়ে গেল। সেইসঙ্গে গোটা ফুটবল বিশ্ব অভিবাদন জানাল কিলিয়ান এমবাপেকে। তবে এই ফ্রেমের বাইরেও বিশ্বকাপের আরও বেশকিছু মুহূর্ত রয়ে গেল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এমনই কিছু বিশেষ মুহূর্তের ঝলক দেখে নেওয়া যাক…

ইকুয়েডরের ফ্যানের ‘উত্তর’

২০ নভেম্বর বিশ্বকাপের সূচনা হয়েছিল। প্রথম ম্যাচে আয়োজক দেশ কাতারের মুখোমুখি হয়েছিল ইকুয়েডর। ম্যাচের আগেই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। শোনা যায়, কাতার নাকি ইকুয়েডরের বেশকিছু খেলোয়াড়কে টাকা দিয়ে কিনে নিতে চায়। কেন? ম্যাচ জেতার আশায়। ফিফা নিজে এটা নিয়ে তদন্ত শুরু করে। কাতারের নামে এর আগেও এরকম অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু ম্যাচে দেখা গেল, কাতার কার্যত দাঁড়াতে পারল না। ২-০ গোলে তাদের পরাস্ত করে ইকুয়েডর।

সেই সময় গ্যালারিতে থাকা ইকুয়েডরের এক ভক্ত কাতারের বাসিন্দাদের ব্যঙ্গ করেন। হাতের ইশারায় ‘টাকা’ দেখান। যেন বোঝাতে চাইছেন, টাকা দিয়ে সবকিছু কেনা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে পিছনে বসা কাতারের এক বাসিন্দা তেড়েফুঁড়ে ওঠেন। দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বচসা, কথা কাটাকাটি। পরে অবশ্য ঠিক হয়ে যায় সব। তবে শুরুর দিনই এমন ঘটনা ভাইরাল হতে দেরি করেনি।

আরও পড়ুন : এখনও তাড়া করছে ফাইনালের রাত, জন্মদিনে এমবাপের মন একেবারেই ভালো নেই

মরক্কো-সেনেগাল বন্ধুত্ব

গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ চলছিল ইকুয়েডর আর সেনেগালের। ৮১ মিনিট খেলা অতিক্রান্ত। সেনেগাল এগিয়ে আছে ২-১ গোলে। সেনেগালের ফ্যানরা স্টেডিয়াম মাতিয়ে রেখেছেন। হঠাৎই বিশেষ একটি দিকে চোখ গেল ক্যামেরার। দেখা গেল, এক ঝাঁক সেনেগালের ফ্যানদের মাঝে তালে তাল মিলিয়ে নাচছেন অন্য আরেকজন। গলায় ঝোলানো মরক্কোর স্কার্ফ। আনন্দ, বন্ধুত্বের এই ফ্রেম সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়।

ওয়েলসের ফ্যানের কান্না

দীর্ঘ ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠল ওয়েলস। তারকা ফুটবলার গ্যারেথ বেলের প্রথম বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে দলে আলাদা এক আবেগ। কাতারের মঞ্চে যখন জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠল, তখন ওয়েলস ফুটবলারদের গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। চোখও হালকা ভেজা। সেই সময়ই ক্যামেরা গেল গ্যালারির দিকে। চোখ পড়ল ওয়েলসের এক মহিলা ভক্তের দিকে। চোখ ভেজা, জল গড়াচ্ছে। চোখ মুখ একেবারে লাল। চিৎকার করে নিজের দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন। ফুটবল বিশ্ব স্তভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল এমন একটি মুহূর্তের দিকে। ডোয়েইনওয়েন মরগান নামের ওই মহিলা পরে জানতে পারেন। অবশ্য সমস্ত কৃতিত্ব দিয়েছেন ক্যামেরাপার্সনকে। কিন্তু দেশের জন্য এরকম আবেগ নিয়ে পাশে দাঁড়ানো, গোটা ওয়েলস সেলাম জানিয়েছিল।

রোনাল্ডোর ‘গোপন খাবার’

গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ চলছে। পর্তুগালের মুখোমুখি ঘানা। গোটা পৃথিবীর নজর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দিকে। তাঁর খেলা নিয়ে উৎসাহিত সবাই। ওই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোলও করেন রোনাল্ডো। কিন্তু ওই ম্যাচেরই একটি দৃশ্য রীতিমতো রহস্যে ফেলে ভক্তদের। ক্যামেরায় দেখা যায়, খেলতে খেলতে প্যান্টের ভেতর থেকে কিছু একটা বের করলেন রোনাল্ডো। তারপর সোজা ঢুকিয়ে দিলেন মুখে। আড়াল আবডাল থাকলেও কিছু যে খাচ্ছেন সেটা বোঝা গেল। কিন্তু কী খাচ্ছেন তিনি? প্যান্টের ভেতর কী আছে? গোপন কোনও পকেট? সেখানে লুকিয়ে রাখা আছে কোনও খাবার? উত্তর আসেনি। ফেলুদা, তোপসে কি জানেন এর উত্তর?

ক্রোয়েশিয়ার ‘সেক্সিয়েস্ট ফ্যান’

এই বিশ্বকাপে মেসি, রোনাল্ডো, এমবাপেদের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন ইনি। নাম ইভানা নল, প্রাক্তন মিস ক্রোয়েশিয়া। কাতার বিশ্বকাপ সমালোচিত হয়েছে তার পোশাক ফতোয়া নিয়ে। কেন এমন বিধিনিষেধ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। তবে সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন ইভানা। ক্রোয়েশিয়ার এই মডেল মদরিচদের সমর্থক। নিজের দেশের মানুষ তাঁকে ডাকেন ‘সেক্সিয়েস্ট চিয়ারলিডার’ হিসেবে। সেই ইভানাই ঝড় তুললেন স্টেডিয়ামে। সাহসী পোশাকে ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় পতাকার রঙ। স্টেডিয়ামেই নয়, বিচে, রাস্তাঘাটে সর্বত্র ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করা। বিতর্ক তৈরি হলেও তাঁকে দমানো যায়নি। ক্রোয়েশিয়া তৃতীয় হলেও, ইভানা নল অনেক পুরুষেরই মন জিতে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন : ক্রোয়েশিয়া হারল, দাগ রেখে গেলেন ক্রোয়েট সুন্দরী ইভানা নল

‘হ্যারি পটার’ মেসি

তখন ফাইনাল অতিক্রান্ত। বিশ্বকাপ পেয়ে গিয়েছে আর্জেন্টিনা। এবার শুধু হাতে আসা বাকি। গোটা টিম স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে। ফিফা প্রেসিডেন্ট গিয়ানি ইনফান্তিনোর হাত দিয়ে ট্রফি নেওয়ার আগে একটি অদ্ভুত জিনিস হল। প্রথা অনুযায়ী, মেসির গায়ে কালো আলখাল্লা পরিয়ে দিল কাতার। সেটাও ভাইরাল হয়ে গেল। কেউ কেউ তো বলেই ফেললেন, হ্যারি পটার বড়ো হয়ে গিয়েছেন। এখন আর্জেন্টিনার হয়ে নিজের জাদু ছড়াচ্ছেন। এভাবেই লিও মেসির সঙ্গে জুড়ে রইল কাতার, এবং হ্যারি পটার।

ফাইনালে সল্ট বে!

মন্তিয়েল শেষ শটটি জালে জড়িয়ে দৌড় দিয়েছেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনা জিতেছে বিশ্বকাপ। গ্যালারি থেকে খেলোয়াড়দের পরিবার নেমে এল। নেমে এলেন সার্জিও আগুয়েরো। হঠাৎই মাঠে উদয় আরও একজনের। তিনি সল্ট বে। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত থাকেন, তাঁরা এঁকে নিশ্চয়ই চেনেন। পৃথিবী বিখ্যাত শেফ তিনি; নিজের একটি রেস্তোরাঁও আছে। ফুটবলাররা তাঁর বন্ধু, তাঁর রেস্তোরাঁয় গিয়ে খান। নিজেও একটু আধটু ফুটবল খেলেন, এবং ভালোই খেলেন। তুরস্কের এই শেফ সটান চলে যান আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের কাছে। দি মারিয়া, আলভারেজ, এমি মার্তিনেজের সঙ্গে ছবি তোলেন।

গোল বাঁধল মেসির কাছে যাওয়ার পর। লিওনেল মেসির দিকে তখন যাবতীয় ক্যামেরা। সেই সময় সল্ট বে তাঁর কাছে পৌঁছন। এদিকে হঠাৎ তাঁকে দেখে একটু এড়িয়েই যান মেসি। হাত মেলাতে চাইলে চলে যেতে চান। কিন্তু সল্ট বে নাছোড়বান্দা। মেসির হাত টেনে ছবি তুলবেনই তিনি। এই পুরো মুহূর্তই ক্যামেরাবন্দি হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

More Articles