এখনও তাড়া করছে ফাইনালের রাত, জন্মদিনে এমবাপের মন একেবারেই ভালো নেই

Kylian Mbappe Birthday : বিশ্বকাপ জেতা যেন সময়ের অপেক্ষা। আর জিতলে সেটাই হবে এমবাপের জন্মদিনের সবচেয়ে বড়ো উপহার।

২০২২-এর ২০ ডিসেম্বর দিনটা অন্যরকম হতেই পারত। ঠিক এক মাস আগে শুরু হওয়া একটা উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারত অন্য জায়গায়। পতাকার রঙ বদলে যেত, পাল্টে যেত হাসি কান্নার রূপলেখাও। ভাষা, গান, হতাশা সমস্তটাই পাল্টে যেত। কিন্তু হল না সেসব। এই মুহূর্তে নিজের জায়গায় বসে সেসবই ভেবে চলেছে ২৪ বছরের এক তরুণ। ছটফটে, দুরন্ত তিনি। চোখে মুখে সাহস আর দম্ভের ছাপ। হবে নাই বা কেন? ২৪ বছরেই তিনি বিশ্বসেরাদের একজন। একের পর এক রেকর্ড তাঁর সামনে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মেসি-রোনাল্ডো পরবর্তী যুগের মহাতারকা ধরা হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু কিলিয়ান এমবাপে (Kylian Mbappe) এখন চুপচাপ। আজকে তাঁর ‘মন ভালো নেই’…

অথচ ছবিটা অন্যরকম হতে পারত। সেটাই মনে করেছিল ফুটবল বিশ্ব। সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি (Lionel Messi) হাতে ট্রফি তুলে নেবেন, এই ছবিটা দেখার অপেক্ষায় ছিল গোটা দুনিয়া। কিন্তু এমবাপের দক্ষতা, তাঁর খেলা, গোটা ফরাসি ব্রিগেডের পারফরমেন্স একদম অন্য ছবি তৈরি করে রেখেছিল। ২০১৮ সালেই এমবাপে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। সেই বিশ্বকাপে ৪ টি গোল ছিল তাঁর সঙ্গে। সেইসঙ্গে ছিল বিশ্বকাপ। তাঁর দুর্দমনীয় গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না কোনও দলই। প্যারিসের শহরতলির এক মধ্যবিত্ত ছেলে যে এমন উড়ান দেবে, কে জানত!

আরও পড়ুন : ভারাক্রান্ত ফরাসি হৃদয়, তবুও এমবাপেকে আঁকড়ে ধরেই আগামীর স্বপ্ন দেখছে প্যারিস

ফ্রান্স ভেবেছিল, এবারও তেমনটাই হবে। ক্লাব ফুটবলে ঝড় তোলার পাশাপাশি বিশ্বকাপেও চলছিল এমবাপে সাইক্লোন। শুধু গোল করা নয়, গোল করানোও তাঁর কাজ। বাঁ দিকের উইং ধরে তাঁর আক্রমণ, সেইসঙ্গে গ্রিয়াজমান, জিরৌ, ডেম্বেলের সঙ্গত – ফ্রান্স আক্রমণকে রোখা ছিল দায়। বিশ্বকাপ জেতা যেন সময়ের অপেক্ষা। আর জিতলে সেটাই হবে এমবাপের জন্মদিনের সবচেয়ে বড়ো উপহার। কিলিয়ান, ফ্রান্সের আশা ভরসার প্রতীক। 

ফাইনালে ৭৫ মিনিট হাজার চেষ্টা করেও গোলের দেখা পায়নি ফ্রান্স। এমবাপের মরিয়া চেষ্টা বারবার সাড়া ফেলছিল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ৭৮ মিনিট থেকে গোটা ছবিটা গেল বদলে। প্রথমে পেনাল্টি, তারপর সেই বাঁ দিক থেকে ডিফেন্সের মুহূর্তের ভুলে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরালো শটে গোল। এমবাপে গোটা ম্যাচের রঙটাই বদলে দিলেন। তারপর অতিরিক্ত সময় ফের পেনাল্টি। বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো মঞ্চে দাঁড়িয়ে হ্যাটট্রিক – এ এক বিরল কৃতিত্ব। এখনও অবধি দু’বারই এমন চমৎকার ঘটেছে বিশ্বকাপ ফাইনালে। জিওফ হার্স্টের পর এমবাপে সেই অতিমানবিক কারিগরদের দলে নাম লেখালেন। কিন্তু পেনাল্টি শ্যুট আউট সবকিছু বদলে দিল।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Kylian Mbappé (@k.mbappe)

আরও পড়ুন : এমবাপে হারলেন তবু বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যে বিরল কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিলেন

এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনায়, বুয়েনস আইরেসে চলছে তুমুল উদযাপন। বিশ্বকাপ নিয়ে ফিরে এসেছেন মেসিরা। আনন্দে, উদ্দীপনায় ভেসে পড়েছে গোটা ফ্রান্স শিবির। কয়েনের ঠিক উল্টোপিঠে দাঁড়িয়ে আছেন কিলিয়ান এমবাপে। এই ২০ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন। প্যারিসের শহরতলি বন্ডির মধ্যবিত্ত এক ঘরে তাঁর জন্ম। অভিবাসী পরিবারের লড়াইটা বেশ দীর্ঘই ছিল। তবে খেলাধুলার চর্চা পরিবারের মধ্যেই ছিল। থিয়েরি অঁরির রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে কম বয়সে ফরাসি শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন এমবাপে। বয়স তখন মাত্র ১৬। ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দল, ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জয়। এখনও অবধি বিশ্বকাপে তাঁর গোল সংখ্যা ১২। হাতে আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ আসবে। মিরোস্লাভ ক্লোসে, রোনাল্ডো নাজারিওর রেকর্ড যে ভাঙবেই – সেই কথা বলছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।

২০২২ বিশ্বকাপ জিতলে অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার হতেন কিলিয়ান এমবাপে। কিন্তু ব্যর্থ হলেন তিনি। গোল্ডেন বুটের পুরস্কার যখন নিতে যাচ্ছেন, তখন মনে পড়ে যাচ্ছে ২০১৪-র মেসির কথা। সেই নিষ্প্রাণ চলা, শূন্য দৃষ্টি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন সেই ছবি। সঙ্গে মাত্র একটা লাইন, “আমরা ফিরব”। তিনি যে ফিরবেন, তা নিয়ে নিশ্চিত ফুটবল বোদ্ধারা। ট্র্যাজিক হিরোর মতো দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছবি আজও ঘুরছে সব জায়গায়। ঠিক যেমনভাবে মাথা নিচু করে, চোখের জল ফেলতে ফেলতে মাঠ ছেড়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপের ‘গুরু’। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)।

আরও পড়ুন : পিঠ চাপড়ে জাত চেনালেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো, সেরার কৃতিত্ব এমবাপেরই!

এমবাপে একসময় বলেছিলেন, তাঁর প্রথম আইডল জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের প্রথমবারের বিশ্বজয়ের বছরেই জন্ম কিলিয়ানের। বলেছিলেন, নেইমারকেও একটু একটু মেনে চলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবার আলোচনা ঘুরে গিয়েছে পর্তুগিজ কিংবদন্তির দিকে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর আদ্যোপান্ত ভক্ত এমবাপে বারবারই সেই কথা বলেছেন। অথচ, ক্লাব ফুটবলে তাঁর সতীর্থ হলেন মেসি। হোক, তবুও এমবাপের কাছে ‘গোট’ হলেন রোনাল্ডো। পর্তুগাল আর ফ্রান্স মুখোমুখি হলে দু’জনের সখ্যতা দেখা যায়। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় রোনাল্ডোর পোস্টে কমেন্ট করেন এমবাপে। তাঁর কাছে রোনাল্ডোই যে রাজা, বুঝিয়ে দেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদে রোনাল্ডোর উত্থানের সময়ই বেড়ে ওঠা কিলিয়ানের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দেখতেন ম্যাচ। দেখতেন রোনাল্ডোর খেলা। আজও মাঠের মধ্যে রোনাল্ডোর স্কিল নকল করেন তিনি।

দিনের শেষে গুরু-শিষ্যের পরিণতি সেই ট্র্যাজিক হিরোর। অবশ্য ক্রিশ্চিয়ানো এক বাক্যে বলেছেন, এমবাপেই ভবিষ্যতের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু ২০২২-এর জন্মদিনটা একরাশ মন খারাপ নিয়ে কাটাবেন তিনি। অহংকারী, ছটফটে এক ছেলে। ফ্যাশনিস্তা, পিছিয়ে পড়া মানুষদের সাহায্য করা এক দস্যি তারকার। বিশ্ব ফুটবলের ভবিষ্যৎ তিনি। জন্মদিন মুবারক কিলিয়ান এমবাপে।

More Articles