ওস্তাদের মার শেষ রাতে, বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার তুরুপের তাস দি মারিয়া

Fifa World Cup 2022 : এবারের ম্যাচে বেশ কিছুটা নির্ভর থাকতে চলেছেন ডি মারিয়ার ওপর। আর সেই ভরসার মানটা রাখতে পেরেছেন ডি মারিয়া।

টানা ৩৬ মাচ অপরাজিত থাকার পর কাতার বিশ্বকাপে পা রেখেছে লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা। এবছরের বিশ্বকাপে প্রথম থেকেই আলবিসেলেস্তেরা ছাপ ছেড়েছে নিজের। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে হোঁচট খেলেও এই দলটি আজ ফাইনাল খেলতে নেমেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সঙ্গে। লিওনেল মেসির আর শক্তির জানান দিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা গড়ে তুলতে আর মাত্র একটি জয় দূরে আছেন দিয়েগো মারাদোনার উত্তরসূরিরা।

আজকের ম্যাচে প্রথম থেকেই চলছিল হাড্ডাহাড্ডি মোকাবিলা। ২৩ মিনিটের মাথায় পেনাল্টিতে মেসি এক গোলে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিলেও এই ম্যাচের প্রথমার্ধে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন অ্যাঞ্জেল ডিমারিয়া। ফাইনাল এর আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যান নিয়ে চলছিল বিশ্লেষণ। সেই বিশ্লেষনে বারবার উঠে আসছিল, আর্জেন্টিনা সমর্থকরা এবারের ম্যাচে বেশ কিছুটা নির্ভর থাকতে চলেছেন ডি মারিয়ার ওপর। আর সেই ভরসার মানটা রাখতে পেরেছেন ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনার হয়ে এখনো পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক তিনটি ফাইনাল খেলেছিলেন এই উইঙ্গার। আর প্রত্যেকটিতে জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনারা।

শুধু যে জয় পেয়েছে তাই নয়, সেই তিনটি ম্যাচের প্রত্যেকটিতে গোল করেছেন তিনি। ২০০৮ সালের অলিম্পিকে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ডিমারিয়ার একমাত্র গোলে স্বর্ণপদক জয় করেছিল আর্জেন্টিনা। তারপর সদ্য সমাপ্ত কোপা আমেরিকা ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে এই উইঙ্গারের গোলে শিরোপা জিতে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন ফিনালিসিমাতেও গোল পেয়েছিলেন তিনি।

২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে একাদশে খেলেননি ডি মারিয়া। সেই ফাইনালে শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে জার্মানিকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন গোটযে। তাই বলা চলে, যে ফাইনালে আর্জেন্টিনার হয়ে ডি মারিয়া খেলেন সেই ফাইনাল কখনো হারে না আর্জেন্টিনা।

হয়তো আজকের ফাইনালেও ঘটবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ম্যাচের শুরু থেকেই ডি মারিয়া বা প্রান্তে খেলেছেন। সেদিক দিয়েই বেশি আক্রমণ করেছে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সের ডিফেন্ডার জুল্স কোন্ডে ডি মারিয়াকে ভালোভাবে মার্ক করতে পারেননি। তাই এই ধারাবাহিকতায় ২১ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বাড়ি গিয়ে বল নিয়ে ফ্রান্সের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন ডিমারিয়া। ফরাসি উইঙ্গার ওসমান ডেম্বেলে পিছন থেকে ডিমারিয়াকে ট্যাকেল করতে গিয়ে তাকে ফেলে দেন। বলের সঙ্গে ডেম্বেলের কোন সংযোগ হয়নি। তাই রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন। ফাউলটি এতটাই স্পষ্ট ছিল যে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তির দরকার পড়েনি। স্পট কিক থেকে ফ্রান্সের গোলকিপার হুগো লোরিসকে ফাঁকি দিয়ে ডানদিক দিয়ে নেওয়ার শর্ট এ গোল করে দেন মেসি।

তবে মেসির থেকেও প্রথমার্ধের ৩৬ মিনিটে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটি ছিল চোখ ধাঁধানো। ফরাসি রক্ষণ ফাঁকা পেয়ে ডান প্রান্তে হুলিয়ান আলভারেজকে পাস দেন মেসি। আলভারেজ পাস বাড়িয়ে দেন আরো ভালো অবস্থানে থাকা ডি মারিয়াকে। ফ্রান্সের গোলকিপার লরিস ডি মারিয়াকে আটকাতে এগিয়ে এলেও লাভ তেমন কিছু হয়নি। ঠান্ডা মাথার ফিনিশিং এ বল জালে চালান করেন ডি মারিয়া।

গোল করার কিছুক্ষণ পর ডি মারিয়কে দেখা যায় কাঁদতে। তিনি খেলছিলেন আর চোখ মুছছিলেন। হয়তো ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই স্মৃতি তার মনে পড়ছিল বারবার। উরুর চোটে বিপর্যস্ত থাকার কারণে আর্জেন্টিনার সেই ফাইনাল খেলতে পারেননি তিনি। তবে সে বার হারলেও এবার কিন্তু বিশ্বকাপের সম্পূর্ণ সুবাস পাচ্ছে আর্জেন্টিনা। আর সারা বিশ্বের আর্জেন্টিনার ভক্তরা বলছেন, 'You have studied Messi, But De Maria came out of syllabus'।

More Articles