সেনাপতি মেসি, সঙ্গে বিশ্বস্ত মার্তিনেজ, যে মন্ত্রে ফাইনালে স্বপ্নপূরণ আর্জেন্টিনার
Fifa World Cup 2022 : এই দল জিতে নিল বিশ্বফুটবলের সেরা সেরা খেতাব। যে অসাধ্য সাধনের ফলে ওঁরাই যেন কাঁদিয়ে দিলেন বিশ্বের আপামর নীলসাদা ভক্তদের।
তিনিই সব। তিনিই ম্যাজিক। তিনিই যেন ঈশ্বর! জীবনের শেষ বিশ্বকাপের মঞ্চেও সেই তিনিই হয়ে রইলেন সেরার সেরা। আর একজন? আর্জেন্টিনার এই কঠিন বিশ্বজয়ের পরে মেসির (Lionel Messi) সঙ্গে ফের আলোর মুখোমুখি হলেন সোনালী গ্লোভসের প্রাপক আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (Emiliano Martinez)।
আর মেসি-মার্টিনেজ - এই দুই ম্যাজিকের নামে ভর করেই জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচেও জিতে দেখাল আর্জেন্টিনা (Argentina Win) । ৩-৩ ফলের ড্র ম্যাচের টাইব্রেকারে ৪-২ ফলাফলে এগিয়ে গেল মেসির দল। আর এর সঙ্গেই এই দল জিতে নিল বিশ্বফুটবলের সেরা সেরা খেতাব। যে অসাধ্য সাধনের ফলে ওঁরাই যেন কাঁদিয়ে দিলেন বিশ্বের আপামর নীলসাদা ভক্তদের।
রবিবার বালির দেশ কাতারের (Qatar World Cup Football) লুসেইল স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম দিকে এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে ছাপিয়ে, এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলদাতা কিলিয়ান এমবাপের (Kylian Mbappe) যাদুতে ভর করে এগিয়ে যায় ফ্রান্স (France) । রেকর্ড গড়ে এক ম্যাচেই গোলের হ্যাট্রিক করেন ফ্রান্সের এই কালোহীরে। এমবাপে-যাদুতে ঘুরে দাঁড়ায় ফার্নান্দেজদের দল।
কিন্তু আবার! শেষমুহূর্তে সেই এগিয়ে যাওয়া ফ্রান্সকেই পিছিয়ে দেন মেসি। ৯০ মিনিটের ম্যাচ ১২০ মিনিটে গড়িয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই আবার জালে পাঠান বল। ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তবুও সেই ভাগ্য!
হারতে হারতে জয়ের স্বাদ পাওয়া আর্জেন্টিনার কাছে বিপদ হয়ে আবার হাজির হন কিলিয়ান। ফের গোলের বলে সমতা ফেরান হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচের। আবারও আর্জেন্টিনার জয়ের আকাশে নেমে আসে আশঙ্কার কালো মেঘ। স্বপ্নভঙ্গের তাড়না নিয়েই ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। একপ্রকার জেতা ম্যাচের টাইব্রেকার পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে হিরো বনে যান সেই এমবাপে। একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি একাই।
কিন্তু! মেসি-ম্যাজিকেই আবারও লক্ষ্যভেদ করে আর্জেন্টিনা। প্রথমেই ফ্রান্সের গোলকিপার হুগো লরিসকে নাস্তানাবুদ করেন মেসি। তাঁর গোলের বলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এমবাপে দিয়েও শেষরক্ষা হয়নি ফরাসিদের। নীলসাদার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজের কাছে হার মানেন একের পর ফরাসি খেলোয়াড়। অবশেষে শেষহাসি হাসেন মেসিরাই। ডি মারিয়াদের তীব্র লড়াইয়ে অবশেষে স্বপ্নপূরণ করে মারাদোনার দেশ। জিতে যায় আর্জেন্টিনা। এর সঙ্গেই ৩৬ বছর পর ফের, মারাদোনা ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলল লাতিন আমেরিকার ছোট্ট এই দেশ। যে জয়ের সঙ্গেই জিতে গেল কয়েক লাখ মানুষ আর গোটা পৃথিবীর কোটি কোটি আর্জেন্টিনা-ফুটবলের ভক্ত-ও।
অনেকেই বলছেন, বালির দেশের বিশ্বকাপের এই ফাইনাল ছিল আসলে তিন ফুটবল রাজপুত্রের। মেসিদের বিপক্ষের নিঃসঙ্গ সম্রাট এমবাপে আর মেসি-পক্ষের মার্টিনেজ। মেসির সঙ্গেও ওঁরাও দেখিয়ে দিয়ে গেলেন লড়াই আসলে কাকে বলে!
আদতে যা বিশ্বসেরার লড়াইয়ের মঞ্চে স্বপ্নভঙ্গ ঘটাল ফরাসিদের। লাতিন আমেরিকার দেশের কাছে চূড়ান্ত লড়াইয়ে হারলেন এমবাপে, জীরুরা। কিন্তু যা রাখলেন, তা মেসিদের মতোই অনবদ্যই, বলছেন অনেকেই।
প্রসঙ্গত, রবিবারের ম্যাচের প্রথম দিকে বিপুল লড়াইয় আর এগিয়ে থাকার পরেও ৮০ মিনিটের পর থেকে ক্রমশ বেকায়দায় পড়ছিল আর্জেন্টিনা। আর এর সঙ্গেই ফের যেন ঝিমিয়ে আসছিল নীল সাদার লড়াই। ম্যাচ তখন গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। খেলা চলছে। কিন্তু চাপা টেনশন আর উত্তেজনায় শোরগোল পড়েছে স্টেডিয়ামজুড়ে। মেসি কই! তাহলে কি এবারও বিদায়! আবারও তীরে এসে তরী ডুববে মেসিদের?
নাহ্! সে আর হতে দিলেন না তিনি! মেসি-ম্যাজিকের বিবর্তনেই রচিত হয়ে গেল এক ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখে দিলেন মার্টিনেজও। শেষমুহূর্তের রুখে দাঁড়ানোয় তিনি যেন দেখিয়ে দিলেন যোগ্যসঙ্গত কাকে বলে!
আর সব মিলিয়ে রবিবারের আর্জেন্টিনা শুধু নয়, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের সঙ্গে হেরে যাওয়া আর্জেন্টিনা রচিত করল এক মৌলিক গাঁথা। যার অক্ষরে নিজেদের খোদাই করে রেখে গেলেন আর্জেন্টিনার এই সেরারা। মারাদোনার আশীর্বাদ আর জনশ্রুতি ছাড়িয়ে এই দলটিই দেখিয়ে দিল নয়া পথ।
আর? ফরাসিদের নাস্তানাবুদের নেপথ্যে, গোটা টুর্নামেন্ট আর বিশ্বের ফুটবলের কাছে থেকে অনন্য হিসেবেই থেকে গেলেন তিনি। বিশ্বজয়ের আনন্দের চোখের জলেই গ্রথিত করলেন ফুটবলের মেসি-মাইলস্টোন। তৈরি করে দিলেন নতুন পথ। যা মুহুর্তের কাছে বন্দি রাখল এক যুগের, এক ভালোথাকার আবেগকে! যার নেপথ্যে নায়ক হয়েই বিদায় নিলেন আর্জেন্টিনার ওই বেঁটেখাটো লোকটা। দিকে দিকে বলে গেলেন তিনিই ম্যাজিক, তিনিই মেসি, তিনিই সেরা!