সংকীর্ণ কাতারে মর্যাদা পাবে ভালোবাসা? এমবাপে-জিরোডের ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে দিচ্ছে যে প্রশ্ন

Football World Cup 2022: বিশ্বফুটবলে একাধিক সমপ্রেমের দৃষ্টান্তের মধ্যে এমবাপে এবং জিরোড সমকামী কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। তা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে একাধিক।

“প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে- বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও”

প্রশ্ন আর প্রতিবন্ধকতার আগুন নিভিয়ে বারবার রচিত হয় প্রেমগাথা। প্রত্যেক মুহূর্তে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে বিবর্তিত হয় ভালোবাসার ইতিহাস, ভালো থাকার প্রতিচ্ছবি। বিচ্ছেদ আর বেদনার সঙ্গেই উঠে আসে এক একটি জড়িয়ে রাখার তাগিদ। যেন বারবার বলে যায়, ভালোবাসি-ভালোবাসি! বালির দেশের বিশ্বকাপ নিয়ে একাধিক বিতর্কে ছাড় পায়নি এই প্রেমও। ভালোবাসাকেও বারবার মানতে হয়েছে বিধিনিষেধ। প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়ে ফুটবল-উৎসবে ব্রাত্য থেকেছে প্রেম। আর ভালো থাকার এই রসদের অন্দরে আরও বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছছে সমপ্রেম। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও কাতার সরকারের শরিয়ত আইন এবং প্রেম-বিদায় নিয়মের বশে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে প্রেমের এই রূপ! সমালোচনা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে কাতারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কেউ কেউ। মদ থেকে উচ্ছ্বাস, সবকিছুর পায়ে বেড়ি পরানোয় প্রশ্নের মুখে পড়েছে কাতার সরকার।

কিন্তু সমস্ত শিকল সমস্ত কিছু বাঁধতে পারে না! এক্ষেত্রেও পারেনি। বাধাপ্রাপ্ত প্রেম বাঁধন খুলেছে ফের। সেই ছবিই যেন টাটকা করেছে ফ্রান্স এবং পোল্যান্ডের ম্যাচের একটি ছবি। ৩-১ গোলে পোল্যান্ড-ধ্বংসের অন্যতম দুই কারিগরের একটি ছবি সেই প্রেমের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আবার। কিলিয়ান এমবাপে (Kylian Mbappe) এবং অলিভিয়ার জিরোড (Oliver Giroud)। বিশ্বফুটবলে একাধিক সমপ্রেমের দৃষ্টান্তের মধ্যে এমবাপে এবং জিরোড সমকামী কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। তা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে একাধিক। কিন্তু ওই ছবির আত্মপ্রকাশ যে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুর প্রকাশ হতে পারে, একথাও বলছেন না কেউ। সমকাম অধিকার না বিতর্ক, তা নিয়ে কাঁটাছেঁড়া চললেও ফ্রান্সের জয়ের দুই নায়কের ঘনিষ্ঠ ওই ছবি তুলে দিয়েছে একাধিক জল্পনা আর প্রতিবাদও। রক্ষণশীল কাতারে দাঁড়িয়ে এই ছবি এক সবক, এমনও মনে করছেন অনেকেই।

কিন্তু কে এই এমবাপে এবং জিরোড। সত্যিই কি তাঁরা সমপ্রেমে মশগুল? এমবাপে সমকামী নাকি সমকামী নন, এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত তাঁর দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে তাঁর অগণিত ভক্ত। বহু খেলোয়াড় সমপ্রেম নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেও এমবাপে এখনও কিছু বলেননি। তবে গুঞ্জন শোনা যায়, একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেও আদতে তিনি সমকামী! যাঁর সঙ্গে ২০১৭ থেকে রূপান্তরকামী মডেল ইনেস রাউয়ের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলে গুঞ্জন। এর আগে ফ্রান্সের এক অভিনেত্রী এমা স্মেতের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়েছেন এমবাপে, রটে এমন গুজবও। তবে কেউ কেউ বলেন, ইনেসের রূপান্তরে নাকি ভূমিকা রয়েছে ২৩ বছরের এই ফুটবলারের।

আরও পড়ুন- অধ্যাপনা ছেড়ে ফুটবল! বিশ্বকাপ ফুটবলে অনুপ্রেরণার অনন্য নজির এই রেফারি

১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া এমবাপে ছোট থেকেই তুখোড় খেলোয়াড়। কম বয়সেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি ছড়ায় তাঁর। বিশ্বকাপের সেই ম্যাচেও দুই গোল করেন তিনি। করেন একের পর এক রেকর্ড। পিএসজি-র খেলোয়াড়ের সঙ্গে জড়িয়ে যায় তাঁরই সতীর্থ আশরাফ হাকিমির নামও। বলা হয়, হাকিমির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এমবাপের। এমনকী দু’জনের মধ্যে যৌন সম্পর্কের খবরও প্রকাশ্যে আনে সে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম। যদিও এরপরেও বহু খেলোয়াড়ের মতো এমবাপে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। মুখ খোলেন হাকিমি। সমস্ত গুঞ্জন উড়িয়ে তাঁর দাবি ছিল, শুধুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্কের। এই খবরের সঙ্গেই জড়িয়ে যায় এক পুরুষ সাংবাদিকের নামও। মাত্র ২৩ বছরের এই যুবক ওই ৩৪ বছরের ওই সাংবাদিকের সঙ্গেও প্রেম করছেন বলেও গুঞ্জন শোনা যায় বহুবার। এক্ষেত্রেও মুখ খোলেননি এমবাপে।

এমনকী পর্তুগালের খেলোয়াড়, বিশ্বখ্যাত ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়ায়। একটি ছবিও ভাইরাল হয় ওই দুই ফুটবলারের। ২০২২-এ দাঁড়িয়েও তিনি সমকামী কী না এই প্রশ্নে মুখ খোলেননি এমবাপে। প্রতি মুহূর্তে জিইয়ে রেখেছেন রহস্য।

জিরোড কি সমকামী?

এমবাপে এবং জিরোডের ওই ভাইরাল ছবি ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে তিনিও সমকামী কিনা? অনেকেই বলছেন, ফ্রান্সের এমবাপে এবং তিনি প্রেম করছেন! বহুদিন ধরেই সম্পর্কে রয়েছেন এই দুই তারকা ফুটবলার। মহিলা বন্ধু থাকলেও আসলে এঁরা প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ! পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাতারে এক গোলের মালিক ইতিমধ্যেই একাধিক রেকর্ড গড়েছেন। বিশ্বকাপের অন্যান্য ম্যাচ ধরে, এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক গোল এসেছে তাঁর পায়েই। তবুও জড়িয়েছেন বিতর্কে।

যদিও ৩৬ বছর বয়সী এই ফুটবলারের স্ত্রী রয়েছেন। জেনিফার জিরোডকে তিনি বিয়ে করেন ২০১১ সালে। জিরোড বরাবর বিতর্কিত তাঁর সম্পর্কের টানাপড়েনে। বর্তমানে ফ্রান্সের জাতীয় দলের এই খেলোয়াড় এসি মিলানের হয়ে চুক্তিবদ্ধ। এর আগে আর্সেলানের সঙ্গে খেলেন। তাঁর সঙ্গে নাম জড়িয়েছে একাধিক মহিলার। সুদর্শন এই তারকা ফুটবলার প্রিমিয়ার লিগের ‘হটেস্ট প্লেয়ার’ নির্বাচিতও হন। বরাবর দাবি করেন, ডেভিড বেকহ্যাম তাঁর ‘স্টাইল আইকন’।

কিন্তু সমকামী সম্পর্কে তিনি জড়িয়েছেন এমন গুঞ্জন শোনা যায়নি তাঁর সম্পর্কে। যদিও বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং খেলার বাইরের নানা ফটোশুট নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। অতিরিক্ত খোলামেলা ছবি বিতর্কে জড়িয়েছে তাঁর নাম। আবার খুব কম পরিমাণে হলেও সতীর্থর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, এমন রটনাও রয়েছে তাঁর নামে। যদিও এর আগেও প্রায় ১৫ বার এমন ধরনের আলিঙ্গনের ছবি ভাইরাল হয়েছিল। যার কারণ ছিলেন জিরোড।

ছবি-রহস্য

ভাইরাল ছবির মধ্যে প্রেম আছে কি নেই, থাকলেও সেটাই যে স্বাভাবিক, একথা মানছেন না অনেকেই! কারও কারও আবার দাবি, ওই ছবিটি আসলে ম্যাচে গোল দেওয়ার পরের উদযাপনের একটি অংশ। যেখানে একজন ফুটবলার আর একজনকে আলিঙ্গন থেকে চুম্বন, ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন শুধু দলের ভালো খবরে। সেটাই করেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন- ব্যাড বয় না কি রাজপুত্র? মারাদোনাকে ছাড়া আজীবন ফিকে বিশ্বকাপের ময়দান!

চুমু-বিপদে কাতার

কয়েকদিন আগেই নেদারল্যান্ডস দলের ডেঞ্জেলকে সংবাদিক সম্মেলনে আনন্দে চুমু খান লুইস ভ্যান গাল। প্রকাশ্যে এই আদরের চুম্বন বাড়ায় বিতর্ক। যদিও ডেঞ্জেল এই ঘটনায় বিতর্ক শুরু হতেই বলেন, “ওই চুম্বন আরও দীর্ঘ হলে ভালো লাগত!” এদিকে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসের মতো দলের ফুটবলাররা সমপ্রেমের সমর্থনে হাতে ব্যান্ড পরে মাঠে নামার চেষ্টাও করেন। সেখানেও বাধা পান তাঁরা। আবার জার্মানি দল খেলতে নেমেই মুখে আঙুল দিয়ে জানায় প্রতিবাদ। বেকায়দায় পড়ে কাতার প্রশাসন।

বেলজিয়ামের গোলকিপার থিবাউসের খেলার পরে প্রকাশ্যে প্রেমিকাকে চুম্বন কাঁপিয়ে দেয় কাতার। অন্যদিকে চুম্বনে ইতিহাস গড়ে ইংল্যান্ড। কাতারের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রেমের স্পর্ধা দেখান ফুটবলাররা। সেনেগালের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয়ের পরে একাধিক ফুটবলাররা গ্যালারিতেই চুম্বনে ভরান প্রেমিকা, স্ত্রীদের। যা কাতারে নিষিদ্ধ! হ্যারি কেন থেকে শুরু করে লিউক শ, ঘনিষ্ঠ চুম্বনে মত্ত হন। ম্যাচের পরেই প্রকাশ্যে প্রেমিকাকে চুম্বনে ভরিয়ে দেন ক্যালভিন ফিলিপস, ক্যানর জ্ঞালাঘেস। জর্ডান থেকে শুরু করে আরণ! চুম্বনের দৃশ্যের প্রকাশ্যে বাকি ছিলেন কেউই।

চুমুর ব্যারিকেড কাঁপিয়ে দিয়েছে কাতার। মদ, মোচ্ছব আর বিলাসিতার বিধিনিষেধ আরোপের মাঝেও কখনও ঘনিষ্ঠ ছবি, কখনও প্রকাশ্যে চুম্বন- এই বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিচ্ছে এক বাঁধনহীনতার পথ। যে পথে শুধুই বিবর্তিত হয়েছে সংকীর্ণতাকে উপড়ে ফেলার তাগিদ। উদারতাকে আপন করার কৌশল। আর দেখিয়ে দেওয়ার যুদ্ধ, যার অস্ত্র শুধু প্রেম প্রেম আর প্রেম!

More Articles