একটা-দু'টো নয়, ২৯টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি হাজির কালনায়! সপ্তাহান্তে ঘুরে আসুন এখান থেকে

Migrant Birds Kalna : কালনার ছাড়িগঙ্গায় এই প্রথমবার ভিড় জমাল বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিরা। যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকার মানুষেরা।

মকর সংক্রান্তি পেরিয়ে গিয়েছে। পৌষ মাস শেষ হয়ে মাঘের মরসুম শুরু হয়েছে। শীতকালও নিজের ইনিংস বজায় রেখেছে। আর এমন আবহাওয়াতেই বাংলার বুকে ভিড় করে ‘বিদেশি অতিথিরা’। দূর দূরান্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জলাশয়ে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখির দল। তাদের দেখার জন্য, একটু ছবি তোলার জন্য সেই জলাশয়ের পাড়েও ভিড় জমায় লোকজন। এবারও তার অন্যথা হয়নি। তবে এবছর দেখা গেল বিশেষ একটি দৃশ্য। পরিযায়ী পাখিদের বঙ্গীয় আস্তানায় যোগ হল আরও একটি নতুন নাম – কালনা। পূর্ব বর্ধমানের কালনার ছাড়িগঙ্গায় এই প্রথমবার ভিড় জমাল বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিরা। যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকার মানুষেরা।

সাইবেরিয়া থেকে নরওয়ে, শীতকাল হলেই পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে বিভিন্ন জায়গায়। সাধারণত শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশই তাদের পছন্দ। সেইসঙ্গে জলাশয় এবং সংলগ্ন এলাকা যদি দূষণমুক্ত হয়, তাহলে তো পোয়া বারো! এরকম জায়গাই পরিযায়ী পাখিরা পছন্দ করে। মাইলের পর মাইল উড়ে এসে সেখানে আখড়া তৈরি করে। যদি জায়গা পছন্দ হয়, তাহলে বারবার নির্দিষ্ট সময় এলে সেখানে উড়ে আসে এরা। আর তাদের সেই যাওয়া আসা ছবি তুলে ধরতে ভিড় জমান সাধারণ মানুষরাও।

সেরকমই একটি ঠিকানা হয়েছে কালনার ছাড়িগঙ্গা। সিঙ্গাপুর থেকে আসা পরিযায়ী টিয়াপাখি তো আছেই; সেইসঙ্গে রয়েছে গ্রাউন্ড সোয়ান, রেড ব্রেস্টেড প্যারাকিট, ব্রাউন স্রাইক, নর্দার্ন সভলার সহ মোট ২৯ টি পাখির প্রজাতি! পাশাপাশি স্থানীয় পাখিদেরও ভিড় লেগেছে সেখানে। কচুরিপানার ভেতর বসে রয়েছে পাখির দল। আপাতত ছাড়িগঙ্গায় প্রথমবার পরিযায়ী পাখিদের আগমনে খুশি বন দফতর, মহকুমা প্রশাসন। ঠিক কতগুলি পাখি এসেছে, সেটা এখনও জানা যায়নি। শীঘ্রই সেই গণনার কাজ শুরু হবে। তারপরই সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।

হঠাৎ ছাড়িগঙ্গায় ভিড় কেন? মহকুমা প্রশাসন মনে করছে, এর আগে স্থানীয় চুপির চর ছিল পরিযায়ীদের আস্তানা। বছর বছর সেখানেই ভিড় করত দূর দূরান্ত থেকে আসা পাখিরা। কিন্তু এখন সেই জায়গায় ভিড় বহুগুণ বেড়েছে। ছবি তোলার জন্য ভিড় তো আছেই; সেইসঙ্গে পিকনিক স্পটের জঞ্জাল, ড্রোনের বাড়বাড়ন্ত, ব্যাপক কোলাহলই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। তাই অপেক্ষাকৃত শান্ত ছাড়িগঙ্গাকে বেছে নিয়েছে পাখিরা।

কিন্তু পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমালে ছাড়িগঙ্গাও তো ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হয়ে যাবে? স্থানীয় বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই পাখি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন। ছবি তোলার হিড়িকও বাড়ছে। সপ্তাহান্তের ছোটখাটো বেড়ানোর জায়গা হিসেবে একে ভাবা যেতেই পারে। তবে পাখিদের যাতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা না হয়, তা নিয়ে কড়া মনোভাব নিয়েছে মহকুমা প্রশাসন ও বন দফতর। জলাশয়ের ধারেকাছে যাতে কোনও মাইক বা অন্য সাউন্ড সিস্টেম না বাজে, তা দেখা হচ্ছে। বার্ড ওয়াচার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ভিড় করতে পারেন; কিন্তু এলাকার শান্তি যেন বজায় থাকে। ভিড় আর হই হট্টগোলের কারণে যেন পাখিদের অসুবিধা না হয়। এনিয়ে প্রচারও চলছে। সেইসঙ্গে চোরাশিকারিরা যাতে হানা না দেয়, সেজন্য নিরাপত্তার দিকটিও নজরে রাখা হচ্ছে।

More Articles