শোওয়ার ঘর সমেত পৃথিবী গিলে খেল আস্ত মানুষ! দেহের টুকরোটুকুও মেলেনি এই ব্যক্তির...

Sinkhole Mystery: ফ্লোরিডায় ২০১৩ সালের ১ মার্চ পৃথিবীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিলেন ওই যুবক, সিঙ্কহোল গ্রাস করেছিল তাঁকে।

রাতের খাবার খেয়ে ঘুম তখন বেশ জম্পেশ এসেছে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর বিছানায় এলিয়ে পড়েছেন বছর সাঁইত্রিশের জেফ। মধ্যরাতে হালকা খসখস শব্দ। চারপাশে অস্বাভাবিক কিছুই নেই, তবু অদ্ভুত শব্দ, সঙ্গে অস্বস্তি। মিনিট খানেক যেতেই হুড়মুড়িয়ে তলিয়ে গেলেন জেফ। নিজের শোওয়ার ঘরে, নিজেরই বিছানা, বালিশ সমেত পৃথিবীর গর্ভে তলিয়ে গেলেন জেফ বুশ। কোনও সিনেমা নয়, কল্পকাহিনি নয়- ঘোর বাস্তব। ঠিক ১০ বছর আগে এমন ঘটনাই হতভম্ভ করে দিয়েছিল বিশ্বকে। ফ্লোরিডায় ২০১৩ সালের ১ মার্চ পৃথিবীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিলেন ওই যুবক, সিঙ্কহোল গ্রাস করেছিল তাঁকে।

ফ্লোরিডার সেফনারে বাড়ির নিচে, আরও ভালোভাবে বলতে গেলে শোওয়ার ঘরে নিচে একটি সিঙ্কহোল হঠাৎ খুলে যায়। গর্তটি প্রায় ৬ মিটার বা ২০ ফুট গভীর! যখন প্রকৃতির এই গর্তে তলিয়ে যাচ্ছেন জেফ, পাশের ঘর থেকে তাঁর আর্তনাদ শুনতে পান তাঁর ভাই জেরেমি এবং জেরেমির সঙ্গী হানাহ।

হানাহ সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, জেফের চিৎকার শুনতে পান তাঁরা। চিৎকার শুনে দৌড়ে জেফের ঘরে দিকে যেতে গিয়ে হাঁ হয়ে যান তাঁরা। আলো জ্বালিয়ে দরজা খুলতেই দেখেম এক বিশাল বড় গর্ত। জেফ কোত্থাও নেই। জেরেমি ভাইকে উদ্ধারের চেষ্টা করার জন্য গর্তে ঝাঁপও দিয়েছিলেন কিন্তু হিলসবরো কাউন্টির ডেপুটি শেরিফ তাঁকে নিরাপদে টেনে নিয়ে যান কারণ চারপাশের মাটি তখনও ক্রমাগত গুহার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন- রেস্তোরাঁর টেবিলের নিচে ৩২ ফুট লম্বা ডাইনোসরের পায়ের ছাপ! যে আবিষ্কারে তোলপাড় বিশ্বজুড়ে…

দ্য গার্ডিয়ানকে জেরেমি জানিয়েছিলেন, মেঝেটা তখনও তলিয়ে যাচ্ছিল। হুড়মুড় করে মাটি ধ্বসে যাচ্ছিল পৃথিবীর গর্ভে কিন্তু পাত্তা দেননি তিনি। ভাইকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন আপ্রাণ কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। গর্তে তলিয়ে যেতে যেতে নাকি জেরেমির নাম ধরে চিৎকার করে সাহায্য চাইছিলেন জেফ।

আরও পড়ুন- পৃথিবীর দ্রুততম ডুবন্ত শহর, প্রাণে বাঁচতে আস্ত রাজধানী অন্যত্র তুলে নিয়ে যাচ্ছে এই দেশ!

উদ্ধারকারীরা ওই সিঙ্কহোল থেকে জেফ বুশের লাশও শনাক্ত করতে পারেননি। জেফের সঙ্গেই তলিয়ে যায় তাঁর বিছানা, শোওয়ার ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র। পরের দিন স্থানীয় ইঞ্জিনিয়াররা ঠিক করেন বাড়ি এবং মাটি উদ্ধারের জন্য আরও প্রচেষ্টা করাই যায়, তবে তা খুব বিপজ্জনক। পরিবর্তে পুরো বাড়িটিই ভেঙে ফেলা হয় এবং গর্তটি নুড়ি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়। কয়েক বছর পরে, আবার দেখা যায় হাঁ মুখ খুলে গিয়েছে ওই সিঙ্কহোলটির। ভাগ্যিস ধারে কাছে কেউ বা কিছুই ছিল না, নাহলে জেফের মতোই পরিণতি হতো তাদেরও। পৃথিবী গিলে খেত আস্ত মানুষ! দ্বিতীয়বার এই ঘটনাটি ঘটার পরে স্থানীয় মানুষ বেড়া দিয়ে দেন ওই জায়গাটি।

ফ্লোরিডা চুনাপাথর সমৃদ্ধ স্থান। আর চুনাপাথরের ভূপ্রকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সিঙ্কহোল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জিওলজিস্টরা এই ধরনের ভূপ্রকৃতিকে 'কার্স্ট টেরেইন' বলে ডাকেন। সিঙ্কহোল এই অঞ্চলের সবচেয়ে সাধারণ বিষয়। এগুলি এমন অঞ্চল যেখানে ভূপৃষ্ঠের নীচের পাথরগুলি এমন ধরনের হয় যা প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভস্থ জলের দ্রবীভূত হতে পারে৷ অর্থাৎ পৃথিবীর নীচের অংশের শিলাগুলি ক্রমে ক্ষয়ে যেতে থাকে। নিচের শিলা দ্রবীভূত হওয়ার সঙ্গে ভূগর্ভস্থ গুহার সৃষ্টি হয়। যখন দুর্বল ভূপৃষ্ঠটি গুহায় ধসে পড়ে, তখন সিঙ্কহোল তৈরি করে। এর আকার নানা ধরনের হতে পারে। খুব ছোট সিঙ্কহোলও দেখা যায় আবার বিশাল আকারেরও। পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল সিঙ্কহোলটি হলো জিয়াওঝাই তিয়ানকেং। বিশ্বের বৃহত্তম এই সিঙ্কহোল প্রায় ৫৩৭ মিটার বা ১,৭৬২ ফুট চওড়া এবং ৬৬২ মিটার বা ১,৬৬৭ থেকে ২,১৭২ ফুট গভীর।

More Articles