রেস্তোরাঁর টেবিলের নিচে ৩২ ফুট লম্বা ডাইনোসরের পায়ের ছাপ! যে আবিষ্কারে তোলপাড় বিশ্বজুড়ে...

Dinosaur Footprint in Restaurant: গর্তগুলি ১৯৫০ এর দশকে প্রথম দেখা গিয়েছিল। তবে কেউ অত পাত্তা দেয়নি।

রেস্তোরাঁয় বসে দিব্যি খাচ্ছেন, প্রিয় মানুষের হাত ধরে বসে আছেন চোখে চোখ রেখে, বন্ধুদের সঙ্গে ফাজলামো করছেন। হঠাৎ জানতে পারলেন আপনার টেবিলের ঠিক নিচে রয়েছে এক ডাইনোসর! না সে তেড়েফুঁড়ে গুঁতোতে উঠবে না ঠিকই, কিন্তু এককালে তো ছিল! এতক্ষণ ধরে যাকে ফ্লোর মোজাইকের নকশা ভাবছেন আসলে তো তা এক ডাইনোর পদচিহ্ন! অবাস্তব ঠেকলেও ঠিক এমনটাই হয়েছে। গতবছরই চিনের একটি রেস্তোরাঁয় ডিনার সারতে গিয়ে এক ব্যক্তি দেখেন পাথরের মেঝেতে কিছু অস্বাভাবিক গর্ত। কেন এমন অদ্ভুত নকশা জিজ্ঞেস করেন। সেই একটি প্রশ্ন থেকেই ধীরে ধীরে জানা যায় আসলে উহা ডাইনোসরের পদচিহ্ন! চিনের ওই ব্যক্তি লক্ষ্য করেন, সিচুয়ান প্রদেশের গার্ডেন রেস্তোরাঁর বাইরের উঠোনে প্রায় এক ডজন সমান আকারের ছাপ রয়েছে। পরে জানা যায় প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর পুরানো ডাইনোসরের পায়ের ছাপ সেগুলি।

ক্রিটেসিয়াস রিসার্চে প্রকাশিত হয়েছে এই নয়া আবিষ্কারটি। সেই গবেষণাপত্র বলছে, গর্তগুলি ১৯৫০-এর দশকে প্রথম দেখা গিয়েছিল। তবে কেউ অত পাত্তা দেয়নি। বিশেষ কিছু নয় মনে করেই মেঝে ঘষে মেজে চকচকে মসৃণ করে তোলা হয়েছিল। সেই সময়ে এই জমির উপর একটি বাড়ি ছিল। এই বছর তিনেক আগে এক রেস্তোরাঁ খোলা হয় ওই জমিটিতে।

আরও পড়ুন- রবীন্দ্রনাথের নামে ডাইনোসর রয়েছে খাস কলকাতায়! দেখে আসতে পারেন স্বচক্ষে

"ডাইনোসরের পদচিহ্নগুলি এতদিন ধরে অলক্ষিতই ছিল, কিন্তু একবার সেগুলি কী জানা হয়ে গেলে, না দেখে থাকা কঠিন,” বলছেন চিনের ইউনিভার্সিটি অব জিওসায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক লিডা জিং। গবেষক জানাচ্ছেন, ওই অঞ্চলে ডাইনোসরের কোনও কঙ্কালের কোনও রেকর্ড নেই। তাই এই পদচিহ্নের জীবাশ্ম এই অঞ্চলে বসবাসকারী ডাইনোসরের প্রকার সম্পর্কে অভাবনীয় কিছু তথ্য প্রদান করেছে।

3D স্ক্যানার ব্যবহার করে গবেষকরা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, পায়ের ছাপগুলি বিশালাকার সরোপড বা উদ্ভিদ-ভোজী ডাইনোসরদের। "আমরা পায়ের ছাপের আকারকে সম্পূর্ণ জীবাশ্ম কঙ্কালের সঙ্গে তুলনা করেছি, ডাইনোসরদের আকার এত বড় হলেও হাঁটার জন্য বেশ ছোট পদক্ষেপ করত তারা, হাঁটার গতি ঘণ্টায় প্রায় দুই কিলোমিটার ছিল," জানাচ্ছেন, কুইন্সল্যান্ডের ডাইনোসর ল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ অ্যান্টনি রোমিলিও। এই তথ্য ব্যবহার করেই গবেষকরা অনুমান করছেন, রেস্তোরাঁর এই পায়ের ছাপের মালিকের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ মিটার বা ৩২ ফুট। প্যাটাগোটিটানের মতো বিশাল নয়, ওরা এরও প্রায় চারগুণ আকারের ছিল, তাও বেশ বড়ই ছিল রেস্তোরাঁর ছাপের ডাইনোরা।

আরও পড়ুন- চেহারায় ১০০ হাতির সমান! দৈত‍্যাকার ডাইনোসরের কঙ্কাল উদ্ধার তোলপাড় বিশ্বজুড়ে

নিম্ন ক্রিটেসিয়াস যুগের ব্রন্টোপোডাস ধরনের সরোপোডের পায়ের ছাপ মেলায় রেস্তোরাঁয় এখন খেতে আসা মানুষের থেকে দেখতে আসা মানুষের ভিড় স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, একদিকে ভালোই। ওই ব্যক্তি যদি খেতে এসে চারদিকটা খুঁটিয়ে না দেখতেন, এত বড় বিষয়টা অজানাই রয়ে যেত। আসলে সকলেই তাকায়, দেখে আর কয় জনা? আমাদের চারপাশের সম্পর্কে কৌতূহলী হওয়া, চারপাশের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ফল কত অমূল্য হতে পারে তার প্রমাণ ডাইনোসরের এই প্রাগৈতিহাসিক পদচিহ্ন উদ্ধার থেকেই বোঝা যায়।

More Articles