কথায় কথায় ভুলে যাচ্ছেন সবকিছু! ডিমনেশিয়া নয় তো! ঝুঁকি কমাতে বদল করবেন যেসব অভ্যাস
Dementia : সুস্থ জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে এই রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, জেনে নিন বিস্তারিত।
করোনা মহামারীর আকার নিয়েছিল ঠিকই তবে আরও একটি মহামারী যা আপাতভাবে কম আলোচিত তা হলো ডিমনেশিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমানে বেশিরভাগ দেশ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রস্ট হওয়ার ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় ব্যর্থ হচ্ছে। সম্প্রতি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইকিয়াট্রি বিভাগের একাংশ, মডিফাইং ডিমেনশিয়া ঝুঁকি গ্রুপ ডিমেনশিয়া এবং জ্ঞানীয় হ্রাসের উপর বারোটি বিশেষ ঝুঁকির প্রভাব খুঁজে পেয়েছে। ডাঃ সারাহবাউরমিস্টারের নেতৃত্বে এবং ডিমেনশিয়াস প্ল্যাটফর্ম ইউকে এবং অ্যালঝাইমারস রিসার্চ ইউকে দ্বারা সমর্থিত এই দলটি ল্যানসেট ২০২০ সালের কমিশনে এই বিষয়ে তথ্য সামনে আনে।
প্রসঙ্গত, এই রোগটির কথা ১৯০৬ সালে প্রথম উল্লেখ করেন আলোইস আলঝেইমার নামের একজন জার্মান চিকিৎসক। স্মৃতি হারিয়ে ফেলা একজন নারীর ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান যে তার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকোষগুলো অদ্ভুতভাবে শুকিয়ে গিয়েছে এবং তার আশেপাশে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেই থেকেই নতুন রোগের আবিষ্কার। যদিও সেই সময় খুবই বিরল সমস্যা ছিল এটি। তবে বর্তমানে গোটা বিশ্ব জুড়েই এটি ক্রমেই ভিতরে ভিতরে মহামারীর রূপ নিচ্ছে।
আরও পড়ুন - বেশি বয়সেই যৌনতা বেশি উপভোগ্য? বিস্ফোরক উত্তর গবেষণায়
গবেষকরা সাম্প্রতিক গবেষণায় ডিমেনশিয়ার অগ্রগতিতে সহায়তা করে এমন বেশ কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকির প্রভাব উল্লেখ করেছেন। যথা -
১. শিক্ষার অভাব
২.উচ্চ রক্তচাপ
৩. স্থূলতা
৪. অবাধ মদ্যপান
৫. মস্তিষ্কের ওপর কোনও আঘাত (TBI)
৬. শ্রবণ ক্ষমতার হ্রাস
৭. ধূমপান
৮. বিষণ্ণতা
৯. শারীরিক অক্ষমতা
১০. একা একা থাকা এবং সামাজিক ভাবে মিশতে না পারা
১১. ডায়াবেটিস
১২. বায়ু দূষণ
উল্লেখ্য যে, ডিমেনশিয়ার ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে, ল্যানসেট রিপোর্ট অনুসারে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৫২ মিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। এই রোগের ঝুঁকি দূরে রাখতে তাই অক্সফোর্ডের বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত আটটি জীবনধারার অভ্যাসের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল -
১. দৈনন্দিন খাবারে রাখতে হবে ল5 কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার, পাশাপাশি লবণ এবং চিনির পরিমাণ কম করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা প্রায় সকলেই এই বিষয়ে একমত যে মৌসুমি শাকসবজি, ফল, শস্য, অসম্পৃক্ত চর্বি, জলপাই তেল, মাছ এবং মটরশুটি ইত্যাদি জাতীয় খাবার এই রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে যথাযথ বিকল্প।
২. অক্সফোর্ড বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমেনশিয়ার সাথে অ্যালকোহলের একটি জটিল সম্পর্ক রয়েছে।সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক জন গ্যালাচার এই বিষয়ে জানান যে, সপ্তাহে মোটামুটি সাত ইউনিট অ্যালকোহল গ্রহণের মধ্যে অভ্যাস সীমিত করার কথা।
৩. বিশেষজ্ঞরা ধূমপান এবং ডিমেনশিয়ার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যোগাযোগ খুঁজে পেয়েছেন। ধূমপান স্মৃতিভ্রংশের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে মিনি-স্ট্রোক সৃষ্টি করে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। এর ফলে ভাস্কুলার ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে।
৪. প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ব্যায়াম করলে তা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা প্রদান করে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই শরীরচর্চা ডিমনেশিয়াকে হ্রাস করতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন - গাড়ি থেকে সরাসরি ঢুকছে নাকে! আজীবনের জন্য স্মৃতিশক্তি খোয়াতে পারেন আপনি
৫. মস্তিষ্ককে সচল রাখতে হলে সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অল্প পরিমাণে সামাজিক মিথস্ক্রিয়াও এই রোগীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক পার্থক্য আনতে পারে বলেই দাবি তাঁদের। বিশেষ স্মৃতিশক্তি লাগবে এবং মনোযোগ দিয়ে করতে হবে এমন কাজগুলি করার আগে অন্তত দশ মিনিট অন্য কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারলে তা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে, যা আসন্ন কাজে ইতিবাচক ফল দেয়।
৬. বিশেষজ্ঞরা যে আরেকটি আকর্ষণীয় অভ্যাসের কথা বলেছেন তা হল বুদ্ধিবৃত্তিক অবসর কার্যক্রমে অংশগ্রহণ। এর মধ্যে রয়েছে, ভালো কোনো বই পড়া, সেলাইয়ের কাজ করা, বিশেষ কোনও হাতের কাজ করা, সিনেমা অথবা থিয়েটার দেখা ইত্যাদি যে কোনও শিল্প-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপ।
৭. অন্যদিকে স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ হিসাবে শ্রবণশক্তি হ্রাস সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, ল্যানসেট রিপোর্টে পাওয়া গেছে, বিশেষজ্ঞরা কমে যাওয়া শ্রবণ ক্ষমতার সঙ্গে আপোষ করার বদলে কৃত্রিম মেসি ব্যবহারের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
৮. সবশেষে যে বিষয়টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হল নির্দিষ্ট এবং পরিমিত পরিমাণে ঘুম। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ ঘুম যে কোন রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাই ডিমনেসিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও স্থায়ী একটি ঘুমের অভ্যাস সুস্থতায় সহায়তা করে বলেই জানান চিকিৎসকেরা।
উপরে উক্ত বারোটি উপসর্গ ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে হতে পারে এই রোগ তবে সুস্থ জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসই এই রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলেই আশাবাদী চিকিৎসকেরা।