বর্ষশেষের সেরা ২০২৪: কোন কোন সিনেমা-সিরিজ ভাবাল গোটা বছরে?
Best Movies & Series of 2024: আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে, ক্রমবর্ধমান লোভের এই মঞ্চে দ্য সাবস্ট্যান্স-এর মতো জ্যান্ত ছবি বড় কম।
বর্ষশেষের এই সময়টায়, কোন জাদুবলে কী জানি, মন কেবলই অতীতগামী হয়ে পড়ে। এই আস্ত একটা বছরে দেখা ফিল্ম-সিরিজগুলির মধ্যে কোনগুলি সব থেকে ভালো লেগেছে সেই কথাই স্মৃতি খুঁড়ে খুঁজে আনছিলাম। তালিকা করার সময় শ্রেষ্ঠতম শব্দটা সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছি। ব্যাপারটা আপেক্ষিক, ওই সর্বকালের সেরা একাদশ নির্ধারণের মতোই— আপনি হয়তো গোলে রাখতে চাইবেন ইয়াশিনকে, অন্য কারও পছন্দ বুফোঁ। ও-তর্কে গিয়ে লাভ হয় না, তাই শুধুমাত্র কোন ছবিকে এই তালিকায় কেন রেখেছি সেই যুক্তি লিখব। কোন ছবির থাকা উচিত ছিল, কী কারণে অমুক সিরিজকে বাদ দেওয়া হল— সেসব আলোচনা না-হয় মুলতুবি থাকুক। এখন কেউ কেউ উপার্জিত অর্থের নিরিখে ছবির উৎকর্ষ বিচার করেন; কেউ কেউ সিনেমা বা সিরিজকে রাজনৈতিক শুদ্ধতার নিক্তিতে চাপান। আমি মূলত ‘কী বলা হয়েছে’ এবং ‘কীভাবে বলা হয়েছে’ — অর্থাৎ ‘ফর্ম’ এবং ‘কন্টেন্ট’ — এই দুয়ের ওপরেই জোর দিয়ে ছবিগুলি বেছে নিয়েছি।
দ্য ওয়াইল্ড রোবট:
জাহাজ-দুর্ঘটনা এবং তার ফলে অন্য ভূখণ্ডে গিয়ে পৌঁছনোর গল্প আমাদের অচেনা নয়; গালিভার্স ট্র্যাভেলস বা রবিনসন ক্রুসো-র অ্যাডভেঞ্চার-কাহিনি বহুপঠিত। মজার ব্যাপার হলো, এই অ্যাডভেঞ্চার-কাহিনিগুলোর মূলে রয়েছে এক ঔপনিবেশিক মানসিকতার বীজ। রবিনসন ক্রুসোর গল্প ধরা যাক। ক্রুসো জাহাজ-বিপর্যয়ের শিকার হয়ে গিয়ে পৌঁছচ্ছে এক দ্বীপে; ধীরে-ধীরে সেখানকার বাসিন্দাদের উপর একরকমের প্রভুত্ব কায়েম করে ফেলছে। ক্রুসোর আকস্মিক আগমনে দ্বীপের নিজস্ব সমাজব্যবস্থা কিছুটা ঘেঁটে গিয়ে একটা ঊর্ধ্বতন-অধস্তন হায়ারার্কি তৈরি হয়; ঊর্ধ্বতন, বলাই বাহুল্য, শ্বেতাঙ্গ ইউরোপিয় ক্রুসো।
এই যে সম্পূর্ণ অন্য চিন্তাধারার, আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমির মানুষ এসে পৌঁছচ্ছে দরিদ্রতর, কিছুটা কম-সুবিধাপ্রাপ্ত ভূখণ্ডে; তাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে কব্জা করতে চাইছে তাদের আবাসস্থল, আদায় করতে চাইছে তাদের নিঃশর্ত আনুগত্য— এই আসলে ঔপনিবেশিকতার মূলমন্ত্র। ইউরোপিয় অ্যাডভেঞ্চার-কাহিনির ছত্রে-ছত্রে ফুটে ওঠে এই মানসিকতার প্রতিফলন। দ্য ওয়াইল্ড রোবট এই আখ্যানের প্রতিকথন হয়ে ওঠে। এখানে এক যন্ত্রমানবী জাহাজ-দুর্ঘটনায় পড়ে এসে পৌঁছয় এক জঙ্গলে, তথাকথিত বুনো প্রাণীর মাঝে। লক্ষ্যণীয়, সে এসেই এই দ্বীপে বন্যপ্রাণীদের ওপর হুকুম জারি করে না; বরং, নিজে তাদের হুকুমের অপেক্ষায় থাকে। ফ্রানজ ফ্যানন লিখেছিলেন, ঔপনিবেশিক প্রভুরা উপনিবেশিতদের ওপর শারীরিক নির্যাতন তো চালায় বটেই; এর পাশাপাশি সূক্ষ্ম-স্থূল বিভিন্নরকমের মানসিক নিপীড়নও চলে। উপনিবেশিতদের ভাষা-সংস্কৃতি-ধর্মীয় প্রথাকে নাকচ করা এই মানসিক নিপীড়নের রূপবিশেষ— প্রতিনিয়ত উপনিবেশিতদের বোঝানো হয় তারা জাতি হিসেবে কতখানি নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য, পশ্চাদপসৃত; ঔপনিবেশিক প্রভুরা ঈশ্বর-প্রেরিত দূত হয়ে এসেইছে তাদের এই কীট-জীবন থেকে ‘মুক্তি’ দিতে।
আরও পড়ুন- সত্যিই কি ওপেনহাইমার শতাব্দীর সেরা সিনেমা? নাকি…
এরও জোরালো প্রতিস্বর থাকে দ্য ওয়াইল্ড রোবট-এ। এ-ছবিতে জন্তু-জানোয়ারদের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, নিজস্ব যাপনকে খারিজ করে না রোজাম; বরং, বন্য প্রাণীদের চেনা ছাঁদে নিজেকে গড়েপিটে নেয়। তার দক্ষতা, প্রযুক্তির জ্ঞান শেষত কাজে লাগে সেই দ্বীপের জন্তু-জানোয়ারদের কল্যাণেই।
অপার্থিব রঙ, দুর্ধর্ষ অ্যানিমেশন, নির্মেদ চিত্রনাট্য আছে তো বটেই; কিন্তু যে জঁর সব থেকে শিশুতোষ বলে পরিচিত, সেই অ্যানিমেশন ছবির হাত ধরে চিরাচরিত ঔপনিবেশিক গল্পের প্রতি-আখ্যান তৈরি করা সহজ নয়; পরিচালক ক্রিস স্যান্ডার্স এবং তাঁর দলবল দ্য ওয়াইল্ড রোবট-এ সেই দুঃসাধ্য কাজটিই অনায়াসে করে ফেলেছেন।
ব্রহ্ময়ুগম:
যাঁরা ভূথাকালাম দেখেছেন, রাহুল সদাশিভন নামটা তাঁদের অপরিচিত নয়। এই ভদ্রলোক এবার বানিয়ে ফেলেছেন তাঁর দ্বিতীয় হরর ছবি ব্রহ্ময়ুগম। দক্ষিণ ভারতের সাম্প্রতিক ছবিগুলি সম্পর্কে প্রায়শই একটা কথা হাওয়ায় ওড়ে: দাক্ষিণাত্যের ছবিগুলির শিকড় তাদের সংস্কৃতির বেশ গভীরে প্রোথিত, সেইসব লোকজ গল্পকে তাঁরা ওভার-দ্য-টপ ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেন। এ কথা যে কতখানি সত্যি, তা টের পাওয়া যায় ব্রহ্ময়ুগম দেখলে।
ব্রহ্ময়ুগম ভারতের সেই বিরলগোত্রীয় হরর, যাতে ভয়টা মূলত ক্ষরিত হয় পরিপার্শ্ব থেকে; যাকে পোশাকি ভাষায় ‘অ্যাম্বিয়েন্ট হরর’ বলা হয়। যাঁরা বিশাল ফুরিয়ার মারাঠি ছবি লাপাছাপি দেখেছিলেন বা রাহি আনিল বার্ভের তুম্বাড়— তাঁরা বুঝতে পারবেন এই ছবির ট্রিটমেন্ট কেমন। রাহুল ও তাঁর দলবল এই ছবির জগৎটি এত যত্ন করে তৈরি করেছেন, তাতেই একটা ফ্যান্টাসি-হরর গল্পকে আপাদমস্তক বিশ্বাসযোগ্য ঠেকে। একদম গোড়ার দৃশ্যের কথা ভাবুন। থেভানের বন্ধু কোরানকে রাত্রে ফুসলিয়ে তুলে নিয়ে চলে যায় যক্ষিনী, বাকি ছবির আর কোনও দৃশ্যে ওই যক্ষিনীর জোরালো উপস্থিতি নেই। কিন্তু তার এই কুহকিনী উপস্থিতি গল্পের জগৎটিকে জ্যান্ত আর বিশ্বাস্য করে তোলে— বোঝা যায়, এই দুনিয়ায় আসলে যা চোখে দেখা যায়, তার সবটুকুই যে সত্যি, নিখাদ, তা নয়।
ছবির সাদা-কালোতে শুধু যে সপ্তদশ শতকের রহস্যময় মালাবার জ্যান্তই হয়ে উঠেছে তা নয়, প্রতিটি ঘটনার ভালো-খারাপ বাইনারির মাঝে সম্ভাবনার স্তরে বেঁচে থাকা অজস্র ধূসরকে চিহ্নিত করা গেছে। সাদা যে পুরো সাদা নয়; কালো যে পুরো কালো নয়— তা এই ছবির জরুরি উপজীব্য। অতএব, এই টানাপড়েন, বিভ্রম প্রকট হয়ে ওঠে সাদা-কালোর মাঝামাঝি থাকা ধূসরে— ছবিতে যা বারবার ফিরে আসে। এক একটি শটে মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় তারকোভস্কির দ্য স্টকার, কখনও কখনও তুম্বাড়। একদম শেষ দৃশ্যে ব্রিটিশদের আগমন ছবিটিতে একটা জরুরি রাজনৈতিক পরত যোগ করে: ইউরোপিয় হানায় বিপর্যস্ত হচ্ছে ভারতের চিরায়ত অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক সমাজকাঠামো; এ-জঙ্গল, বনের মাঝে বাড়ি যদি হয়ে থাকে ভারতের নিজস্ব জল-হাওয়ায় বেঁচে থাকা স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, গাছ মাড়িয়ে চলে যাওয়া ঘোড়সওয়ার ব্রিটিশরা তবে নিঃসন্দেহে হানাদার। কিন্তু, ক্ষমতাসীনের অবয়ব পাল্টালেও, ক্ষমতার অভিমুখ, প্রশ্নাতীত আনুগত্য পাওয়ার লোভ পাল্টায় কি? নাকি সে জঙ্গলের মাঝে তিরতির করে বয়ে যাওয়া নদীর মতোই স্থান-কালের ভারমুক্ত স্রোত? ছবিটি সে-মতের দিকেই ঝোঁকে অবশ্য।
হরর যে নেহাতই ভয়-দেখানো, চমকে-দেওয়া জঁর নয়— এর পরিধি, তাৎপর্য, অভিঘাত আরও সুদূরপ্রসারী, ব্রহ্ময়ুগম-এর মতো এক একটা ছবি তা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যায়। এই ছবিতে মাম্মুট্টির অভিনয় তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ; যোগ্য সঙ্গত অর্জুন অশোকান এবং সিদ্ধার্থেরও।
আরও পড়ুন- বগল বাজাতে বাজাতে তাঁর ছবি দেখা যায় না! গোদারের সিনেমা কেন দেখবে মানুষ?
মেরি ক্রিসমাস:
শ্রীরাম রাঘবনের শেষ চারটি ছবি যথাক্রমে জনি গদ্দার, এজেন্ট বিনোদ, বদলাপুর এবং অন্ধাধুন। স্বভাবতই, মেরি ক্রিসমাস-ও আদ্যন্ত অপরাধ-নির্ভর ছবিই হবে, এরকম একটা আগমার্কা ধারণা নিয়ে ছবিটা দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু রাঘবন আর কবেই বা চেনা পথে হেঁটেছেন! এ ছবি শুরু হয় এরিক রোহমারকে ধন্যবাদ জানিয়ে। রোহমার, ফরাসি নবতরঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ, তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যখন একটা ছবি শুরু হচ্ছে, তাঁকে তো আর নেহাতই ক্রাইম-থ্রিলারে সীমাবদ্ধ করে রাখা যায় না। এরিক রোহমারের ছবি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রজার ইবার্ট বলেছিলেন, “আপনার ডায়েরি থেকে রোহমার যদি ছবি বানাবেন মনস্থির করেন, তাহলে ডায়েরির ঘটনাবহুল দিনগুলি নয়; ছবির বিষয়বস্তু হিসেবে তিনি আপাত ঘটনাবিহীন, নিস্তরঙ্গ, ক্লান্তিকর দিনগুলিই বেছে নেবেন।” কোনও এক মহানগরীর বুকে বেঁচে থাকা দু’টি মানুষের জীবনকে রোহমার দীর্ঘস্থায়ী, স্থির শটে দেখাতেন— তাদের কথোপকথন, ছোট্ট-ছোট্ট অভিব্যক্তিকে ক্যামেরায় ধরে রাখতেন পেলব যত্নে। মেরি ক্রিসমাস-ও বহিরঙ্গে যতই অপরাধ-নির্ভর ছবি মনে হোক না কেন, এ আসলে প্রাক-উদারীকরণ বম্বে শহরে গোল্ডফিশের মতো বেঁচে থাকা দু’টি মানুষের প্রেমের গল্প, ঘটনাচক্রে তাদের একসুতোয় বেঁধে দিয়েছে একটি খুন। এই ছবিতেও রোহমারের মতোই মরমী হয়ে ওঠে রাঘবনের ক্যামেরা, একেকটি দীর্ঘস্থায়ী শটে দু’জনের ক্রিসমাস-যাপনকে বড় যত্নে ধরে রাখে। এর পাশাপাশি, অনেকগুলো ভিজ্যুয়াল কেঅস তৈরি করে সম্ভাব্য অপরাধটির ইঙ্গিত দেয়। যেমন, মারিয়া-অ্যালবার্টের প্রথম ঘনিষ্ঠতার সময়ে লিফটের রেলিঙের ছায়া পড়ে দু’জনের মুখে— প্রথম শারীরিক নৈকট্যকেই যেন খানখান করে দেয় সেইসব আধিভৌতিক ছায়া। দর্শকের একটা খটকা লাগে। ইনস্পেক্টর যখন সিঁড়িতে এসে দাঁড়ান, একটা ক্লাসিকাল লো অ্যাঙ্গল শটে ঘুরে উঠে-যাওয়া সিঁড়িটিকে দেখায় ক্যামেরা— একটা স্পাইরাল প্যাটার্ন তৈরি হয়। প্রেমের ছবি হলেও একটা রহস্যাবৃত আবহ তো রয়েইছে, এই দৃশ্যমান প্যাটার্নগুলি দর্শকের সেই সন্দেহপ্রবণতাকে সারাক্ষণ উস্কে রাখে। একইসঙ্গে এই দুই মানুষের ক্রমবর্ধমান নৈকট্যকে সযত্নে ধরে রাখা এবং দর্শকের মনে আশঙ্কার বীজটিকে সার-জল দিয়ে যাওয়া বড় সহজ কথা নয়, এ-ছবিতে তা সাবলীলভাবেই হয়েছে।
শ্রীরাম রাঘবন আসলে একজন চমৎকার শিল্পরসিক। জনি গদ্দার-এ জনির হাতে থাকে জেমস হার্ডলি চেজের বই; অন্ধাধুন-এ ফিরে আসে অনিল ধাওয়ানের প্রেমের গান। এ-ছবিতেও দেখা দিয়েছে রেমন্ড শ্যান্ডলারের প্লেব্যাক, পুলিশের মুখে শোনা যায় অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুসসা কিঁউ আতা হ্যায়-র সংলাপ। শুরুর দৃশ্যে পর্দায় ভেসে আসে হিচককের রেবেকা-র পোস্টার। মারিয়ার ফ্ল্যাটে বাজে হেনরিক ইবসেনের পিয়ার জিন্ট নাটকে ব্যবহৃত এডভার্ড গ্রিগসৃষ্ট-সুর ইন দ্য হল অফ দ্য মাউন্টেন কিং। তবে শ্রেষ্ঠ সংযোজন সম্ভবত অমন চমৎকার ক্লাইম্যাক্সে আন্তোনিও ভিভাল্ডি-র দ্য ফোর সিজনস-এর উইন্টার অংশটি। ভিভাল্ডির কনসার্টে চার ঋতুর শেষটি হলো উইন্টার। কতগুলো পরিস্থিতি কল্পনা করে নিতে পারলে এই সুরটি আরও মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে। প্রথম মুভমেন্টে শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিরন্তর মেঝেতে পা ঠুকে চলেছে একটা লোক— এই দৃশ্যটা কল্পনা করুন। দ্বিতীয় মুভমেন্টে ভাবুন, লোকটা ফায়ারপ্লেস বা বনফায়ার— কোথাও একটা কাঙ্খিত উষ্ণতা পেয়েছে। তৃতীয় মুভমেন্টে এই সমস্তটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে; পাতলা বরফের আস্তরণের ওপর হেঁটে চলেছে লোকটি, পড়ছে, ফের উঠে দাঁড়াচ্ছে। অ্যালবার্ট আর মারিয়ার গল্পটি এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন: বিপুল মহানগরীতে দু’টি নিঃসঙ্গ মানুষ একে অপরের সান্নিধ্যের উষ্ণতা খুঁজে চলেছে; গল্পের মাঝামাঝি অবশেষে তাদের আলাপ হলো, ঘনিষ্ঠতা হলো; শেষে এক টালমাটাল পরিস্থিতির উদয় হয়— মারিয়া আর অ্যালবার্টের সম্পর্কটিই প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে, যেন, উত্তাল তুষারঝড়ের মাঝে বরফাবৃত প্রান্তর বেয়ে টলমল করতে করতে অনিশ্চিতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কেউ। যাত্রা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনো আছে কি? ছবিটি নিরুত্তর।
শ্রীরাম রাঘবন সমসময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প-বলিয়ে, তাঁর ছবিতে একেকটি প্রপও গল্পের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে। আর সমস্ত কিছু ছেড়ে দিলেও, সম্ভবত আর্ট ডিরেকশনের জন্যই মেরি ক্রিসমাস-কে অনায়াসে এই বছরের প্রিয়তম ছবির তালিকায় রাখা যেত। কী নিপুণ মনোযোগে সিনেমা তৈরি করা যায়, একেকটি ছবির একেকটি শট-শব্দ-প্রপের মধ্যে কী অসীম সম্ভাবনা বুনে দেওয়া যায়— রাঘবনের একেকটা ছবি বারবার সেটা বুঝিয়ে দিয়ে যায়।
আরও পড়ুন- বাংলা সিনেমার উচ্চতা থেকে পতন নিয়ে দু’চার কথা
শ্রী স্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলে:
ওটো পেঞ্জলারের মতে, পাল্প ফিকশনের গোয়েন্দারা শ্যুট-ফার্স্ট-আস্ক-কোয়েশ্চনস-লেটার গোত্রের গোয়েন্দা। রেমন্ড শ্যান্ডলার, পল কাইন, ড্যাশিয়েল হ্যামেট— মোটামুটি সকলের গোয়েন্দারই এই প্রবৃত্তি রয়েছে। পাল্পের জগতে সমস্তটাই বড় সাদা-কালো— সেখানে ধূসরের ঠাঁই নেই, অপরাধীর মনন বুঝে তাকে সংশোধনের পথে নিয়ে যাওয়ার দায় গোয়েন্দার নেই। গোয়েন্দারা কেউই বাড়িতে বসে বোর হয়ে হঠাৎ একদিন খেয়ালবশে গোয়েন্দাগিরির পথ বেছে নেননি; জীবন-সংগ্রামে ক্লান্ত মানুষগুলোকে জীবনই অদ্ভুত পরিহাসে এই মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে: পক্ষ বাছো। দুষ্টের সঙ্গে এই নাছোড় সংঘাতে যাওয়ার সিসিফাসসুলভ যাপন ক্লান্ত করেছে এই প্রায়-অতিমানব গোয়েন্দাদেরও। সেই শ্রান্তি ধরা পড়ে এদের আচরণে, কথায়।
আমেরিকায় পাল্প যখন জনপ্রিয় হতে শুরু করে, তখন ‘দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন এরা’-রও সূত্রপাত। হাজার-হাজার মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, অর্থনৈতিক ধ্বস নামছে, বাড়ছে অপরাধের হার; এমতাবস্থায় এই ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ জাতীয় গল্পগুলো সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। যে ইনসাফ মানুষ বাস্তবে চেয়ে পায়নি, তাকে তারা খুঁজেছে পাল্পের পাতায়; সাদা-কালো দুনিয়ায় চেয়েছে অপরাধীর ক্ষমাহীন শাস্তি।
বাঙালির এই পাল্প-গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত ছিল সিনেমার পর্দায়। ২০২৪-এ যখন তাকে দেবালয় ভট্টাচার্য পর্দায় নিয়ে এলেন, তখন তার গল্পে জুড়ে দিলেন আধুনিক শিল্পের এক অপরিহার্য উপাদান: আত্মসমীক্ষণ। সেল্ফ-রিফ্লেকশন। লক্ষ্য করবেন, আইপিএলে ড্রিম ইলেভেনের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে শাহরুখ খানের ছবির প্রোমোশন— এখন সবই সেল্ফ-রিফ্লেক্সিভ। কোথাও সুনীল শেট্টি-লোকেশ রাহুলের বাস্তবের শ্বশুর-জামাই সম্পর্ক উঠে আসে, কোথাও শাহরুখ খানের রোম্যান্টিক রোলে টাইপকাস্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে টীকাটিপ্পনী। তারকারা জানেন, তাঁদের খামতিগুলো উপেক্ষা করা নয়, বরং সেগুলো স্বীকার করে দর্শকের দরবারে দাঁড়ানোই এখন বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
এখানেই বাদামী হায়নার কবলে আধুনিক হয়ে ওঠে। স্বপনকুমারের লেখার অতিরঞ্জন, সীমাবদ্ধতা, গাঁজাখুরি ব্যাপারগুলো সকলেই জানে; কিন্তু তা-ও, স্বপনকুমার ফেলুদার ভাষায় ‘আনপুটডাউনেবল’। দীপক চ্যাটার্জি শুধু যে বঙ্গদেশের উপেক্ষায় সিনিক হয়ে পড়ে তা নয়, সে লেখক স্বপনকুমারের ভ্রান্তিগুলোকে সংশোধন করতে করতে এগোয়। শেষতক, কলকাতা শহরের বুকে এমন এক ভিলেনের আগমন ঘটে, তাকে ঠেকাতে মঞ্চে দীপককেই অবতীর্ণ হতে হয়।
এই একান্তই বঙ্গের সংস্কৃতিকে এপিক ট্রিটমেন্টে পর্দায় নিয়ে আসা— এ-কাজের জন্য সাহস লাগে বটে। শুধু এই সাহসের জন্য এই ছবিকে এই তালিকায় রাখিনি; ছবিটার রং, জগৎ-নির্মাণ, চরিত্রায়ণ— সমস্ত কিছুই আনঅ্যাপোলোজেটিক্যালি পাল্পি। বাংলা ছবি ক্রমশ শহরকেন্দ্রিক এবং শহরের অডিয়েন্সের কথা মাথায় রেখে তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে, সেখানে এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য।
আরও পড়ুন- সিনেমার ভাঙাগড়া ও এক ছবিওয়ালার মন
দ্য সাবস্ট্যান্স:
জুলিয়া ক্রিস্টেভার অ্যাবজেক্ট-এর ধারণার প্রায় মূর্ত রূপ হয়ে উঠেছে এই ছবি। আমাকে যা মুগ্ধ করেছে, তা হলো এই ছবির ফর্ম। সময়ে-সময়ে কুব্রিকের ক্লাসিক ছবি দ্য শাইনিং-কে মনে করিয়েছে ছবিটি— মনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে কি সেই ছবির ক্লস্ট্রোফোবিয়াই ক্রমে সঞ্চারিত হয়েছে লিজি স্পার্কলের চেতনে? এতটাই ক্লস্ট্রোফোবিয়া, যাতে সে মুক্তি চেয়েছে নিজের বুড়িয়ে যাওয়া শরীর থেকে? ক্ষণে-ক্ষণে দ্য শাইনিং-কে মনে করানো একেকটি দৃশ্য আসে— সে স্টুডিওর বাথরুমই হোক অথবা শেষের ‘ব্লাডবাথ সীন’, বারংবার ভেসে আসে কুব্রিকের ছবির সেই বদ্ধতা তৈরি করা বিখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফির স্মৃতি।
ছবিটা আশ্চর্যরকমের উজ্জ্বল— মূলত সাদা রঙের প্রয়োগ এই ছবিতে বারবার ফিরে এসেছে। এই উজ্জ্বলতার একটা ভয়ঙ্কর উল্টো পিঠ রয়েছে: বিবর্ণ বিষণ্ণতার দিক। আসলে যা কিছু উজ্জ্বল, তার আড়ালে তো ঢের অন্ধকার রয়েছে। স্যু-কে ক্যামেরা যতই ব্যঙ্গাত্মকভাবে ফেটিশাইজ করুক না কেন, তার শরীর থেকে যখন আস্ত মুরগির ঠ্যাং বেরিয়ে আসে, গা গুলিয়ে ওঠে। ‘খুঁতহীন’ এই সৌন্দর্যের আড়ালে এই ঘাম-রক্ত-শ্লেষ্মা-পিত্তটুকুও একইরকম সত্যি। ছবিটি বারবার তা সংলাপের সূত্র ধরে আওড়ে যায়: স্যু আর লিজি আসলে এক। এই উজ্জ্বল, আঁধারের লেশমাত্র না-থাকা পটভূমিকে যখন ভাসিয়ে যায় বিকৃতদেহী লিজি ও স্যুয়ের রক্ত— তখন ধাক্কা লাগে। এতক্ষণ ধরে চোখের সামনে ভেসে থাকা নিপাট-নিটোল অঞ্চলটি ডুবে যাচ্ছে মানুষরূপী মণ্ডের রক্তে, এই দৃশ্যই এই ছবির আতঙ্কের উৎস। আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে, ক্রমবর্ধমান লোভের এই মঞ্চে দ্য সাবস্ট্যান্স-এর মতো জ্যান্ত ছবি বড় কম।
এই ছবি পুরোদস্তুর ডেমি মুর এবং মার্গারেট কোয়ালির ছবি। একই মানুষের শরীরের দু’টি সত্তা যে একে অপরের দিকে এত তীব্র বিদ্বেষ, ঘৃণা ছিটিয়ে দিতে পারে— এঁদের অভিনয় না-দেখলে তা সততই অজানা থেকে যেত। ছবির সম্পাদনাও বেশ আগ্রহব্যঞ্জক। সময়ে-সময়ে এডিটিং থেকেই যে গা-গোলানি অস্বস্তিটি উঠে আসছে, তা বুঝতে-বুঝতে অবশ্য ছবিটি মাঝপথ পেরিয়ে যাবে। ধীরগতির শটের সঙ্গে অস্থির, দ্রুতগতির শট প্রায়শই জুড়ে দেওয়ায় গোটা ছবি জুড়ে একটা অননুকরণীয় ছন্দ তৈরি হয়েছে— যার পুরো কৃতিত্বই কোরালি ফার্জ্যাট ও তাঁর এডিটিং টিমের। দু-একটি টুকরো চ্যুতি বাদ দিলে এই ছবিটি সমসময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি বলে মনে করি।
দ্য জোন অফ ইন্টারেস্ট:
নাৎসিদের নিয়ে তো কম ছবি তৈরি হয়নি। হয়েছে শিন্ডলার্স লিস্ট, হয়েছে ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস-এর মতো হিস্টোরিকাল ফিকশন। রয়েছে অজস্র ডকুমেন্টারি, যাতে নাৎসি-বীভৎসতার আভাস পাওয়া যায়। এ-সত্ত্বেও দ্য জোন অফ ইন্টারেস্ট থেকে এক অচেনা ভয়ঙ্কর অভিঘাত তৈরি হয়। এই যে অন্য জাতির মানুষের অত্যাচারের প্রতি একরকম অন্ধ-বধির হয়ে থাকা— এই প্রবণতাই শিহরণের কারণ হিসেবে যথেষ্ট। দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমে শব্দ যে কত বাঙ্ময় হয়ে উঠতে পারে, তা আমরা প্রায়শই দৃশ্যের আধিক্যে ভুলে যাই। দ্য জোন অফ ইন্টারেস্ট হররটি তৈরি করে মূলত শব্দকে এক অকাট্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
ছবির দৃশ্য এবং শব্দের অমোচনীয় কন্ট্রাস্টই এই ছবির স্তম্ভবিশেষ। আমরা কী দেখি? দেখতে পাই প্যাস্টেল শেডের দৃশ্য— একটি পরিবার ছুটি কাটাচ্ছে। মূলত ওয়াইড শটেই সেই অবসর-যাপনের পলগুলি ধরা পড়ে— কেউ নদীতে স্নান করছেন, কেউ ফুলগাছে জল দিচ্ছেন, বাচ্চারা খেলছে, কুকুর দৌড়োদৌড়ি করছে। মিউট করে দেখলে বা সংলাপগুলি উপেক্ষা করলে আদর্শ ছুটি-কাটানোর মুহূর্ত মনে হবে। কিন্তু শব্দটি চালালেই শিরদাঁড়া দিয়ে খেলে যায় হিমশীতল স্রোত। এই প্যাস্টেল শেডের দৃশ্যের ওপরে ছুরি চালানোর মতো ভেসে আসে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ইহুদিদের চিৎকার। কিন্তু এই উপেক্ষা, ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বে মানুষের এই মরণ-চিৎকারে পরিবারটি সামান্যও বিচলিত না-হওয়ায় আমরা শিউরে উঠি— কেবল ভিন্নজাতের বলে মানুষের প্রতি এতটা ঘৃণার চাষ করা যায়!
যে সময়ে ছবিটি বেরিয়েছে, সেই সময়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আমরাও এখন বধির হওয়ার চর্চা চালাচ্ছি। পাশের দেশ বা মধ্য-প্রাচ্যের দেশের ঘটনা ছেড়ে দিন, পাশের পাড়ায় কিছু ঘটলে আমাদের বিশেষ হেলদোল হয় না। আমাদের শিল্পমাধ্যম, আমাদের শিল্পের রসাস্বাদনের উপকরণগুলি আমাদের কেবলই নিভৃতে ঠেলে দিচ্ছে— যে নির্জনতায় শুধু পছন্দের গানটি বাদে কোনও কোলাহল আসে না; যে নিরালায় শুধু পছন্দের বইটি বাদে কোনও বিজাতীয় দৃশ্যের আনাগোনা নেই। দ্য জোন অফ ইন্টারেস্ট যে প্যাস্টেল শেডে রাঙানো দৃশ্যগুলি দেখিয়েছিল, রূপভেদে অমন অনেকগুলি রঙিন বলয়ে আমরা মজে আছি— আমাদেরও কান এড়িয়ে যাচ্ছে কত আর্তচিৎকার, প্রাণভিক্ষার আকুতি, সাহায্যের আর্জি।
এ-ছবি শুধু যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আয়না হয়ে থাকে তা নয়, ঘৃণার ক্রমবর্ধমান ডালপালা যে আসলে যেকোনও মানুষকেই যেকোনও মানুষের যন্ত্রণার প্রতি উদাসীন করে তোলে— এই জরুরি সত্যটি মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন- নিরাপদ নির্মাণ: শ্যাম বেনেগালের সিনেমা
দ্য পেঙ্গুইন:
ব্যাটম্যানের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ভিলেন হিসেবে পেঙ্গুইন অগ্রগণ্য নয়; তার নাম আসে জোকার, রিডলারের ঢের পরে। তবু, তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া এই আস্ত সিরিজটি এই বছর তো বটেই, সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিরিজ বলে আমি মনে করি। আজ থেকে বছর দশেক আগে তৈরি হয়েছিল গথাম, গথাম শহরের বুকে আধারিত সেই সিরিজ আসলে ব্যাটম্যানের প্রিকোয়েল— তার শেষ শটে ব্রুস ওয়েন ব্যাটম্যানরূপে আবির্ভূত হয়। এই সিরিজ সদ্য-মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য ব্যাটম্যান-এর পর থেকে এগোয়; এই অপরাধ-নগরীতে কীভাবে ‘দ্য পেঙ্গুইন’-এর গল্প এগোল, তা নিয়ে এই সিরিজের কারবার।
ম্যাট রীভসের হাতে পড়ে দ্য ব্যাটম্যান হয়ে উঠেছিল আদর্শ নিও-নোয়া ডিটেকটিভ ছবি; দ্য পেঙ্গুইন-এও সেই প্রভাব এসে পড়েছে। অনুজ্জ্বল, আলো-আঁধারি পরিবেশে গথাম সততই হয়ে উঠেছে রহস্যনগরী, যার কোণায়-কোণায় লুকিয়ে আছে অজানা সঙ্কট।
এই সিরিজে যখনই আবির্ভূত হয়েছেন, আলো টেনে নিয়েছেন কলিন ফ্যারেল। দ্য ব্যাটম্যান-এ তাঁর লুক দেখেই সকলে চমকে গিয়েছিল, কিন্তু তাঁর যে অভিনয়ের বিপুল পরিসর ছিল— তেমন নয়। সেখানে বরং বেশি প্রচার পেয়েছে রিডলার। কিন্তু এই সিরিজে কলিন ফ্যারেল অনবদ্য! তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন সোফিয়া ফ্যালকনরূপী ক্রিস্টিন মিলোটি। গথাম-এর কাস্টিং ছিল অসামান্য, গর্ডনের চরিত্রে বেন ম্যাকেঞ্জি থেকে শুরু করে জোকার হিসেবে ক্যামেরন মনাঘান— প্রত্যেকেই যথাযথ। সেই সুচিন্তিত কাস্টিং ফিরে এসেছে এই সিরিজেও।
এই তালিকাটা করতে গিয়ে আবারও কিছুটা অসহায় হয়ে পড়লাম। নানা কারণে তালিকায় রাখা গেল না মানিকবাবুর মেঘ, কিল, মহারাজা, লাপাতা লেডিজ, CTRL প্রভৃতি ছবি। বিপুল আলোচিত হলেও দেখা হয়নি বলেই ভাবা গেল না অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট, অ্যানোরা বা দ্য সীড অফ দ্য সেক্রেড ফিগ-এর মতো ছবি। বেবি রেইনডিয়ার, কিলার স্যুপ, বা ইনস্পেক্টর ঋষি দেখলেও এ-বছর মুক্তি পাওয়া প্রিয় সিরিজ বললে দ্য পেঙ্গুইন-এর কথাই কেবল মাথায় আসবে। তবে, বাকি ছবিগুলি কি খারাপ, বা, তারা কি অপাংক্তেয়? একেবারেই তা নয়। বেছে নেওয়ার কাজ সহজ ছিল না; বলেইছি, কেবল অন্তর্ভুক্তিকরণেরই যুক্তি থাকবে। আমি চেষ্টা করেছি ফর্ম ধরে বা বিষয়বস্তুকে ফর্মের সাপেক্ষে ব্যাখ্যা করে তালিকাটি জাস্টিফাই করার। প্রত্যেকের মানদণ্ড, তালিকা আলাদা হতেই পারে; সেটাই কাম্য। লক্ষ্য একটাই, ভালো কাজ দেখা, ভালো কাজ নিয়ে আলোচনা করা। ২০২৫-এও সেই ধারা অব্যাহত থাক!