পৃথিবীর মতো নক্ষত্রেও হয় ভূমিকম্প? মহাকাশ থেকে যে তথ্য পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা
Starquakes, যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে নক্ষত্রকম্প, তার থেকে আমরা এই সব নক্ষত্রগুলির ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারি। বিশেষ করে তাদের অভ্যন্তরীণ গঠনের বিষয়ে।
আমরা সবাই ভূমিকম্প বা Earthquake-এর বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। নিজেদের জীবনে কম-বেশি সকলেরই অভিজ্ঞতা আছে ভূমিকম্পের। কিন্তু Starquake? শুনেছেন কখনও এই শব্দবন্ধটি?
২০১৩ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি গাইয়া নামের এক পর্যবেক্ষণাগার মহাকাশে পাঠায়। যার প্রধান লক্ষ্য হলো, আমাদের মিল্কি ওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের বহুমাত্রিক এবং নিখুঁত একটি মানচিত্র তৈরি করা। এই গাইয়া পর্যবেক্ষণাগার গত সপ্তাহেই আমাদের গ্যালাক্সির প্রায় দুই বিলিয়ন নক্ষত্রের বিষয়ে তথ্য পাঠিয়েছে।
এই গবেষণার কাজ করার সময়ই গাইয়া লক্ষ্য করে, নক্ষত্রগুলির কেন্দ্রে বা ভূ-ত্বকে খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে সুনামির মতো আলোড়ন হচ্ছে। ঠিক যেরকম আমাদের পৃথিবীর ভূ-ত্বকে হয়।
আরও পড়ুন: মানুষের মতোই মৃত্যুর ভয় পায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? যে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে
"Starquakes, যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে নক্ষত্রকম্প, তার থেকে আমরা এই সব নক্ষত্রগুলির ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারি। বিশেষ করে তাদের অভ্যন্তরীণ গঠনের বিষয়ে। গাইয়া আমাদের জন্য অ্যাস্টেরোসিজমোলজির স্বর্ণখনি উন্মোচন করছে," ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি তাদের বিবৃতিতে জানাচ্ছে।
যে কম্পনগুলি ধরা পড়েছে গাইয়ার যন্ত্রে, তাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন 'বিরাট আকারের সুনামি', যা এই নক্ষত্রগুলির মানচিত্র পাল্টে দিতে সক্ষম। মজার বিষয় হলো, গাইয়ার এই কম্পন নির্ণয় করার কথাই ছিল না। কিন্তু হাজার হাজার নক্ষত্রের কেন্দ্রে এইরকম কম্পন তার সেন্সরে ধরা দিয়েছে, কারণ সেই নক্ষত্রকম্প এতটাই তীব্র। তার মধ্যে কিছু নক্ষত্র এমনও আছে, যেখানে এই ধরনের কম্পন হওয়া খুবই বিস্ময়কর।
গাইয়া পৃথিবী থেকে এই মুহূর্তে ৯,৩০,০০০ মাইল দূরে আছে। সূর্যের একেবারে বিপরীত মুখে। এটি দু'টি টেলিস্কোপ বহন করছে, যা আমাদের ছায়াপথকে এল-টু পয়েন্ট থেকে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তার মানচিত্র বানানোর কাজ করছে। যে দূরত্বে তাকে রাখা হয়েছে, সেখানে পৃথিবী এবং সূর্যের মহাকর্ষীয় বল তাকে স্থিতিশীল রাখছে। সেই একই কারণে পৃথিবী থেকে বিচ্ছুরিত আলোও কোনও সমস্যা তৈরি করে না তার জন্য, এবং স্থিতিশীলতার কারণে জ্বালানির ব্যবহারও খুব সীমিত।
এই মানচিত্র তৈরির কাজের সবচেয়ে উত্তেজক দিক হলো, মিল্কিওয়ে কীভাবে জন্ম নিয়েছিল, এবং অতীতে কোন কোন ছায়াপথের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে, কীভাবেই বা তা এই সর্পিল আকার নিল, কীভাবে নতুন নক্ষত্রর জন্ম হয়, এই সবকিছুই জানা যাবে।
সেই সঙ্গে জানা যাবে নক্ষত্রগুলির রাসায়নিক গঠন, তাপমাত্রা, ভার, বয়স, তার গতি এবং ঠিক কত দ্রুত সে আমাদের পৃথিবীর কাছে আসছে, বা দূরে চলে যাচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে আমাদের সৌরজগতের দেড় লক্ষ গ্রহাণুরও।
এই সুবাদে আমরা আমাদের ছায়াপথকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব, কারণ যত বেশি নক্ষত্রর রাসায়নিক গঠন বোঝা যাবে, তত এই কাজে সুবিধা হবে। এই মুহূর্তে গাইয়ার কাছে ষাট লক্ষ নক্ষত্রের তথ্য রয়েছে। গাইয়া আসলে সমীক্ষার কাজ চালাচ্ছে, এবং আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার করবে এই বিস্ময়কর যন্ত্র।