দুর্গাপুজোর পর এবার গঙ্গাসাগর! ইউনেসকোর হেরিটেজ তকমার দৌড়ে কতটা এগিয়ে এই মেলা?
Gangasagar Mela 2023: ইতিমধ্যেই ইউনেসকোর কাছে গঙ্গাসাগর মেলার বিষয়ে আবেদনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণ হবে সবটা।
কলকাতার দুর্গাপুজোর পর এবার বাংলার গঙ্গাসাগর! সাগরদ্বীপের এই পুণ্যক্ষেত্রের মাথায় উঠছে 'হেরিটেজ' (Heritage Gangasagar) মুকুট? ২০২৩-এর গঙ্গাসাগর মেলার শুরুর মুহূর্তেই এই প্রশ্ন উঠেছে ফের। রীতিমতো শোরগোল পড়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরমহলে। বলা হচ্ছে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই অসাধ্যসাধন করতে পারে গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela)। পেতে পারে UNESCO-র 'হেরিটেজ' তকমা, যে সম্মান সম্প্রতি পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। বিরাট সমারোহে সেই ইতিহাস সৃষ্টির উদযাপনও করেছে রাজ্য সরকার।
কেন গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে এই জল্পনা শুরু হয়েছে? কী কারণে ইউনেসকোর তরফে আসতে পারে স্বীকৃতি?
জানা গিয়েছে, কলকাতার দুর্গাপুজো এবং উৎসবকে ইউনেসকো 'হেরিটেজ' তকমা দেওয়ার পরেই গঙ্গাসাগর মেলা নিয়েও তোড়জোড় শুরু করে রাজ্য। কারণ হিসেবে উঠে আসে কুম্ভমেলার কথা, যেখানেও পুণ্যস্নান এবং পাপমোচনের আশায় উপস্থিত হন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। কয়েকদিন ধরে চলা গঙ্গাতীরের ওই মেলায় হাজির হন অগণিত মানুষ। সেই মেলাকে ইতিমধ্যেই তকমা প্রদান করেছে ইউনেসকো। দুর্গাপুজোর মতোই নয়া ইতিহাস রচিত করেছে কুম্ভ মেলা। আর এই মেলাকে হেরিটেজ তকমা পেতে দেখার পরই ইউনেসকোর কাছে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়েও আবেদনের প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
গত নভেম্বরে গঙ্গাসাগর মেলাকে ইউনেসকোর 'হেরিটেজ' স্বীকৃতির দাবিদার করে তুলতে পদক্ষেপও করে রাজ্য। বৈঠকে বসেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরকৃষ্ণ দ্বিবেদি। সেখানেই নির্দেশ দেওয়া হয় বিভিন্ন বিষয়ে। বিস্তারিত বিবরণ থেকে শুরু করে গঙ্গাসাগর মেলার তাৎপর্যের বিস্তারিত তুলে ধরা, একাধিক ক্ষেত্রে ভূমিকা নেওয়ার কথা বলা হয় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের উদ্দেশ্যে। এমনকী দৃশ্য-শ্রাব্য তথ্যচিত্র তৈরির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়, যা গঙ্গাসাগর এবং গঙ্গাসাগর মেলাকে তুলে ধরবে বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে।
সরকারি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ইউনেসকোর কাছে গঙ্গাসাগর মেলার বিষয়ে আবেদনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণ হবে সবটা। আর এর পরেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খুব শীঘ্রই ওই মেলায় আসতে পারেন ইউনেসকোর প্রতিনিধিরা। তাঁদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই জুটতে পারে এই তকমা। ইউনেস্কোর কাছে আবেদনে গুরুত্ব পেয়েছে আগের এবং এখনকার গঙ্গাসাগর। একাধিক ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ এবং সামগ্রিক মেলা-ব্যবস্থাপনা; সবটাই উঠে এসেছে ওই আবেদনে।
আরও পড়ুন- কেন গেরুয়াই বেছে নেন ভারতীয় সন্ন্যাসীরা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আগামী জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। মূল স্নানের দিন ১৪ জানুয়ারি, মকর সংক্রান্তির দিন। এর আগে পরে এবং স্নানের দিন উপলক্ষ্যে ভিড় জমবে গঙ্গাসাগরে। করোনা কাল ছাড়িয়ে এবছর বিরাট পরিমাণে ভিড় বাড়তে পারে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। আর এই সমস্ত দিকের কথা মাথায় রেখেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে থাকছে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা।
কলকাতার বাবুঘাট থেকে মুড়িগঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১১টি জায়গায় বাফার জোন থাকবে। কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগরের পথে এই বাফার জোনেই থাকবে একাধিক ব্যবস্থা। শৌচালয় থেকে পানীয়, রাখা হবে নূন্যতম চিকিৎসার ব্যবস্থাও।
এদিকে ভিনরাজ্য-সহ একাধিক জায়গা থেকে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। ইতিমধ্যেই গঙ্গাসাগর পরিদর্শনে গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। গঙ্গাসাগর মেলায় যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম জলপথ। সেদিকের কথা মাথায় রেখে, মুড়িগঙ্গার দু'পারে অস্থায়ী, স্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ১১টি জেটির বন্দোবস্ত করছে সরকার।
এর সঙ্গেই মেলায় আগতদের জন্য এবার নজিরবিহীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য। মেলা অঞ্চলে প্রায় ৫টি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে ১০০ জন চিকিৎসক এবং অন্যান্য ক্ষেত্র মিলিয়ে প্রায় ৭০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে থাকছেন রাজ্যের তরফে, গঙ্গাসাগর মেলায়। থাকছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও।
অস্থায়ী শিবির তৈরি হচ্ছে মেলার কাছে। বিরাট এলাকা জুড়ে থাকার ব্যবস্থা রাখছে প্রশাসন। কপিল মুনির মন্দিরে পুজোর ক্ষেত্রেও নেওয়া হচ্ছে বিশেষ সতর্কতা। করোনার পরের ভিড় মাথায় রেখেই আঁটঘাট বেঁধে তৈরি রাজ্য। রাজ্যের তরফে থাকছে অতিরিক্ত পরিবহনের ব্যবস্থা। সরকারের তরফে বেলুড় মঠের কাছ থেকে, প্রায় ১০০-র বেশি বেসরকারি, সরকারি বাসের ব্যবস্থাও থাকছে এই মেলায়।
সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে ফের বিশ্বজনীন হতে চলেছে বাংলার এক উৎসব। অনেকেই বলছেন, একই বছরে একটি উৎসবের সাফল্য আর একটি উৎসবের সাফল্য পাওয়ার লড়াই অভিভূত করেছে বেলুড়মঠের আধিকারিকদের। যা ইউনেসকোকে কেন্দ্র করে মাথাচাড়া দিয়েছে ফের।