কেন গেরুয়াই বেছে নেন ভারতীয় সন্ন্যাসীরা

Indian sant : সাধুদের পোশাকের এহেন রং কেবল একটা মিথ নয়, নয় বেড়ানো অভ্যাসও নয়। এটির নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞান

গেরুয়া রং বলতে দেশের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি আরও একটি বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট লক্ষ্য হয়। প্রধানত ধর্মীয় এবং পৌরাণিক তাৎপর্য যুক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় এই রংকে। এক সময় এদেশে প্রচলিত ছিল বর্ণাশ্রম প্রথা। কালের গহ্বরে সেই প্রথা এখন প্রায় অস্তমিত। এই প্রথারই শেষ পর্যায় ছিল সন্ন্যাস। অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সের অন্তিম আস্তানা। সন্যাস এখন আর বাধ্যতামূলক নয় ঠিকই, তবে ভারতীয় দেয় স্মৃতিতে এ প্রথা আজও স্পষ্ট। এখনও বহুজন সন্যাসী রয়েছেন। একান্তই ব্যক্তিগত ইচ্ছেয় যাঁরা এই পথ বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু সন্ন্যাস এই প্রথার সঙ্গে যে অচিরেই মিলেমিশে গিয়েছে একটি রং, গেরুয়া। এটির আসল কারণ কী? কেবল কি একটি বিয়ে আনা প্রথা নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও যুক্তিও?

সাধারণত গেরুয়া রংটি আমরা আধ্যাত্মিক চোখেই দেখে থাকি। রংটি হিন্দু পুরাণের দুটি শুভ জিনিসের সাথে অনুরণিত হয়। তা হল সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের রঙ এবং আগুনের রং। পুরাণ মতে, সূর্য এবং আগুন এই দুটিই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা উল্লেখযোগ্য শক্তি রুপায়ক। কিন্তু আধুনিক সময় দাঁড়িয়ে কেবল পুরাণের উপর ভিত্তি করে জীবন চলে না তার সঙ্গে অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় বিজ্ঞানও। আপনি কি জানেন শুধু ধর্ম নয় সাধুদের গেরুয়া পোশাক পরার পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণও আছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন, সাইকো নিউরোবিক্স বিশেষজ্ঞ ডক্টর বি কে চন্দ্রশেখর। তাঁর মতে, সাতটি প্রাথমিক রং আমাদের শরীরের সাতটি চক্রের সাথে যুক্ত। এগুলি হল- লাল, গেরুয়া বা কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল এবং বেগুনি। প্রতিটি রঙেরই রয়েছে ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য। যখন আমরা কোনও রঙের দিকে তাকাই, তখন সেই রংগুলি প্রত্যেকেই নিজের নিজের বৈশিষ্ট্য মেনে আমাদের মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এটিকেই বলে কালার ভাইব্রেশন থেরাপি।

আরও পড়ুন - নাগা সন্ন্যাসী কারা! রহস্যে ভরা এদের সাধনার পদ্ধতি জানলে শিউরে উঠতে হয়

কী এই কালার ভাইব্রেশন থেরাপি?

যখন আমরা একটি রং দেখি, তখন এটি আমাদের রেটিনায় একটি চিত্র তৈরি করে যা বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয় এবং তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কে নির্দেশ পাঠায়। চোখের অপটিক নার্ভ এটিকে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করে। প্রতিটি রংই আমাদের মস্তিষ্কে আলাদা আলাদা কম্পন তৈরি করে। এবং এই কম্পন থেকেই মানসিক প্রভাব বিস্তার হতে পারে মনে করেন তিনি।

গেরুয়া রংকে এমনিতেই আমরা ত্যাগ ও সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে জেনে থাকি। পাশাপাশি ডাঃ চন্দ্রশেখর ব্যাখ্যা থেকে জানা যায়, এই রঙের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে কম্পন তৈরি হয় তা একজনের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। মানুষের কোলন, মূত্রাশয়, কিডনি, প্রজনন ব্যবস্থা এবং মূত্রথলি জনিত বিভিন্ন ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই রং।

যদিও বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন কমলা আনন্দের রঙ কারণ এটি লাল এবং হলুদের সংমিশ্রণ। কিন্তু বিশ্বাস যাই হোক এই রঙের যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও যথেষ্ট রয়েছে তা জন যায় চিকিৎসকের ব্যাখ্যা থেকেই। গেরুয়া রঙের উপর মনোনিবেশ করা একজনের জীবনে মানসিক এবং শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই একাধিক উপকার করতে পারে এটি। এমনকী ক্লান্তি দুর করতেও সহায়তা করে।

সুতরাং সাধুদের পোশাকের এহেন রং কেবল একটা মিথ নয়, নয় বেড়ানো অভ্যাসও নয়। এটির নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞান। আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় ব্যাখ্যার পাশাপাশি একজন সাধুর প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং আকর্ষণ জোরালো করতেও সাহায্য করে পরনের ওই গেরুয়া বসনটিই।

More Articles