GBS সংক্রমণ: কেন পনির, মাংস, দুধ নিয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা?

GBS Symptoms and Precautions: গুইলেন-বারে সিনড্রোমের গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে কথা বলার এবং গিলতে পারার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে।

রোগটি বিরল। বিরল বলেই আগে থেকে সতর্ক হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাও বহুগুণ বেশি। বছরের গোড়াতেই বিপদ বাড়াচ্ছে গুইলেন-বারে সিনড্রোম বা জিবিএস। সংক্রমণের সাম্প্রতিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আক্রান্ত শতাধিক। একজনের মৃত্যুও হয়েছে। জিবিএস একটি বিরল স্নায়বিক রোগ। এই অবস্থায় আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজেই দেহের পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এটি মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের বাইরে স্নায়ুতন্ত্রের অংশ। মূলত রোগটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণেই ঘটে, বিশেষ করে ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর জেজুনি ব্যাকটেরিয়াটি হচ্ছে এর মূলে। আর এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ভালো করে রান্না না করা পোল্ট্রি এবং কাঁচা দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া যায়। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এবার তাই খাবার-দাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে খাওয়ার আগে চাল, পনীর এবং চিজের মতো খাবারগুলি ভালোভাবে ধুয়ে, সঠিকভাবে রান্না করা উচিত।

আক্রান্তদের মধ্যে ৭৩ জন পুরুষ এবং ৩৭ জন মহিলা। ১৩ জন রোগী ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন। পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (পিএমসি) অধীনে ২৩,০১৭টি বাড়ি সহ মোট ৩৫,০৬৮টি বাড়িতে সমীক্ষা করা হয়েছে৷ ৪৪ জনের মলের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৪টি নমুনায় নরোভাইরাস এবং ৫টি নমুনায় ক্যাম্পাইলোব্যাক্টার পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন- ডায়রিয়া থেকে সোজা পক্ষাঘাত! কতটা ভয়াবহ এই রহস্যময় রোগ জিবিএস?

GBS-এর লক্ষণ

গুরুতর ক্ষেত্রে GBS-এর ফলে দুর্বলতা, গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো সংবেদনশীলতা এবং পক্ষাঘাতের লক্ষণগুলি দেখা দেবে। লক্ষণগুলি সাধারণত পা দিয়ে শুরু হবে এবং শরীরের উপরের অংশে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়বে। এর আগে বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া এবং স্নায়বিক নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

অনেকের কোমরে বা বাহুতে বা পায়ে ব্যথা হয়। অনেকের ক্ষেত্রেই এই লক্ষণগুলির কারণে পা, বাহু বা মুখের পেশীগুলিতে পক্ষাঘাত হতে পারে। আনুমানিক এক তৃতীয়াংশ মানুষের বুকের পেশি প্রভাবিত হয়, যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গুইলেন-বারে সিনড্রোমের গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে কথা বলার এবং গিলতে পারার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন কারণ তাড়াতাড়ি চিকিৎসা হলে সেরে ওঠার সম্ভাবনাও বেশি হয়।

আরও পড়ুন- মস্তিষ্ক কুড়ে খাচ্ছে অ্যামিবা, পর পর মৃত্যু! ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ঘিরে আতঙ্ক

প্রতিরোধ কীভাবে?

সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে খাওয়ার আগে খাবার পরিষ্কার করা এবং ভালো করে রান্না করা অপরিহার্য।

১. এই অবস্থায় কাঁচা দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলাই উচিত কারণ তাতে ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।

২. খাবার সঠিকভাবে রান্না করতে হবে, অন্তত ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় খাবার গরম করা হলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যায়।

৩. পোল্ট্রি এবং দুগ্ধজাত খাবার স্পর্শ করার আগে এবং পরে হাত সাবান এবং জল দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে।

৪. কাঁচা মাংস এবং অন্যান্য এই জাতীয় খাবারের জন্য আলাদা ছুরি বা বঁটি এবং পাত্র ব্যবহার করে, ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করে দূষণ ছড়িয়ে পড়া এড়ানো সম্ভব।

৫. রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ফুটনো জল বা বোতলজাত পরিশ্রুত জল খেয়ে সংক্রমণ এড়ানো যায়। ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে, হাঁস-মুরগি এবং অন্য মাংস সঠিকভাবে রান্না করে খেতে হবে। কাঁচা বা কম রান্না করা খাবার, বিশেষ করে স্যালাড, ডিম, কাবাব বা সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

৬. বারেবারে সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া দরকার। মুখ, বিশেষ করে চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলতে হবে।

৭. ফলমূল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য দরকার। দরকার পর্যাপ্ত জল খাওয়া।

৮. প্রাথমিক লক্ষণ যেমন দুর্বলতা, অসাড়তা বা খিঁচুনিকে ছোটখাটো সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যাবেন না।

More Articles