'পারমিশনের' ধার ধারে না! আপনার সবকিছু কীভাবে দেখছে গুগল?
Google Location Data Tracking: Google ৯৩ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেবে। ভারতীয় মুদ্রায় টাকার অঙ্কটা প্রায় ৭,০০০ কোটি
বন্ধুর সঙ্গে বিরিয়ানির গল্প করছেন, দেখা গেল স্যুইগি থেকে বিরিয়ানির লোভনীয় সব অফার আসতে থাকল আপনার মোবাইলে। কয়েকবার হয়তো দাঁতের ডাক্তারের কথা বলেছেন কাউকে, সেরা হাসপাতালের দাঁতের ডাক্তারের বিজ্ঞাপন আসতে থাকল ফেসবুকে। আমাদের কথাবার্তা, ছবি, তথ্য এবং অবস্থান কিছুই কেবল আমাদের নয়। আমরা এক বিপুল তথ্যভাণ্ডার, যা দিয়ে আমরাই আবার তৈরি করেছি এক তথ্যবিশ্ব। আর আমাদের খুব নির্ভরযোগ্য সার্চ ইঞ্জিন Google সবসময়ই আমাদের 'লোকেশন' জানে। আমাদের অবস্থান কোথায়, তা অ্যাক্সেসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের নজরে রাখে গুগল। গুগল বলে, মানচিত্র এবং অবস্থান-ভিত্তিক পরিষেবাগুলি আরও উন্নত করতে, নতুন পণ্য এবং পরিষেবা আনতে, আরও প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্যই এই লোকেশন অ্যাক্সেস করা হয়। সেই জন্যই যা কিনবেন ভাবছেন তার বিজ্ঞাপন দেখতে পান। গুগল বিভিন্ন কারণে তার ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে। আপনি যদি প্রবল বিদ্রোহী হন, বলবেন আপনার তথ্য, অবস্থান আপনি গুগলকে দেবেন না। তাই আপনি লোকেশন বন্ধ করে রাখবেন, পারমিশন সেটিংসে সব বন্ধ করে রাখবেন। গুগল এত বোকা নয়। গুগল আপনার পারমিশনের অপেক্ষাও করে না।
গুগলের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি সাম্প্রতিক মামলায় অভিযোগ উঠেছে, গুগল কোম্পানি না জানিয়েই উপভোক্তাদের অবস্থান ট্র্যাক করেছে। সেই সমস্ত তথ্য আপনার অনুমতি ছাড়াই চলে যাচ্ছে গুগলের কাছে। এই মামলার মীমাংসায় Google ৯৩ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেবে। ভারতীয় মুদ্রায় টাকার অঙ্কটা প্রায় ৭,০০০ কোটি, জানাচ্ছে দ্য গার্ডিয়ান।
আরও পড়ুন- ওদের কাছে গুগল-ই ঈশ্বর, যে ভাবে চলছে সাধনা…
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা একটি মামলা দায়ের করেছিলেন গুগলের বিরুদ্ধে। রব অভিযোগ করেন, ব্যবহারকারীদের হাতে বেশি লাগাম রয়েছে বা ব্যবহারকারীরা না চাইলে গুগল কোনওভাবেই তাঁদের তথ্য নিতে পারবে না বলে যে দাবিটি করে, তা আদ্যন্ত ঢপবাজি! মিথ্যা বলে গ্রাহকদের প্রতারিত করেছে গুগল। টেক জায়ান্ট গুগলের ডেটা হ্যান্ডলিং নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত চলে। সেই তদন্তের ফল হিসেবেই এই ব্যাপক জরিমানা।
রব বন্টা বলছেন, তদন্তে দেখা গেছে গুগল তার ব্যবহারকারীদের বলে, তাঁরা পারমিশন সেটিংস অফ করে রাখলে ফোন তাদের লোকেশন আর ট্র্যাক করবে না। বাস্তবে এটা মোটেও এমন না। নিজস্ব বাণিজ্যিক লাভের জন্য ব্যবহারকারীদের গতিবিধি 'পারমিশন' না দিলেও ট্র্যাক করে গুগল। গুগল যা দাবি করে এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের বিপরীত দাবি, এই দুইয়ের মাঝেই চরম জলঘোলা হয় গুগলের অন্দরে। গুগল ব্যবহারকারীদের 'লোকেশন হিস্টরি' ডিসএবল করে রাখার সুযোগ দেয়। আপনি কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করলেই জিজ্ঞেস করা হয় আপনি আপনার ছবি, লোকেশন, মাইক এসবের অ্যাক্সেস দিতে চান কিনা। আপনি নিজেকে খুবই বিচক্ষণ ভেবে তা অফ করে দেন, ভাবেন গুগল আপনাকে দেখছে না আর। আসলটা এমন নয়। আপনি ওই পারমিশন দিলেন, কী দিলেন না তার উপর কিছু নির্ভরই করে না। অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, Google ব্যবহারকারীর 'ওয়েব অ্যন্ড অ্যাপ অ্যাক্টিভিটি' ট্র্যাকারের মতো অন্যান্য উত্স থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ফোনে চালু থাকে৷
আরও পড়ুন- অমরত্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়! যে আশ্চর্য ভবিষ্যতের কথা শোনালেন গুগলের বিজ্ঞানী
Google অবশ্য অভিযোগগুলি স্বীকার করেনি। তবে এই মামলার নিষ্পত্তি করতে ৯৩ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অতিরিক্ত বাধ্যবাধকতাও মেনে নিয়েছে। লোকেশন ট্র্যাকিং বিষয়ে স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত বিজ্ঞাপনী প্রোফাইল তৈরি করতে লোকেশন ডেটা ব্যবহার করার আগে ব্যবহারকারীদের আগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া এবং গোপনীয়তা-সম্পর্কিত কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বাস্তবায়িত করার আগে Google-এর ইন্টারনাল প্রাইভেসি ওয়ার্কিং গ্রুপ থেকে অনুমোদন চাইতে হবে।
গুগলই যে একমাত্র সম্মতি ছাড়াই ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করে তা নয়। আমাদের প্রাণের শান্তি মনের আরাম, সবেধন নীলমণি ফেসবুকের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আছে। এই বছরের শুরুর দিকেই মার্ক জুকারবার্গের নেতৃত্বে চলা মেটার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে। ইউরোপিয় ইউনিয়নের তথ্য সুরক্ষা বিধি লঙ্ঘনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ রায় দেওয়া হয়।১.২ বিলিয়ন ইউরো জরিমানা দিয়েছিল মেটা এবং ইউরোপের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংগৃহীত তথ্য স্থানান্তর বন্ধ করার আদেশও দেওয়া হয়েছিল।