শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ঘরে বসে সহজ আয়! জেনে নিন কোথায় বেশি লাভ, কোথায় ক্ষতি?
Share Market: দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা ঘরে তুলতে ভারতের কোন কোন সংস্থাগুলিতে লগ্নি করা লাভজনক? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা?
সম্প্রতি দু'বার শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। একবার বুথ-ফেরত সমীক্ষা ফেল হওয়ার পর, আরেকবার বাজেটে। দু'বারই লগ্নিকারীরা বড় মাপের পতন দেখেছেন। ফলে বাজার অনিশ্চিত বলে মুনাফা হলেই শেয়ার তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা ঘরে তুলতে ভারতের কোন কোন সংস্থাগুলিতে লগ্নি করা লাভজনক? যেসব লগ্নিকারীরা ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁদের ভরসাই বা দিতে পারে ভারতের কোন কোন সংস্থা? জেনে নিন কোন সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগকারীরদের দীর্ঘ মেয়াদে কম ঝুঁকিতে রিটার্ন পাওয়ার সম্ভবনা আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে লার্জ ক্যাপ কোম্পানিগুলি। যাদের মূলধন বা ক্যাপিটালের অঙ্ক বেশ চড়ার দিকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সেই সংস্থাগুলিতেই বিনিয়োগ করা স্রেয়, যাদের মোট পুঁজির পরিমাণ ৫০,০০০ কোটি টাকার উপরে। সেই তালিকায় থাকছে—
রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ
রিলায়্যান্সের লক্ষ্য ডিজিটাল ও খুচরো ব্যবসায় উন্নতি করা। সংস্থাটি লগ্নিকারীদের জন্য বিনিয়োগকে আরও সরলিকরণ করেছে। এটি পেট্রোকেমিক্যাল, টেলিকম, অপ্রচলিত বিদুৎ, রিটেল সহ নানা কিছুর সমষ্টির (কংগ্লোমারেট) সংস্থা।
সংস্থার মোট পুঁজি : ১৭,৪৩,৭৯১ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে : ৭,৯২,৭৫৬ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে : ৬৭,৮৪৫ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ১.১%
আরও পড়ুন: Railway Share: রেলের শেয়ার এখন কেনা ঠিক হবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিস (টিসিএস)
দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিস (টিসিএস)। এই সংস্থাটি বিশ্ব দরবারে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা হিসেবে নজির গড়েছে।
সংস্থার মোট পুঁজি : ১২,৩৪,৮১৯ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে : ১,৯১,৭৫৪ কোটি টাকার
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে : ৩৮,৩২৭ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ১.২%
৩. হিন্দুস্তান ইউনিলিভার (এফএমসিজি)
এফএমসিজি সেক্টরে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি হিন্দুস্তান ইউনিলিভার। এই কোম্পানির পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে পানীয়, সাবান, সার্ফ, শ্যাম্পু-সহ একাধিক জিনিস। এই পণ্যগুলির জন্য সংস্থাটি বাজারে স্থায়ী ক্রেতা তৈরি করতে পেরেছে।
সংস্থার মোট পুঁজি : ৬,৪৩,৮১৯ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে (নেট সেল) : ৪৫,৮৮৭ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে : ₹৭,৯৫৪ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ২.২%
নেসলে ইন্ডিয়া (এফএমসিজি)
দেশের পানীয় এবং খাদ্যপন্য প্রস্তুতকারী প্রথমসারির সংস্থা নেসলে ইন্ডিয়া। সংস্থাটি ম্যাগি, কফি, বিভিন্ন চকলেট ও দুগ্ধ পণ্য-সহ নানা জিনিসপত্র উৎপাদন করে।
সংস্থার মোট পুঁজি : ১,৮১,২৭৪ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে (নেট সেল) : ১৬,৭৯০ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে (নেট প্রফিট) : ২,২৫৪ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ১.৫%
মারুতি সুজুকি (অটোমোটিভ)
মারুতি সুজুকি ভারতের সবচেয়ে বৃহত্তম অটোমোটিভ প্রস্তুতকারী কোম্পানি। দেশের এই বৃহত্তম অটোমোবাইল নির্মাতা সংস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হল - ক্রেতাদের স্বল্পমূল্যে ভাল গাড়ি কেনার সুযোগ করে দেয়। তাই গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রেতাদের অন্যতম পছন্দ হল মারুতি সুজুকির গাড়ি।
সংস্থার মোট পুঁজি : ২,৭১,৯৪৭ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে (নেট সেল) : ৯০,৯৭০ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে : ৩,৭৬৬ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ০.৮%
এর পরে আসা যাক মিড ক্যাপ কোম্পানিগুলির কথায়। যাঁদের মোট পুঁজি ১০,০০০ - ৫০,০০০ কোটি টাকার মধ্যে। তার মধ্যে বিনিয়োগ করতে পারেন এই সব সংস্থাগুলিতে—
কোল ইন্ডিয়া (মাইনিং)
কোল ইন্ডিয়া দেশের বৃহত্তম কয়লা খনি। এই কোম্পানি কাজে স্বচ্ছতা আনতে প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দেয়।
সংস্থার মোট পুঁজি : ১,১৬,৭১২ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে (নেট সেল) : ১,২৫,২৯৪ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে : ১৭,৪৬২ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ১০.২%
সিডিএসএল (সেন্ট্রাল ডিপোজিট সার্ভিসেস লিমিটেড)
সিডিএসএল ভারতের প্রথমসারির ডিপোজিটারি। এটি একটি ইলেকট্রনিক ফার্ম। সেন্ট্রাল ডিপোজিট সার্ভিসেসের পরিষেবার পদ্ধতি আর্থিক খাতে উন্নতি করতে সাহায্য করে।
সংস্থার মোট পুঁজি : ১২,৫৮৪ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে (নেট সেল) : ৪৫৯ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে : ২৫৩ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ১.৪%
টেক মাহিন্দ্রা (আইটি)
টেক মাহিন্দ্রা একটি বিখ্যাত আইটি সেক্টর। এই সংস্থার লক্ষ্য - উন্নত প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল সলিউশন-সহ বিভিন্ন ভাবে আইটি সেক্টরে উন্নতি করা।
সংস্থার মোট পুঁজি : ৩৪,৮১৯ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির বিক্রয় হয়েছে (নেট সেল) : ৪৩,৬৫৩ কোটি টাকা
২০২২ সালে সংস্থাটির লাভ হয়েছে : ৫,৪৪১ কোটি টাকা
সংস্থাটি ডিভিডেন্ড দেয় : ১.৩%
এশিয়ান পেইন্টস
এশিয়ান পেইন্টস ভারতের প্রথম সারির পেইন্টস প্রস্তুতকারী কোম্পানি। সেরা মানের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে, প্রশিক্ষিত পেইন্টারদের সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনে, বিভিন্ন উন্নতমানের যন্ত্রের সাহায্যে 'এশিয়ান পেইন্টস'-এ রং তৈরি করা হয়। এর জন্যে এশিয়ান পেইন্টস খরচ সাপেক্ষ হলেও ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সংস্থার মোট পুঁজি : ২,৮৩,৮১৯ কোটি টাকা
আরও পড়ুন:Nestle India: কেনা উচিত এই শেয়ার? কী বলছেন বিশ্লেষকরা?
এই লার্জ ক্যাপ এবং মিড ক্যাপ সংস্থাগুলি তাদের মজবুত আর্থিক কাঠামো এবং লগ্নিকারীদের ধারাবাহিক ভাবে লোভনীয় রিটার্ন দেওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংস্থাগুলিতে আর্থিক ঝুঁকি থাকলেও তাদের লগ্নিকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাই দীর্ঘ মেয়াদে কম ঝুঁকিতে নজরকাড়া রিটার্ন পেতে এই সংস্থাগুলিতে ভরসা রাখা যায় বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। তবে বাজারে কখন, কী চলছে তার খবরাখবর রাখতে হবে বিনিয়োগকারীদের। কাগজ বা ইন্টারনেটে বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির সম্ভবনা আরও কমবে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।