সারা গ্রাম জুড়ে বেজে ওঠে গিটার! বাংলার এই 'গিটার গ্রাম'-এর হদিশ জানেন না অনেকেই

Guitar Village of West Bengal: কাউগাছি গ্রামে মোটামুটি পাঁচ, ছয় রকমের গিটার তৈরি হয়। গিটার তৈরির জন্য অসম থেকে ঘোড়ানিম কাঠ আমদানি করা হয়।

শীতের কুয়াশা, সন্ধের আবছায়া গলি, সাইকেলে, হেঁটে পেরিয়ে আসছে স্কুল কলেজের সদ্য তরুণ-তরুণী হওয়া চরিত্ররা। কাঁধের ব্যাগের মাথা অনেকটা উঁচিয়ে আছে আকাশের দিকে। ব্যাগের ভেতর ৬ তারের স্বপ্ন। একদিন স্বপ্নের মাথাও আকাশ ছোঁয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে নিজস্ব নিভৃতির বন্ধু হয়ে ওঠে গিটার। কলেজের ক্যান্টিন, বন্ধুদের আড্ডা পেরিয়ে যারা অফিসের ছোট্ট খোপে ঢুকে বিকেল দেখতে ভুলে যাচ্ছে, তাঁদেরও রাত্রিকালীন সখা হয়ে উঠছে এই যন্ত্র। শুধুই যন্ত্র নয়, গিটার আবেগের ডাক নাম হয়ে উঠেছে। বিশ্বজুড়েই তাই যে কোনও আড্ডা, অনুষ্ঠানের সঙ্গে অবশ্যই জুড়ে থাকে গিটার। গিটারের জনপ্রিয়তা নিয়ে খবরাখবর রাখলেও অনেকেই চেনেন না বাংলার 'গিটার গ্রাম'কে।

এই বঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায় অবস্থিত, চণ্ডীতলা কাউগাছি গ্রামটিতে গেলেই সারাক্ষণ মিলবে গিটারের শব্দ। গিটার বাজানোর নয়, গিটার তৈরির। এই কাউগাছি গ্রামটি বাংলার গিটার তৈরির একটি প্রধান কেন্দ্র। এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গিটার তৈরি হয়। শ্যামনগর এলাকার এই গ্রামে বেশ কয়েকটি গিটার কারখানা রয়েছে। রাস্তার যেদিকেই তাকান না কেন, শুধু গিটারের খোলনলচে ঝুলতে দেখা যায়।

আগে দমদম এলাকার কারখানায় বেশিরভাগ গিটার তৈরি হতো। গ্রামে সাধারণত গিটার আঁকা এবং পালিশ করাই হতো। আস্তে আস্তে গিটার তৈরির শ্রমিকরা নিজেরাই গিটার বানাতে শেখেন। কিন্তু গ্রামের বাকিদের তো কোনও ধারণাই নেই এই বাদ্যযন্ত্র সম্বন্ধে! একজনের থেকে আরেকজন শেখেন। তিনি অন্যদের শেখান। ধীরে ধীরে দেখা যায় গোটা গ্রামটাই গিটার তৈরি করতে শুরু করে দেয়। এখানকার তৈরি গিটার যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই বিক্রি করা হয় তা নয়, বিদেশেও গিটার পাঠানো হয় এখান থেকে, নিয়মিত। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটানের মতো দেশে এই গ্রামের গিটারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শ্রমিকদের বংশ পরম্পরাতেও গিটার তৈরির ধারা বহমান।

আরও পড়ুন- হাড়হিম করা সঙ্গীত! কাকার হাড়গোড় দিয়ে মেটাল গিটার তৈরি করলেন ইউটিউবার!

এই কাউগাছি গ্রামে মোটামুটি পাঁচ, ছয় রকমের গিটার তৈরি হয়। গিটার তৈরির জন্য অসম থেকে ঘোড়ানিম কাঠ আমদানি করা হয়। গিটার তৈরির প্রথম ধাপই হলো যন্ত্রের গলা তৈরি। এই লম্বা গলা যার সামনের অংশটাকে বলে ফ্রেটবোর্ড, সেই গলা সঠিক আকারে, সঠিক মাপে কাটা হয়ে গেলে ফিটিং করা হয়। গিটারের মূল জায়গাটা, মানে মধ্যিখানের জায়গাটি তৈরি হয় অন্য জায়গায়। তাপর জোড়া হয় দু'টি। গিটারের বডি তৈরির পাতলা কাঠের টুকরো দুই পাশেই আঠা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়। তারপর স্ক্রু দিয়ে ভালো করে তা ফিট করে শুকোতে দেওয়া হয় রোদ্দুরে। এরপর শরীরের সঙ্গে গলা জোড়ার কঠিন কাজের পালা আসে। পুরোটা হয়ে গেলে পালিশ করা হয়। তারপর আসে আসল খেলা! গিটারে সুর জোড়ার পালা। স্ট্রিং ফিটিং করা হলে সম্পূর্ণ গিটার তৈরি।

কাজের খোঁজে আগে বাইরে যেতে হতো অনেককেই। গিটার তৈরির হাব হয়ে ওঠার পর এখন যুব সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা যায় কাউগাছি গ্রামের এই শিল্পে। আয়ও নেহাত মন্দ হয় না। আস্ত গ্রামটাই তাই হয়ে উঠেছে গিটারের আঁতুড়ঘর।

More Articles