গুমনামি বাবাই তবে নেতাজি? গবেষকের আবেদনে কেন্দ্রের জবাবে তোলপাড়
Gumnami Baba Netaji: রিপোর্ট চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, রিপোর্ট একটি পরীক্ষাগারে রাখা রয়েছে কিন্তু সেটি প্রকাশ করা যাবে না।
গুমনামি বাবা! ফের শিরোনামে তিনিই। কারণ, তিনিই আসলে নেতাজি! কেন্দ্রের দেওয়া বিস্ফোরক এক বয়ানে ফের জোরদার এই তত্ত্বই! আর সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে গুমনামি বাবাই যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, একথা বলছেন নেতাজি গবেষক সায়ক সেনও। কারণ, নেতাজি; এক নিষিদ্ধ সত্য গ্রন্থের লেখকের করা এক আবেদনের ভিত্তিতেই ওই বিস্ফোরক জবাব দিয়েছে কেন্দ্র।
১৯৫১-৫২ থেকে ১৯৮৫। ভারতে প্রশ্নের পাহাড় তৈরি হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। উত্তরপ্রদেশের ভগবানজি থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের গুমনামি! তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে কথকতা। দানা বেঁধেছে রহস্য। প্রতিমুহূর্তে প্রশ্ন উঠেছে, তিনিই কি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু? এবার একটি রিপোর্ট এবং ওই সংক্রান্ত একটি বয়ান শোরগোল ফেলল ফের। আর সেই প্রসঙ্গেই একাধিক তথ্য এবং সাম্প্রতিক রিপোর্ট তুলে ধরে গুমনামি বাবা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন সায়ক সেন, যিনি এই আরটিআইয়ের (RTI) আবেদনকারী।
কী কারণে এই উদ্যোগ? কেন আরটিআই করলেন? ঠিক কী দাবি করছিলেন আপনি?
জানুয়ারি, ২০২০। করোনাকালের মধ্যেই আমি একটি আরটিআই ফাইল করি। কারণ, নেতাজি রহস্যের সমাধান। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কেন্দ্রকে জানাই, গুমনামি বাবার ডিএনএ পরীক্ষার ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট জানতে চাই। যেটা সহজ ভাষায় ডাটা চার্টের মতো।
ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট আসলে কী?
এটি ডিএনএ পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি বিষয়। অর্থাৎ পরীক্ষা পদ্ধতির বিস্তারিত ডাটা। একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য যা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়।
কেন জানতে চাইছিলেন?
যখন গুমনামি বাবা মারা গেলেন, বিতর্ক শুরু হয়। তাঁর ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু কলকাতার পরীক্ষাগার থেকে বলা হয় নেতাজির সঙ্গে মিলছে না ওই স্যাম্পল। আবার হায়দরাবাদের পরীক্ষাগারে জানানো হয়, এই তথ্য অমীমাংসিত। অর্থাৎ এর কোনও সঠিক ফলাফলে আসা যাবে না যে গুমনামি বাবা নেতাজি নন!
তারপর?
ঠিক এই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে একজন নেতাজি গবেষক হিসেবে এই তথ্য আমি জানতে চাই। যে রিপোর্ট দেখাতে বলি, সেটি পুরো পরীক্ষার ক্ষেত্রকে ফাঁস করতে পারত।
তাহলে কেন পেলেন না?
প্রথমে ওই আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে বলা হয়, নির্দিষ্ট ওই রিপোর্ট কোথায় আছে কেউ জানেন না! কিন্তু কিছুদিন পরেই ফের বলা হয়, অতিরিক্ত সন্ধানের পরে পাওয়া গিয়েছে রিপোর্ট।
আরও পড়ুন- বিজেপির গান্ধী-মুক্ত ভারতের কৌশল না কি মোদি আমলেই যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন নেতাজি!
তাহলে?
কিন্তু চূড়ান্ত যে জবাব কেন্দ্র দিল, তা আরও রহস্যের।
রহস্য কেন বলছেন?
ওই রিপোর্ট চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, রিপোর্ট একটি পরীক্ষাগারে রাখা রয়েছে কিন্তু সেটি প্রকাশ করা যাবে না।
কেন প্রকাশ করা যাবে না?
কেন্দ্র বলছে, আরটিআই আইন ২০০৫ অনুযায়ী, ধারা ৮ এর এ এবং ই, ১১ এর ১ অনুযায়ী এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা যাবে না। যা মারাত্মক!
কেন বলছেন একথা?
আসলে ওই ধারা অনুযায়ী, ওই রিপোর্ট যদি প্রকাশ হয় তাহলে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র-সম্পর্কেও আসতে পারে সমস্যা। দেশে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ এসবের কথা চিন্তা করে প্রকাশ করা যাবে না তা।
তাহলে কি আপনাদের বলা কথা অনুযায়ী, গুমনামি বাবা আর কেউ নন খোদ নেতাজি?
শুধু জনশ্রুতি নয়। আপনি যদি দেখেন, বহু প্রমাণ কিন্তু তাই বলছে। অর্থাৎ শুধু এই রিপোর্ট প্রকাশ করতে আপত্তি দিয়েই নয়, একাধিকবার একাধিক ক্ষেত্রে বারবার এটাই প্রমাণিত যে তিনিই আসলে নেতাজি!
মুখোপাধ্যায় কমিশন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫। দীর্ঘদিন তদন্ত হল। আবার স্বাধীনতার পর থেকে এতগুলো বছর কেটে গেল, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলেন না?
না। পারলেন না। পারলেও জানলেন, কিন্তু জানালেন না! গুমনামি বাবার ক্ষেত্রে বহু তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এই ডিএনএ রিপোর্ট সংক্রান্ত বিস্তারিত কিছু চেষ্টা করেও পায়নি কমিশন। তাঁদের দেওয়া হয়নি। তাই, অনেক কিছুই বলে যাওয়া হয়নি তাঁদের!
তাহলে আপনি নিশ্চিত, গুমনামি বাবা নেতাজি?
আমি কেন! আপনি তথ্যপ্রমাণ মেলান, উত্তর হ্যাঁ হবে হয়তো।
কেন এত নিশ্চিত হচ্ছেন, কীভাবে?
দেখুন, আপনি যদি দিনের পর দিন গুমনামি বাবার আচার-আচরণ নিয়ে গবেষণা করেন। তথ্য দেখেন, তাহলেই বুঝবেন।
কীভাবে?
তাঁর হাতের লেখা আর নেতাজির হাতের লেখা। দিনের পর দিন একাধিক ভাষায় কীভাবে এ সম্ভব! কীভাবে একজন বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া মানুষের সঙ্গে মিলে যায় আর একজনের হাতের লেখা। এ নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে, প্রমাণ তো করা যায়নি যে দু’জনের হাতের লেখায় মিল নেই!
আর?
ওই সময়ের কিছু চিঠি। গুমনামি বাবা এবং বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছে। সেটা কেন? কেন তাঁরা একজন সন্ন্যাসীর সঙ্গে এত কথায় যাবেন!
এটা দিয়েই নিশ্চিত হওয়া যায়?
এই যে আরটিআই রিপোর্ট! সেটা কী বলল! রিপোর্ট প্রকাশ হলে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। কেন্দ্র সরকার বলছে। কেন? কী কারণে এই জিনিস বলা হচ্ছে!
গুমনামি বাবা নাকি বিভিন্ন আলোচনায় পারদর্শী ছিলেন?
তাঁর পোশাক, ব্যবহৃত জিনিস কিন্তু রহস্যের জন্ম দিয়েছিল। চিনের একটি অজানা নগর, যা আমরা ২০০০ সালে জানছি, তিনি অনেক বছর আগেই হুবহু জানাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে। কীভাবে?
একজন নেতাজি গবেষক হিসেবে কী মনে করেন, কেন এই রহস্য এখনও অন্ধকারে রেখে দেওয়া হয়?
ভারতের স্বাধীনতা এসেছে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে, এটাই বোঝানো হয় বারবার। এই যে একটা ধারণা, একটা অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা যদি আচমকা বদলে যায়, জানা যায়, প্রমাণ হয় নেতাজির সহিংস আন্দোলনে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাতে অনেক দিক থেকেই ক্ষতি! তাহলে কি অনেকের ভালো লাগবে? তাই এই অবস্থান।
আরও পড়ুন- গুমনামি বাবা-ই কি আসলে নেতাজি?
নেতাজির তথ্য প্রকাশ পেলে কি তৎকালীন কেন্দ্র সরকার, ক্ষমতায় থাকা কারও কারও সমস্যা বেড়ে যেত?
প্রকাশ পেলে সমস্যা বাড়বে। যেখানে এই প্রসঙ্গকে বারবার বিলুপ্তির পথে এগিয়ে দিতে চাইছে সরকার সেখানে দাঁড়িয়ে এর উদঘাটন তো স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি বাড়াবে তাঁদের।
সেই সময়ে রটেছিল তিনিই নেতাজি! কিন্তু দেখা গেল, নেতাজির পরিবার প্রায় চুপ। সেইভাবে এগিয়ে যাওয়া হয়নি কেন?
সেই একটা ধারণা তৈরি করে রাখার চেষ্টা। আর তাঁর পরিবার নিয়ে কিছু বলব না।
রহস্য জিইয়ে রাখা, এর কারণ এই প্রেক্ষাপটে কী থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
নেতাজির মহানতা প্রকাশ পেলে গান্ধীর ইমেজে ক্ষত তৈরি হবে। তাহলে কেন তাঁকে আনব! আসল সত্যিটা লোককে কেন বলব! এই ভাবনা থেকেই এসব, নেতাজি এল আর বাকিরা গেল।
নেতাজি আর কংগ্রেস। বিতর্ক ছিল। কিন্তু নেতাজি এবং বিজেপি? প্রকাশে তো সমস্যা নেই, তাহলে এই লুকোচুরি কেন?
কংগ্রেস এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি চাপে। তাড়াতাড়ি এই প্রসঙ্গ শেষ করার পক্ষে। কিন্তু বিজেপি তুলনায় কম। তবে সরকার তো! কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলে নানা অস্বস্তি সরিয়ে রেখে ইন্ধন দিতে থাকেন কেউ কেউ।
তারমানে গুমনামি মানেই নেতাজি?
আমি বলছি না, একাধিক তথ্যপ্রমাণ বলছে একথা।