কামসূত্রেও যা নেই! পাড়াগাঁয়ের লুকোচুরি যেভাবে শেখায় শিরশিরে যৌনতার সহজপাঠ
Sexuality: বয়ঃসন্ধির শরীরে শিরশিরে ব্যথা নিয়ে এ ওকে স্পর্শ করে দেখছে, বুঝতে চাইছে আদিম রহস্যগুলি।
পাড়াগ্রামের যৌনতার কথা বললেও, যৌনতার প্র্যাকটিস বিষয়ে বিশদে আলোচনা করা হয়নি। যৌনক্ষেত্রগুলি রচনা হতো সব লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, গাছগাছালি খেলা খেলতে খেলতে।
আমাদের সবারই জানা, লুকোচুরিই ছিল নির্জনতম এক খেলা। একজন চোর হবে, অন্যরা লুকোবে পুরনো বাড়ির আনাচকানাচে, ঝোপের আড়ালে, গাছের পিছনে। দু'জন ছেলে-মেয়ে কাছাকাছি আসছে অথবা দু'জনের অধিক। বয়ঃসন্ধির শরীরে শিরশিরে ব্যথা নিয়ে এ ওকে স্পর্শ করে দেখছে, বুঝতে চাইছে আদিম রহস্যগুলি।
গাছগাছালি হলো গাছকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকার খেলা। ছোঁয়াছুঁয়ি স্পষ্টত স্পর্শের খেলা, একটু বড় হওয়ার পর ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে আর এই খেলা খেলতে পারত না।কিন্তু তার আগে অবধি খেলাধুলোতে ছেলেমেয়ের কোনও বিভেদ চোখে পড়ত না।ছোঁয়াছুঁয়ির আরেক নাম ছিল ধরাধরি, একই খেলা এইভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।
আরও পড়ুন: পেট ঢালাই হোক সিমেন্টবালিতে, ভাতের চিন্তা থাকে না! গ্রামবাংলার খিদের না-বলা গল্প
আজকাল এইসব খেলা চোখে পড়ে না। অথচ এই খেলাগুলির নির্মল আনন্দের পাশে পাশেই ছিল এমন শরীর চেনার তবক।
এইসব যৌনতা হারিয়ে গিয়ে ভালো হয়েছে না খারাপ, সে অনেক পরের কথা, আমি তুলে তুলে দেখাতে চাইছি, কীভাবে নির্জনতার ভেতরে একটি শরীর অপর শরীরের কাছাকাছি আসত, চিনে নিতে চাইত পরস্পরকে। শস্যখেত, দালানকোঠা কীভাবে আখড়া হতো আদরের, মেয়েলি ছেলেদের কীভাবে ব্যবহার করা হতো কাম চরিতার্থর জন্য।
বড়ো হয়ে পড়েছি, বাৎস্যায়নের কামসূত্রে চাররকম আলিঙ্গনের মধ্যে লতাবেষ্টিতক নামের একধরনের আলিঙ্গনের সন্ধান পাওয়া যায়। লতা যেমন করে সমর্থ গাছকে জড়িয়ে থাকে সমস্ত প্রাণ দিয়ে, একজন মানুষ অপরজনকে তেমন করে জড়িয়ে থাকবে আষ্টেপৃষ্টে। একজন নীরব ঠোঁট উঁচু করে নামিয়ে আনবে অন্যের ঠোঁটে। কিন্তু চান করার নামে অথবা কাঁকড়া ধরতে ধরতেই সবার সামনেই জলে ডুবে শরীরের গোপন অংশ স্পর্শ করে আসার গোপন পন্থার কথা, এইভাবে সবার সামনে থেকেও ছুঁয়ে আসার কথা কামসূত্রে নেই।
লিঙ্গ দেখে নির্ণয় করা যায় এই মানুষ খরগোশ, ষাঁড়, না কি অশ্ব পর্যায়ের। চৌষট্টি কলার নকশা ও কারুকাজে পূর্ণ হয়ে আছে বইয়ের পাতার পর পাতা।আলিঙ্গনের, চুম্বনের, মৈথুনের কত না কৌশল! কত কত নাম। সঙ্গম শেষ হলে আবার পাশাপাশি দু'জন বসে রাতের আকাশ দেখতে দেখতে সন্দেশ, রসগোল্লা-জাতীয় মিষ্টি খাইয়ে দেওয়ার রীতি আমার খুব পছন্দ। একপাশে কামসূত্র রেখে অন্যপাশে কিশোর বয়সের শিক্ষা মিলিয়ে মিলিয়ে দেখি।
কামদেবকে খুঁটিয়ে দেখলাম। বেশ সুদর্শন যুবক, টিকালো নাক, সরু কোমর, বিরাট বুক, চুল নীলচে ও কোঁকড়ানো। চোখ, মুখ, পায়ের নখ রক্তাভ। গায়ে বকুলের গন্ধ। হাতে আখ দিয়ে তৈরি ধনুক, ধনুকের গুণ মৌমাছি দিয়ে তৈরি। সুগন্ধি ফুল দিয়ে পাঁচরকম বাণ। অশোক, সাদা ও নীল পদ্ম, মল্লিকা ও আমের মঞ্জরী। ওই বাণের ঠেলাতেই মানুষ তো ছার, মহাদেব অবধি কুপোকাত হয়েছিল। কিশোরদা ছিল পাড়ার কামদেব। যৌনতার প্রাথমিক পাঠ সবাইকে হাতে ধরে শেখাত। এমনকী, হাতে ধরে মাস্টারবেট করা অবধি।ভুঁড়িওয়ালা চেহারা, হাতে-পায়ে রোম, মাথার চুল ঘন, ঢুলুঢুলু চোখ, কণ্ঠার হাড় উঁচু। সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে এর সঙ্গে ওর গোপন সম্পর্ক তৈরি করে গল্প ফাঁদত।
হাতের কাছে থাকা দু'জন বন্ধুর কথা মনে পড়ছে।একজন বলেছিল– বর্ষার সময় মামাবাড়ি গেছে। খুব বৃষ্টি। ছাতা হাতে বেরিয়েছে একলা দুপুরে মাছের আশায়। ঘাট পেরিয়ে পৌঁছেছে আমবন ছাড়িয়ে সিংহদের পোড়ো ভিটায়। দেখে, বড় কালো এক তমালগাছ ভিজছে মেঘলা আকাশের নিচে। সারা গায়ে জল বেয়ে বেয়ে নামছে। পিছল চামড়া গাছের। বন্ধুর সারা শরীরে কাঁটা দেয়। প্যান্ট ফুলে ওঠে। ও এদিক-ওদিক তাকিয়ে ওই নির্জনতার ভেতরে গিয়ে গাছের গায়ে জিভ বের করে ঠেকায়। তারপর গাছতলায় ওই ছমছমে বৃষ্টির ভিতর বসে বসে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে হস্তমৈথুন করে। ওইরকম নিজেকে ভোগ ও নাকি কখনও করেনি। নিজের চোখে দেখছে নিজের তাজা ও গরম বীর্য বৃষ্টির জলে ধুয়ে ধুয়ে যাচ্ছে।
আরেক বন্ধু বলেছিল– মনসাপুজোর আগের দিনের বিকেলের কথা। ওরা দু'জনে মিলে কচুফুল আনতে গেছে পাটখেতের ভেতর দিয়ে পুকুরে। বড় বড় পাটগাছ। গাছের মাথায় মাথায় হাওয়া। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। জংলা ঘাস ও পাতালে অল্প অল্প জল লেগে আছে। কচুফুল তোলা পরে হবে। দু'জনে পাটখেতের ভেতরে গিয়ে জামা-প্যান্ট খুলে একেবারে ন্যাংটো। এদিকে কেউ আসবে না। বন্ধু বলছে– পাশাপাশি বসে আছি দু'জনে। ও এগিয়ে এসে আমার ডান দুধের বৃন্তে মুখ রাখল। বাঁ-স্তনের থেকে ডান স্তন একটু উঁচু। চারদিকে এবার সন্ধে হব হব। যেই না জিভ রেখেছে ও, পলকে আমার মনে হলো, আমি ওর মা। ওর চুলের গন্ধ নিচ্ছি। মনে হচ্ছিল, মায়ায় ফেটে যাব আমি মেঘের নিচে। বললাম– নে নে ওঠ, চারদিকে কিন্তু সাপের ভয়, চল আজ থাক, ফুল আনি গা।
জলা জঙ্গলের, পাটখেতে-সরষেখেতে, পুরনো বাড়ি, গ্যারেজঘর, খোলা মাঠ, ছাদ, রাত্রিবেলার ইস্কুল- বারান্দার কত ছোট ছোট সব আদরকথা, কু শব্দে পাখিডাকের পাহারা পড়ে আছে নক্ষত্রের নিচে। কোন বন্ধু যে বলেছিল, ঠোঁট থেকে পায়ে চুমু খেতে খেতে নেমে এলে ভালবাসা টেকে না, পায়ের পাতা থেকে উঁচুতে উঠতে হয়। রাধাকৃষ্ণ নাকি এমন করেই চুম্বন করতেন। বন্ধুর নাম কিছুতেই মনে করতে পারছি না।
এইরকম নির্জন ছমছমে যৌনতাগুলি লুপ্ত হয়ে গেছে অথবা লুপ্তির পথে। পর্ন ভিডিও দেখলে কল্পনার বিস্তার আর হয় না। সৌন্দর্যচেতনা নগ্নতাতেই এসে থেমে যায়।
ঝুলি খুলে এইসব কথাবিশ্ব উপুড় করলে কত কত আঁধারে আলো কেঁপে ওঠে।