মমতার সরকারকে টোকা মারা সোজা নয়! মেনে নিলেন অমিত শাহ-ও?

 

এমনও হয়? দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি৷ অনেক কেন্দ্রীয় সংস্থাই তাঁর নিয়ন্ত্রণে৷ এর মধ্যেই রয়েছে সিবিআই-ও৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেই তিনি বঙ্গ-সফরে এসেছেন৷ আর এই সফর চলাকালীনই এক মৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূল ক‌ংগ্রেসের যোগ থাকার অভিযোগ এনে ওই ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করলেন খোদ অমিত শাহ-ই!

সিবিআই অমিত শাহ-র দফতরের অধীনে হলেও বিধি বলছে, তিনি সরাসরি কোনও ঘটনার তদন্তে সিবিআইকে নিয়োগ করতে পারেন না। এজন্য হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন অথবা আদালতের নির্দেশে কোনও ঘটনার তদন্তভার সিবিআই হাতে নিতে পারে।

কিন্তু এসবই তো টেকনিক্যাল বিষয়৷ মোদ্দাকথা হলো, অমিত শাহ নিজে যে ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন, ঘটনাচক্রে সেই ঘটনার তদন্তের ভার সত্যিই যদি সিবিআইয়ের হাতে যায়, কারও কারও মতে, সেই তদন্ত কখনওই নিরপেক্ষ থাকবে না৷ অনেকেই মনে করেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থায় চাকরি করা গোয়েন্দাদের মেরুদণ্ডের সবলতা দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নের মুখে৷ সাধারণ কোনও তদন্তও মানুষের সন্দেহের উর্ধ্বে উঠতে পারে না৷ আর এক্ষেত্রে তো সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন স্বয়ং অমিত শাহ৷

আরও পড়ুন: অস্ত্র সেই সিএএ, মমতার নাম করে কেন আক্রমণ করছেন অমিত শাহ?

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালেই কাশীপুরে রেল কলোনির পরিত্যক্ত ঘর থেকে বিজেপি যুব মোর্চা নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তৃণমূলকেই নিশানা করে পদ্ম শিবির অভিযোগ এনেছে, অর্জুনকে খুন করার পর দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আর বেনজিরভাবে সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিয়ে গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ কলকাতায় দাঁড়িয়ে কাশীপুর এলাকার বিজেপি যুবনেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার খুনের পিছনে তৃণমূলের যোগ থাকার ইঙ্গিত দিয়ে শাহ বলেছেন, "এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত হওয়া দরকার।" এর ঠিক আগে শাহ বলেছেন, "অর্জুন চৌরাসিয়ার রাজনৈতিক হত্যা হয়েছে। জঘন্যভাবে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল তৃণমূল সরকারের বর্ষপূর্তি হয়েছে। তার পরের দিনই রাজ্যে রাজনৈতিক হত্যার ঘটনা ঘটল। সারা বাংলায় বিরোধী নেতাদের বেছে বেছে হত্যা করার একের পর এক উদাহরণ সামনে আসছে।" একই সঙ্গে শাহ জানিয়েছেন, রাজ্যের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ এই খুনের ঘটনাকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন শাহ যে, শুক্রবার উত্তরবঙ্গ থেকে শহরে ফিরেই তিনি যান কাশীপুরে। সেখানে চৌরাসিয়া পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পরেই শাহ বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।"

প্রশ্ন উঠেছে, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই যেখানে ন্যূনতম তদন্তের আগেই এই ঘটনার পিছনে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত আছে বলেছেন, সেখানে কোন সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত করার সাহস দেখাবে? রাজনৈতিক মহলের অভিমত, তদন্ত শুরুর আগেই কলকাতা পুলিশের তদন্তকে রাজনৈতিক কারণেই নস্যাৎ করতে চাইছেন শাহ৷ প্রকৃত তদন্ত হোক, তা চাইছেন না তিনি৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইছেন, যেভাবেই হোক, তদন্তে নামুক সিবিআই৷ নিহত অর্জুন চৌরাসিয়ার পরিবারও সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে। সিবিআই তদন্তের দাবিতে আদালতে মামলাও করছে গেরুয়া শিবির৷ কারণ, রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তের অনুমতি না দিলে, আদালত সেই কাজ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন শাহ৷ সিবিআই তদন্ত দাবি করে আদালতে গেলেই উপযুক্ত রায় পাওয়া যাবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েও এদিন অমিত শাহ বলেন, ‘‘গত কয়েকদিনে অনেকগুলি ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দেশের কোথাও এত কম সময়ের মধ্যে এতগুলো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার নজির নেই। এটাই প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষের মতো আদালতেরও রাজ্য পুলিশের ওপর আস্থা নেই।’’

ওদিকে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের শাসক দলের তরফে বলা হয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্তে নেমেছেন স্বয়ং শাহ৷ তদন্তকে প্রভাবিত করতে চাইছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ নিজের মন্ত্রকের অধীনস্থ সিবিআইকে ব্যবহার করেই শাহ ফাঁসাতে চান তৃণমূলকে৷ তৃণমূল বলছে, বড় চক্রান্ত হচ্ছে রাজ্যের শাসক দল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে৷ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই চক্রান্তের মাথা৷

আর সাধারণ মানুষ বিস্মিত, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর পদমর্যাদার অবমাননা করে স্রেফ বিজেপি নেতার মতো কাজ করে গেলেন কেন? বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিকে তিনি নিজেই যেখানে নস্যাৎ করলেন, সেখানে এমন কেন্দ্রীয় গা-জোয়ারির নজির কেন রাখলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?

 

More Articles