"আমার ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে," ২০০৪ সালেই বলেছিলেন মোদির মা হিরাবেন!

Heeraben Modi Dies: মা হিরাবেন মোদির মৃত্যুর খবর পেয়ে পূর্বপরিকল্পিত সব কর্মসূচি বাতিল করে ইতিমধ্যেই আহমেদাবাদ পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

আজ তাঁর হাত কাঁপছে। আজ ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় নেতার হাত কাঁপছে। নরেন্দ্র মোদির হাত কাঁপছে। নিজের জীবনে বহু সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি সম্পূর্ণ অবিচল থেকে। কিন্তু যত বড়ই নেতা হন না কেন, যতই সিংহ হৃদয় হন না কেন, মায়ের মুখাগ্নি করতে গেলে যেকোনও সন্তানেরই হাত কাঁপবে। সদ্য মা হারা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মা হিরাবেন মোদির মৃত্যুর খবর পেয়ে পূর্বপরিকল্পিত সব কর্মসূচি বাতিল করে ইতিমধ্যেই আহমেদাবাদ পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন এবং জাতীয় গঙ্গা পরিষদের বৈঠকে কলকাতায় আসার কথা ছিল মোদির। এছাড়াও শহরে আরও কয়েকটি কর্মসূচি ছিল প্রধানমন্ত্রীর। বলাই বাহুল্য, সেইসব কোনও কর্মসূচিতেই উপস্থিত থাকছেন না প্রধানমন্ত্রী। তবে বিজেপি সূত্রে খবর, শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকতে পারলেও হয়তো ভার্চুয়ালি কর্মসূচি পালন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

সকাল থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদির বিধ্বস্ত চেহারা। ভারতে বলে, প্রতি সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর অবদান থাকে। নরেন্দ্র মোদিরও একজন আরএসএসের সংঘ প্রচারক থেকে ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছনোর পিছনে হাত রয়েছে তাঁর মা হিরাবেন মোদির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থক বা বিরোধী, উভয় পক্ষই এক বাক্যে স্বীকার করেন তাঁর দৃঢ় মানসিকতার কথা। ঘনিষ্ঠজনদের মতে নরেন্দ্র মোদির এই মানসিকতা তৈরি হয়েছে মা হিরাবেন মোদির থেকেই। হিরাবেন সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, কঠোর পরিশ্রম করেছেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও কখনও টাকা-পয়সা ধার করেননি। এই ধরনের শিক্ষাই তাঁর সন্তানের মধ্যেও লালিত করেছেন এবং ফলস্বরূপ দেশের অন্যতম শক্তিশালী নেতায় পরিণত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার আচমকা শরীর খারাপ হওয়ায় হিরাবেনকে আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মনে করা হচ্ছে বার্ধক্যজনিত কারণেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। যেদিন তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল সেদিনও হাসপাতালে গিয়ে মাকে দেখে আসেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন হিরাবেন। এই বছর গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতেও দেখা গিয়েছিল। গত জুন মাসে ১০০ বছরে পা রেখেছিলেন হিরাবেন মোদি।

আরও পড়ুন- স্কুলে যাননি কোনওদিন, তবু চিকিৎসা করতেন! মোদির প্রয়াত মা হীরাবেনের যে জীবন অজানাই

ছোট থেকেই সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই নিজের জীবন কাটিয়েছেন হীরাবেন। তাঁর শৈশব কেটেছে আর্থিক অনটনের মধ্যে। মাত্র ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। অর্থের অভাব ছিল এবং শ্বশুরবাড়ির মতও ছিল না, তাই চেয়েও লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। কিন্তু একই সঙ্গে ঠিক করে নেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সন্তানদের লেখাপড়া শেখাবেন তিনি। স্বামীর পক্ষে সব সন্তানদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই নিজেই ছোটখাটো কাজ সন্তানদের পড়াশোনার খরচা চালিয়েছেন হিরাবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাই প্রহ্লাদ মোদী এক সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ভাদনগরের একটি স্কুলে পড়তেন। সেই স্কুলের ইউনিফর্ম যখনই ছিঁড়ে যেত তা সুচারুরূপে সেলাই করে দিতেন তাঁদের মা। দেখে বোঝার উপায় ছিল না কোথা দিয়ে ছিঁড়েছে। সেলাইয়ের পাশাপাশি আয়ুর্বেদ এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়েও বেশ দখল ছিল হিরাবেনের। প্রহ্লাদ মোদী বলেছিলেন, “আমার মা অনেক দেশি চিকিৎসা জানতেন। তিনি ‘দোসি মা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি কখনও স্কুলে না গেলেও, আমাদের গ্রামের অলিখিত ডাক্তার ছিলেন। তাঁর ১০০ বছর নির্বিঘ্নে কাটানোর অন্যতম রহস্য হলো স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন।”

গ্রামে জলের অভাব ছিল প্রকট। ফলত কুয়ো থেকেই জল তুলে আনতে হতো হীরাবেনকে। সারা জীবন সংসারে অমানুষিক কায়িক পরিশ্রম করেছেন তিনি। সেই কারণেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শারীরিকভাবে এতটা মজবুত ছিলেন। জীবনে কখনও বাইরের খাবার খাননি হিরাবেন। হোটেলের খাবার একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না তিনি। তবে আইসক্রিমের প্রতি ছিল তাঁর অমোঘ টান। সুযোগ পেলেই আইসক্রিম খেতেন। মাকে নিয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রহ্লাদ মোদি বলেছিলেন, “সবজি কেনার টাকা ছিল না আমাদের। তখন দুধের ছাস ফ্রিতে পাওয়া যেত। শুধু বাজরার রুটি আর কড়ির তরকারি রান্না করা হত। ওই খেতাম আমরা। নরেন্দ্র ভাই, বাড়ি ছাড়ার কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, দু'বেলা শুধু দুটো রুটি আর চা ছাড়া কিছু খেত না। বাবাও খুব পরিশ্রম করতেন। আমার মাও সারাদিন কাজ করতেন।” প্রহ্লাদ মোদির মতে, সারা দেশের মানুষ যে বলে নরেন্দ্র মোদি এত কর্মঠ নেতা, এর পিছনে অন্যতম কারণ হিরাবেন। প্রহ্লাদ মোদির কথায়, “মা খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন। বাবা তাঁকে বিভিন্ন ধার্মিক বই পড়ে শোনাতেন। সেগুলি পড়েই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সবার আগে দেশ এবং দেশের মানুষ। সেই শিক্ষাই তিনি আমাদের সারাজীবন দিয়ে গিয়েছেন।”

জানা যায় মহাদেবের খুব বড় ভক্ত ছিলেন হিরাবেন মোদি। নিয়মিত পুজো-অর্চনা করতেন তিনি। হটকেশ্বর মহাদেব মন্দিরের মহারাজ ষষ্ঠী নিরঞ্জনসিংহ রাওয়াল বলেছিলেন, “হিরাবেন শিবরাত্রি এবং শ্রাবণের প্রথম সোমবার সময় মন্দিরে আসতেন। তিনি পুজো করতেন এবং আমাকেও আশীর্বাদ করতেন। কয়েক মাস আগেও দেখা হয়েছিল।” তবে এরপর আর কখনই পুজো দিতে যেতে পারবেন না হিরাবেন। বছরের শেষে এসে ভোররাতে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছেন তিনি। হিরাবেনের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের অন্যান্য নেতারাও।

More Articles