সঞ্জয়ের শাস্তিতেই মামলা শেষ নয়! আরজি কর কাণ্ডে আরও তদন্ত করবে সিবিআই?
RG Kar Case in Supreme Court: পরিবারের আইনজীবী করুণা নন্দী জানান, "যাঁরা জামিন পেয়েছেন এই মামলায়, তাঁদের জামিনের শর্ত খুবই দুর্বল ছিল। সিবিআই একবারও উল্লেখ করেনি যে জামিন পাওয়ার শর্ত কঠোর হওয়া উচিত।
আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনে একমাত্র দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সঞ্জয় রায়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছিল কারণ আদালত জানিয়েছিল, বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ এটি নয়। তবে এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল পরিবার। নির্যাতিতা, মৃতা চিকিৎসকের বাবা-মা বলেছিলেন, সিবিআইয়ের তদন্তে অনেক রহস্যের উদঘাটন হয়নি। আবারও সেই বিষয়গুলি তদন্তের দাবি করেছিলেন তাঁরা। এই মর্মে রায় ঘোষণার আগেই কলকাতা হাই কোর্টে একটি আবেদন করেছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। তবে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সেই সময় নির্যাতিতার পরিবারের ওই আবেদন শুনতে চাননি কারণ মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ছিল। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বাবা-মা। গত ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে শুনানির জন্য উঠেছিল আরজি কর মামলা। প্রায় দেড় মাস পরে আবারও আরজি কর মামলা উঠল আদালতে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানিয়েছেন, মৃত চিকিৎসকের পরিবারের আবেদন হাইকোর্টের শুনতে কোনও বাধা নেই। আরজি করের ধর্ষিতার পরিবারের আইনজীবী করুণা নন্দী জানান, সুপ্রিম কোর্ট বাবা মায়ের আবেদন মঞ্জুর করেছে। হাইকোর্ট এই মামলায় আরও তদন্ত, সিবিআইয়ের তদন্ত এবং চার্জশিটের তত্ত্বাবধান করতে পারে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এই ঘটনাটি কোনও বিচ্ছিন্ন অপরাধ একেবারেই ছিল না। করুণা বলেছেন, "যাঁরা জামিন পেয়েছেন এই মামলায়, তাঁদের জামিনের শর্ত খুবই দুর্বল ছিল। সিবিআই একবারও উল্লেখ করেনি যে জামিন পাওয়ার শর্ত কঠোর হওয়া উচিত। তথ্যপ্রমাণ নষ্টের অভিযোগ আছে অথচ টালা থানার ওসি জামিনে মুক্ত! বাবা-মা এখনও দ্রুত বিচারের অপেক্ষায়।"
আরও পড়ুন- ফাঁসি হলো না সঞ্জয় রায়ের! কেন আরজি কর ধর্ষণকাণ্ড বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়?
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী করুণা নন্দী আদালতে অনুরোধ করেন যাতে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চকে বলা হয়, সিবিআইকে এই মামলায় আরও তদন্ত করার জন্য। তবে ওই অনুরোধে সাড়া দেয়নি শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেছেন, “আমরা এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ আবেদন শুনতে পারে।”
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনাও ধার্য হয়। গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। প্রশ্ন উঠছে, সিবিআইয়ের তদন্ত কি আবারও শুরু হবে? যে মামলার আঁচ কমে গিয়েছে, তা নতুন করে ঘেঁটে দেখতে গিয়ে কেবল দীর্ঘসূত্রিতাই জুটবে না তো ভুক্তভোগীর পরিবারের? আদালতের এই রায় জামিনে মুক্ত প্রভাবশালীদের কি এই মামলায় প্রভাব খাটানো থেকে বিরত রাখতে পারবে আদৌ?