শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও মাছের রাজা ইলিশ! উপকারিতা জানলে পাতে তুলতে বাধ্য হবেন
শুধু স্বাদে নয়, ইলিশ মাছ পুষ্টিগুণেও পরিপূর্ণ- বলেছেন চিকিৎসকেরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইলিশে কী কী পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
বর্ষাকাল এলেই বাঙালি উদগ্রিব হয়ে অপেক্ষা করে ইলিশের জন্য। বাংলা ও বাঙালির চিরন্তন ইলিশ-প্রেম এক অমর অধ্যায়। রূপোলি এই ফসল পছন্দ করে না, এমন বাঙালি বোধহয় খুব কমই আছে। ইলিশ ভাপা, সরষে ইলিশ, ইলিশ পাতুড়ি কিংবা গরম গরম ইলিশ মাছভাজার মতো পদগুলির কথা শুনলেই জিভে জল এসে যায়। তবে শুধু স্বাদে নয়, ইলিশ মাছ পুষ্টিগুণেও পরিপূর্ণ- বলেছেন চিকিৎসকেরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইলিশে কী কী পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
ইলিশে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান
স্বাদে অনন্য ইলিশ মাছে একাধিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে প্রায় ২১.৮ গ্রাম প্রোটিন, উচ্চমাত্রায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, নায়সিন, ট্রিপটোফ্যান, ভিটামিন বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম-সহ কিছু ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ উপস্থিত থাকে ইলিশ মাছে। ফলে ইলিশ মাছের কিছু চমৎকার উপকারিতা রয়েছে।
ইলিশ মাছের উপকারিতা
১. হৃদপিণ্ডর জন্য
ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্যদিকে ইলিশ মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়া মসৃণ হয় এবং রক্তনালির স্বাস্থ্যও বজায় থাকে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এই মাছ।
আরও পড়ুন: ইলিশের নামে আসলে কি বিষ খাচ্ছেন? কীভাবে বুঝবেন…
২. চোখ ভালো রাখে
চোখের সুস্থতা রক্ষায় ইলিশে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাহায্য করে। নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চোখ উজ্জ্বল হয়। বৃদ্ধকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসার সঙ্গে মোকাবিলা করে ওমেগা থ্রি অ্যাসিড।
৩. রক্ত সঞ্চালনে সুবিধা
সামুদ্রিক ইলিশ মাছে থাকা ইপিএ, ডিএইচএ এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। এর ফলে থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
৪. বাতের ব্যথার উপশম
ইলিশ মাছে থাকা ওমেগা থ্রি অ্যাসিড অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। প্রতিদিনের খাবারে এই মাছ রাখলে বাতের ব্যথা, গাঁট ফুলে উঠে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই দেয়।
৫. খনিজ ও ভিটামিনে ভরপুর
ইলিশ মাছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক এবং পটাশিয়াম থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থি সুস্থ রাখতে সোডিয়াম অত্যন্ত জরুরি। সেলেনিয়াম উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে যা ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এই মাছে উপস্থিত ফসফরাস ও ক্যালশিয়াম হাড়ের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও ভিটামিন এ এবং ডি রয়েছে এই মাছে, যা রাতকানা ও রিকেট রোগ থেকে রক্ষা করে শিশুদের। শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে ইলিশ মাছ।
৬. ফুসফুসের জন্য
গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ হওয়ায় তা ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কার্যকরী। শিশুদের মধ্যে হাঁপানির রোগ কমাতে পারে বাঙালির প্রিয় ইলিশ। তাই যাঁরা প্রতিদিন অল্প পরিমাণে এই মাছ খান, তাঁদের ফুসফুস অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
৭. ত্বক ভালো রাখে
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কুপ্রভাব থেকেও বাঁচাতে পারে ইলিশ মাছ। নিয়মিত এই মাছ খেলে অ্যাকজিমা, সিরোসিসের মতো রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে এই মাছ। মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম প্রধান উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টান টান ও নমনীয় করে তোলে।
৮. পেটের সুস্থতা রক্ষা
প্রতিদিনের খাবারে তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের কারণে আলসার, কোলাইটিসের মতো রোগে হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই ইলিশ মাছ খাওয়া খুবই উপকারী।
৯. ব্রেনের জন্য
আমাদের মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে, যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যাঁরা নিয়মিত ইলিশ মাছ খান, তাঁদের মধ্যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার রোগ প্রতিরোধেও বিশেষভাবে কার্যকর এই মাছ। তাই বাচ্চাদের মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করবে করবে ইলিশ। মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ইলিশ মাছ খান মন ভরে।
১০. অবসাদের মোকাবিলায়
ইলিশ মাছ থাকা ওমেগা থ্রি অবসাদ কাটাতে সক্ষম। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশনের মতো একাধিক মানসিক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে ইলিশ মাছ।
কারা খাবেন না ইলিশ মাছ?
তবে কারও কারও ক্ষেত্রে ইলিশ মাছের কারণে অ্যালার্জি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা যায়। এমন হলে নিজে থেকেই বুঝে এড়িয়ে চলুন এই মাছ। সুস্বাদু হলেও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও সুখকর নয়। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইলিশ মাছ মোটেও ক্ষতিকর নয়।
কোন পদ্ধতিতে রান্না করলে সবথেকে বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব?
বর্ষার সময় পকেট বুঝে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম ইলিশ রাখুন খাদ্যতালিকায়। অল্প তেলে ইলিশ মাছ ভেজে খেলে শরীরে সরাসরি পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। আবার সরষের সঙ্গে ইলিশের সঙ্গতে মাছের পুষ্টিগুণ খানিক বেড়ে যায়। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত তেল, মশলা দিয়ে রান্না করলে স্বাদ ও পুষ্টি দুইয়েরই খামতি হতে পারে। রোজ পাতে থাকুক একটুকরো ইলিশ। বজায় থাকুক সুস্বাস্থ্য। অটুট থাকবে বাঙালির ইলিশ প্রেম।