সিনেমায় বেনীআসহকলা-য় স্নান সেরে ওঠে যেসব শ্রেষ্ঠ দৃশ্যগুলি
Colors in Cinema: রঙিন ছবিতে যদি দৃশ্যে রঙের নির্বাচন ঠিক মতো না হয়, তাহলে কোনওমতেই কাঙ্খিত অনুভূতিটি দর্শকের মনে জাগিয়ে তোলা যাবে না।
আরও একটি দোল উৎসব পেরিয়ে এলাম। বঙ্গ-সংস্কৃতির অনেকগুলো অবিচ্ছেদ্য উপাদান জড়িয়ে আছে এই উৎসবের সঙ্গে: তা সে পৌরাণিক আখ্যানই হোক, মঠ-ফুটকড়াইয়ের মতো খাবার চাখবার উপলক্ষ্য হোক, ভাংয়ের মতো আপাত-নিষিদ্ধতায় অবগাহনই হোক, অমোচনীয় রঙ মেখে দিন সাতেকের জন্য হুলিয়া পাল্টে যাওয়াই হোক! ছোটবেলার উন্মাদনা পেরিয়ে এসেছি বহু আগে; এখন দোল মানে কিছুটা আবির মাখা। আর, চারপাশের নতুন রঙ মাখা দুনিয়াটাকে দু-চোখ ভরে দেখা।
রঙ। ছোট্ট থেকে প্রকৃতির এই উপাদানটি যে কী আকর্ষণীয় লাগে, তা বোধহয় ভাষায় প্রকাশ করার দক্ষতা হবে না কোনওদিন। সিনেমার পর্দায় যখন এক একটি রঙকে দেখি, গোয়েন্দার মতো খুঁজে বার করতে ইচ্ছে করে, তাদের আগমনের কারণ। কেন টাইটানিকের শেষ দৃশ্যে হিমশীতল নীল রঙ আসে? কেনই বা হিথ লেজারের জোকারের পরনে থাকে গাঢ় বেগুনি কস্টিউম? ওয়েস অ্যান্ডারসনের ছবিকে কীভাবে জীবন্ত করে তোলে এক একটি উজ্জ্বল রঙ? বর্ণ মনস্তত্ত্ব বলে, প্রতিটি রঙের সঙ্গে মানুষের কিছু বিশ্বজনীন অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে। কোন দৃশ্যে কোন রঙ ব্যবহৃত হচ্ছে, তা দর্শকের ছবি দেখার অভিজ্ঞতাটিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। কাজেই, ছবিতে রঙের ব্যবহার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রঙিন ছবিতে যদি দৃশ্যে রঙের নির্বাচন ঠিক মতো না হয়, তাহলে কোনওমতেই কাঙ্খিত অনুভূতিটি দর্শকের মনে জাগিয়ে তোলা যাবে না। রঙের প্রয়োগ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, এতটাই অপরিহার্য!
মধুরিমাদি যখন সিনেমার রঙ নিয়ে লেখার প্রস্তাব দিলেন, একটু ভাবনায় পড়লাম। সিনেমার রঙ একটা বিপুল জগৎ, তাকে কী করে এত অনায়াসে ব্যক্ত করি! শেষে ভাবলাম, বেনীআসহকলা-র সাতটা রঙে রাঙানো প্রিয় সাতটা দৃশ্য নিয়ে লিখি। এবারের দোলযাত্রায় এটুকুই আমার রঙখেলা হয়ে থাকুক।
বেগুনি: সাধারণত ফিল্মে রোম্যান্টিক অনুভূতির জন্ম দিতে বা মহাজাগতিক কোনও ঘটনার দূত হিসেবে বেগুনি রঙকে ব্যবহার করা হয়। যেমন, ‘দ্য লায়ন কিং’-য়ে বারবার ফিরে এসেছে বেগুনি রঙ। আমরা জানি, আফ্রিকার বিভিন্ন লোকজ বিশ্বাস, অরণ্যের প্রাচীন এক একটি প্রবাদকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল হ্যামলেট-আধারিত মূল আখ্যানটির সঙ্গে। সৌজন্যে, রাফিকি। রাজপুরোহিত, তথা, মুফাসার অন্যতম পুরনো বন্ধুও বটে। যেসব মহাজাগতিক নির্দেশনামা সিম্বার কাছে পৌঁছে যাওয়া প্রয়োজন ছিল, তাদের পৌঁছে দিত রাফিকিই। সিম্বা যখন দিগভ্রষ্ট হয়ে চুপচাপ মাঠে বসে আছে, তখন পর্দা জুড়ে নেমে আসে বেগুনি রঙ। আকাশে ভেসে ওঠে মুফাসার ছায়া। ভেসে আসে মুফাসার গমগমে ব্যারিটোন। মুফাসা সিম্বাকে পথ দেখান। নক্ষত্রখচিত রাতে জনশূন্য প্রান্তরে সিম্বার সঙ্গে দেখা হয় মুফাসার— ওই মহাজাগতিক সাক্ষাতের আধার হয়ে থাকে মায়াবী বেগুনি রঙ। দেশ-কাল পার করা দুই জগতের মধ্যে সেতুবন্ধন করে এক অব্যাখ্যেয় বেগুনি রঙ। খুব ছোট্টবেলায়, যখন প্রয়াণের অভিঘাত বোঝার বয়স হয়নি, প্রথম দেখেছিলাম এই ছবি। এই দৃশ্য বুকে রয়ে গেছে আজও, সৌজন্যে ওই মায়াবী বেগুনি নক্ষত্রখচিত রাত।
আরও পড়ুন- বর্ষশেষের সেরা ২০২৪: কোন কোন সিনেমা-সিরিজ ভাবাল গোটা বছরে?
নীল: সব থেকে শান্ত রঙগুলির মধ্যে অগ্রগণ্য হলো নীলের বিভিন্ন শেড। শান্ত, সমাহিত অনুভূতির দূত হিসেবে বারবার নীল রঙটি ফিরে এসেছে সিনেমার পর্দায়। মনে পড়ল, টিম বার্টনের ফিল্ম ‘এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস’-এর শেষ দৃশ্যের কথা। জনি ডেপ-উইনোনা রাইডার-অভিনীত সে ফ্যান্টাসি জঁরের ছবির সমাপ্তির মতো শান্ত, স্থিতিশীল সমাপন দেখেছি বড় কম। সেই ছবিতে এক নির্জন প্রাসাদে বাস করা এক ক্ষ্যাপাটে বিজ্ঞানী মনপ্রাণ লাগিয়ে একটি হিউম্যানয়েড তৈরি করছিলেন। সেই হিউম্যানয়েডের নাম রেখেছিলেন এডওয়ার্ড। কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই তিনি মারা যান। এডওয়ার্ডের পুরোপুরি মানুষ হওয়া হয় না। বহিরঙ্গে মানুষের মতো দেখতে হলেও, তার আঙুলের জায়গায় দশটা ধারালো কাঁচির ফলা থেকে যায়। বিজ্ঞানীর অসমাপ্ত কাজ। বেচারা এডওয়ার্ড মানুষের সমাজে এসে বসবাস করতে শুরু করলে মানুষ তাকে নিয়ে মশকরা করে, তার অস্ত্র কাজে লাগিয়ে নানা অপরাধমূলক কাজ করিয়ে নেয়। শেষতক, এডওয়ার্ড এক শীতে ওই প্রাসাদে ফিরে যায়। মানুষের মহল্লায় থাকতে সে গাছ কেটে কেটে নানারকম আকৃতি তৈরি করা শিখেছিল, ওই প্রাসাদে বরফের চাঁই কেটে কেটে সে বিভিন্ন মূর্তি বানাতে থাকে। এক শান্ত, আরামদায়ক, পেলব নীল পর্দায় আসে। বরফের কুচি প্রাসাদ থেকে উড়ে আসে মানুষের পাড়ায়— ভিজিয়ে দেয় এডওয়ার্ডের মানুষ প্রেমিকার চোখ-মুখ। তার চোখ জলে ভিজে আসে। বরফ-গলা জল নয়। আদি-অকৃত্রিম অশ্রু। এই নীলের রেশ রেখেই ছবি শেষ হয়। সারাজীবন ভয়ে কুঁকড়ে থাকা ‘অস্বাভাবিক’ এডওয়ার্ড অবশেষে তার সুখের চাবিকাঠি। নির্জন, নিভৃতে বসে একাগ্রচিত্তে সে তার আঙুল দিয়ে কেটে চলে বরফের চাঁই। পেলব নীল রঙে ফুটে ওঠে তার স্থিতধী মনের ছাপ।
আসমানী: আসমানীর শেড আদপে কতখানি ভয়াল হয়ে উঠতে পারে, সেই বিষয়টা প্রথম হাঁ করে দেখেছিলাম ‘টুম্বাড়’-এ। সদাশিব মারা যাওয়ার পর যখন বিনায়ক আর তার মা টুম্বাড় ছেড়ে নৌকায় করে পালাচ্ছে, তখন টুম্বাড়ে নামছে সাপের বিষের মতো আসমানী সন্ধ্যা। সেই রঙের আড়ালে ঘাতকের মতো অপেক্ষা করছে বর্ষপ্রাচীন অভিশাপ। এই রঙে যে ডুবে যায়, তার আর সেই অভিশাপ থেকেও মুক্তি পাওয়া হয় না। শেক্সপিয়ারের গল্পে যেমন ভয়ঙ্কর কোনও ঘটনা ঘটার আগে পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে উঠত, তেমনই, টুম্বাড়ে কোনও বিপদ ঘটার আগে পর্দা জুড়ে ঘনিয়ে আসে এক কালান্তক স্যাঁতসেঁতে আসমানী রঙ। সদাশিব মারা যাওয়ার পর যখন ওই গাঢ় আসমানী ঘনিয়ে আসে, আমরা বুঝতে পারি, অভিশাপটি এই বংশকেও খাবে।
সবুজ: আকিরা কুরোসাওয়ার শেষ ছবি ‘ড্রিমস’ একটি অ্যান্থোলজি ফিল্ম, অর্থাৎ অনেকগুলো ছোট ছোট ছবির সমাহার। তার শেষ গল্প দ্য ভিলেজ অফ দ্য ওয়াটারমিলস-এর সবুজ রঙের প্যালেটটি আমার বিশেষভাবে প্রিয়। সেই গ্রামে এক আগন্তুক গিয়ে পড়ে। দেখা যায়, সেই গ্রামের লোকজন প্রযুক্তি, আধুনিক পরিকাঠামো থেকে ঢের দূরে থেকে নিজেদের মতো চাষবাস করে দিন কাটাচ্ছেন। গোটা ছবিতে যুদ্ধের দৃশ্য দেখা যায়, পারমাণবিক বোমায় জাপানের ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গ উঠে আসে; তার বিপ্রতীপে শেষ ছবিতে আমরা চোখকে শান্তি দেওয়া প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে পাই। সেই গ্রামে কেউ মারা গেলে তার শোকপালন করা হয় না। বরং, মানুষটি যে অতদিন বাঁচলেন, সেই দীর্ঘ জীবনের উদযাপন করেন তাঁরা। এরকমই এক মৃতদেহকে নিয়ে একটা মিছিল বেরিয়েছিল। আগন্তুক, শেষ অবধি সেই মিছিলের অংশ হয়ে পড়েন। ঘন সবুজের মধ্যে দিয়ে মিছিলটি এগিয়ে যায়। ছবিটি শেষ হয়। কুরোসাওয়া শেষ ছবিতে যেন মৃত্যুর চেয়ে বড় হওয়ার অঙ্গীকার রেখে যান। শেষ ছবির শেষ গল্পে গেয়ে যান জীবনের জয়গান— তার মাধ্যম হয়ে থাকে একটা নিষ্কলুষ সবুজ রঙ।
হলুদ: উষ্ণতার নামান্তর হলুদ। শুধু, এই বাক্যাংশটুকু উচ্চারণ করলেই আমার ‘লুটেরা’-র শেষ দৃশ্যের কথা মনে পড়ে। বস্তুত, লুটেরা-র দুই অর্ধে দু-রকম রঙের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রথমার্ধে বাবার স্নেহ, বরুণের ভালোবাসা, দেবযানীর সান্নিধ্য পাখিকে এক আশ্চর্য ওমের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখে। সেই উষ্ণতা, স্নেহচ্ছায়া, ওমের রঙ হয়ে প্রথমার্ধে পর্দা জুড়ে থেকে যায় হলুদ। কখনও সকালের রোদ, কখনও হ্যাজাকের উজ্জ্বল আলো, কখনও পড়ন্ত হেমন্ত-বিকেলের রোদ্দুর— এই হলুদ রঙটিই হয়ে থাকে পাখির জীবনের আশা, উষ্ণতার প্রতীক।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যেহেতু সেই সুখের সংসারের স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায়, তাই তুষারশুভ্র ডালহাউসিতে হলুদের আর চিহ্নমাত্র থাকে না; বদলে, এক ব্লীক ধূসর, আশাহীন ধবধবে সাদা পর্দা গ্রাস করে কিন্তু, লুটেরার শেষদৃশ্যে যখন পাতাটিকে বরুণ গাছে ঝুলিয়ে দিয়ে পুলিশের গুলি খেয়ে মারা যায়, তখন ওই সর্বগ্রাসী ধূসরের মধ্যে সগর্বে উড়তে থাকে একখণ্ড হলুদ— কাঁচা হাতে আঁকা একটা পাতা। হলুদ তো আসলে পাখির জীবনে আশার রঙ, বরুণের প্রেমের রঙও বটে— তাই ওই জনহীন বরফাবৃত প্রান্তরে একটি হলুদ পাতা উড়তে দেখে আমরা বুঝি, পাখির জন্য বরুণের ভালোবাসা কোনওদিন মুছে যায়নি। যাবে না। যাওয়া সম্ভব নয়। হলুদের প্রয়োগ এভাবে হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগিয়ে গেছে— এমন বড় একটা হয়নি, যতটা লুটেরার শেষদৃশ্যে হয়।
কমলা: এই রঙটির প্রয়োগের কথা বলতে গিয়ে অনেক ছবির অনেক দৃশ্যের কথাই উল্লেখ করা যেত। সে-কথা অবশ্য আগের রঙগুলির ক্ষেত্রেও খাটে। যেমন, ডেভিড ফিঞ্চারের ‘ফাইট ক্লাব’-এ উগ্র পৌরুষের রঙ হয়ে উঠেছিল কমলা, আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইট ক্লাবে প্রায়শই কমলা আলোয় দেখা যেত ব্র্যাড পিটকে। আবার, ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’-তে ‘পেন্ট ইট রেড’ গানের কথায় যতই লালের উল্লেখ থাকুক না কেন, সে-গান আসলে যৌবনের উচ্ছ্বাসেরই উদযাপন। কিন্তু, এই ছবিগুলো পেরিয়ে একটা ব্যক্তিগত স্মৃতি-মাখা দৃশ্যের কাছে হাত পাতি। ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবিতে ‘বলম পিচকারি’ গানটার শেষে, যখন বানির বন্ধুরা, নয়না আবিষ্কার করেছে বানি চলে যাচ্ছে বিদেশ; তখন পর্দা জুড়ে এক মায়াবী কমলা রঙ মিশে থাকে। নয়না বানিকে তার মনের কথা বলে উঠতে পারবে না। বুঝবে, জীবন রূপকথা নয়। এতক্ষণ পর্দায় এতরকম রঙের সমাহার দেখার পর দর্শকের চোখে আশ্চর্য মনকেমনিয়া কমলা এসে বসবে, সেই রঙে যেন বৈরাগ্য মিশে আছে। এই অব্যক্ত কথাগুলো ভিড় করে কমলা রঙে। বন্ধুদের থেকে বন্ধুদের দূরত্ব বেড়ে যায়। যৌথতা শেষ হয়ে আসে। কমলা এই ছবিতে যৌবনের উদযাপন নয়, যৌবনের অন্তিমবিন্দু হয়ে এই দৃশ্যে আসে। ধাক্কা দেয়। চিরাচরিত কমলার বিপরীতে এই ছবিতে এই দৃশ্যে কমলা ব্যবহার করেন নির্মাতারা। আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। রূপকথার রঙ আমাদের বাস্তবের মাটিতে এনে ফেলে।
আরও পড়ুন-সিনেমায় মাসল পাওয়ার আর রুচি হাত ধরাধরি করে চলতে পারে না: ইন্দ্রাশিস আচার্য
লাল: প্রেমের ছবির তালিকা করতে বসলে তাতে নিশ্চয়ই কেউ তারান্তিনোর ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’-কে রাখবেন না। কিন্তু, প্রেমের দৃশ্য বললেই এই ছবির একটি দৃশ্য অনিবার্যভাবে মনে পড়ে যায়। লাল যেমন বিপদের রঙ, রক্তের রঙ; তেমনই প্রেম-কামনা-নৈকট্যের রঙও তো বটে! তারান্তিনো লাল রঙের মাধ্যমে এই ছবির একটা দৃশ্যে এই দুই বিপরীতমুখী আবেগকেই বেঁধে ফেলেন।
সোশানার মৃত্যুদৃশ্য মনে করুন। নাছোড় জার্মান সৈনিকটিকে সে যখন গুলি করে প্রোজেকশন রুমের মেঝেতে ফেলে রেখেছে, তখন তার সিনেমাহলে চলছে হিটলারের জয়গান গাওয়া ছবি। একটু বাদে হিটলার আর তার সঙ্গীসাথীদের রক্তে ভেসে যাবে গোটা সিনেমাহল। বাস্তবে যে প্রতিশোধ পাওয়া হয়নি একটি জাতির, তারান্তিনো তাদের সিনেমার পর্দায় সেই প্রতিশোধ পাইয়ে দেবেন। গুলিবিদ্ধ সৈন্য মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে, সোশানা ইতস্তত করে মমতাভরা চোখে তার দিকে তাকায়। কাছে যায় দ্বিধাভরে। সৈনিকটি আচমকা নিজের বন্দুক বার করে গুলি চালিয়ে দেয়। সোশানার বুক থেকে রক্তের সঙ্গে বেরিয়ে আসে লাল পাপড়ি। বোঝা যায়, সৈনিকের প্রতি তার গোপন অনুরাগ ছিল। তারা কেবল রাজনৈতিক কারণে সহাবস্থান করতে পারেনি, আদর্শগত কারণে এক হতে পারেনি; কিন্তু মৃত্যু তাদের মিলিয়ে দিয়ে গেল। লাল মেঝেতে পড়ে থাকে রক্তে মাখামাখি দু’টি নিথর দেহ। এই দৃশ্যে লাল ভায়োলেন্সেরও রঙ হয়ে থাকে; গোপন প্রেমেরও রঙ হয়ে থাকে।
রঙ বড় পেলব মাত্রা যোগ করে ছবিতে। একটি ছবির রঙ পাল্টে দিলে তার অর্থই আমূল পাল্টে যায়। রঙিন ছবির ইতিহাসে রঙের যে কী বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়োগ হয়েছে, তা দর্শককে কীভাবে প্রভাবিত করেছে— বলতে বসলে রাত কাবার হয়ে যাবে। এই রঙের উৎসবে সাতটা রঙ নিয়ে আমার সাতটা প্রিয় দৃশ্যের কথা লিখলাম; রঙ যে পর্দার গণ্ডি ছাড়িয়ে, নেহাতই সুদৃশ্য হয়ে ওঠার তাগিদ ছাপিয়ে দর্শকের অন্তরের ব্যক্তিগত করিডোরে সকালের রোদের মতো চুঁইয়ে পড়তে পারে— এই দৃশ্যগুলো তার প্রমাণ। এমন এক একটি রঙের প্রয়োগ দেখে বোঝা যায়, সংবেদী হয়ে নিক্ষেপ করলে রঙ ঠিক মর্মে গিয়ে লাগে। লাগেই।