দেশে দেশে যেভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে

Ceasefires: কোনো কোনো সময় যুদ্ধে লিপ্ত দুই পক্ষ একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতিতেও রাজি হয়। সেই যুদ্ধবিরতি হয় অস্থায়ী। এটি সহিংসতা কমাতেই মূলত করা হয়ে থাকে।

জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধবিরতি-র কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। যুদ্ধরত দুই পক্ষ যখন আলোচনার মাধ্যমে শর্ত দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে সেটিই যুদ্ধবিরতি। যুদ্ধবিরতি এবং সংঘর্ষ বন্ধ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলেই মত জাতিসংঘের। সাধারণত যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। এতে কিছু শর্ত থাকতে পারে। শর্ত মেনে দুই পক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদি কোনো পক্ষ ফের হামলা চালায় তাহলে চুক্তি ভঙ্গ হয় এবং আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভবনা থাকে। চুক্তিতে উল্লেখ করা থাকে কোন কোন সামরিক কার্যকলাপ তারা চালাতে পারবে, আর কোনটি পারবে না। দেখা যাক, দেশে দেশে কীভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে?

লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধ

১৯৯৩ সালে লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি হয়। তখন অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় ঐক্যের সরকার ন্যাশনাল প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট অফ লাইবেরিয়া এবং ইউনাইটেড লিবারেশন মুভমেন্ট অফ লাইবেরিয়া একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে বলা ছিল উভয় পক্ষই অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানি বন্ধ করবে, সামরিক ঘাঁটির অবস্থানও যেন পরিবর্তন করা না হয় পাশাপাশি অগ্নিসংযোগকারী কোনো ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না।

কোনো কোনো সময় যুদ্ধে লিপ্ত দুই পক্ষ একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতিতেও রাজি হয়। সেই যুদ্ধবিরতি হয় অস্থায়ী। এটি সহিংসতা কমাতেই মূলত করা হয়ে থাকে। অনেক সময় একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শান্তি আলোচনা অবধিও পৌঁছতে পারে।

ইজরায়েল এবং হামাস

২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের ইজরায়েল এবং হামাস-নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। সে সময় হামাস প্রায় ২৪০জন বন্দির বিনিময়ে ১০৫ জন পণবন্দিকে মুক্তি দেয়। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, ইজরায়েল এবং হামাস তাদের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিকে 'মানবিক বিরতি'-র আখ্যা দিয়েছিল।

ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়া

২০০০ সালের জুনে, ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়া-র একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়। এরপর থেকে ওই দুই পক্ষের সংঘাত শেষ হয়।

অনেক সময় আবার প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি না মানলে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়।

আরও পড়ুন-ইরান হামলার প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছে ইজরায়েল

লেবাননে গৃহযুদ্ধ

জাতিসংঘ লেবাননে গৃহযুদ্ধ থামাতে ১৯৭৮, ১৯৮১ এবং ১৯৮২ সালে একাধিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। কিন্তু একটিও মানা হয়নি। প্রতিটি যুদ্ধবিরতির পর পুনরায় সংঘর্ষ বাধে। লেবাননের গৃহযুদ্ধ চলেছিল ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত।

সুদান গৃহযুদ্ধ

সুদান সরকার দুটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল। একটি সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট এবং অপরটি জাস্টিস এন্ড ইক্যুইলিটি মুভমেন্ট। এতে সংঘর্ষ বন্ধও হয়েছিল। স্থানীয় জনগণের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংস্থাগুলিকে ৪৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়া

২০০৪ সালে, ইন্দোনেশিয়ায় সুনামির পর, ইন্দোনেশিয়ার সরকার এবং ফ্রি আচেহ মুভমেন্ট যুদ্ধবিরতি-তে সম্মত হয়। সেখানে জরুরি সাহায্য পৌঁছে দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সংঘর্ষ বন্ধ করতেও যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়ে থাকে। এটিকে ভৌগোলিক যুদ্ধবিরতি বলা হয়।

ইয়েমেন সরকার এবং হুথি

যেমন ২০১৮ সালে, জাতিসংঘ স্থানীয় জনগণকে রক্ষা করতে লোহিত সাগরের 'হোদেইদা' বন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকা শান্ত করতে ইয়েমেন সরকার এবং হুথিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধ চলছিল। ২২জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন। প্রায় ১২ দিনের সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ইজরায়েল এবং ইরান উভয়ই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এখন যুদ্ধবিরতি আদৌ থাকবে কিনা সেই নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

More Articles