আকাশছোঁয়া দাম পেট্রোলের, কত টাকা যায় পাম্প মালিকের পকেটে?

ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারের জন্য প্রায় ২.৬০ টাকা লাভ রাখেন পাম্পের মালিক।

 

এই মুহূর্তে কলকাতা-সহ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম সেঞ্চুরি পার করে গেছে। কষ্ট করে রোজগার করা অর্থ ধরে রাখতে আরেক প্রস্থ মগজ খাটাতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকে। গতকাল কলকাতায় প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ১১৫.১২ টাকা। প্রতি লিটার ডিজেলের দামও ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই।রাজধানী শহর দিল্লিতে পেট্রোলের লিটার পিছু দাম ১০৫.৪১ টাকা। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৯৫.৮৭ টাকা। এই নিয়ে টানা ৩৭ দিন পেট্রোলের দাম ভারতের বাজারে একশো পার করে গেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কিন্তু অনেক কম। তবে কীভাবে এত বাড়ছে পেট্রোলের দাম? জানেন কি, প্রতি লিটার পেট্রোল বিক্রিতে পাম্পের মালিক কত টাকা কমিশন পান? চলুন বিশদে বুঝে নেওয়া যাক পেট্রোলের দাম নির্ধারণের নানা দিক।

 

১৩ মে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১০৮.৪২ আমেরিকান ডলার। অন্যদিকে প্রতি ডলারে ভারতীয় রুপির দাম ছিল ৭৭.৪৬ টাকা। সুতরাং, ভারতীয় মুদ্রায় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৮৩৯৮.২১ টাকা। এক্ষেত্রে আরেকটি হিসাব মাথায় রাখা প্রয়োজন, প্রতি ব্যারেল পেট্রোল থেকে ১৫৯ লিটার পেট্রোল পাওয়া যায়। সুতরাং, অঙ্কের নিয়মে হিসেব কষেই বলে দেওয়া যায় যে, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি লিটার অপরিশোধিত তেল কিনতে খরচ করে প্রায় ৫২.৮১ টাকা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ভারত তার প্রয়োজনের ৮৫% অপরিশোধিত তেল বাইরে থেকে আমদানি করে। এরপর আমদানিকৃত তেল বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত শোধনাগারে পাঠানো হয় পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের জন্য। শোধনের পর ওএমসিগুলো (অয়েল মার্কেটিং কোম্পানিস) প্রতি লিটার পেট্রোলে অন্তত ৭.২৫ টাকা প্রসেসিং ফি যোগ করে। এতে পেট্রোলের লিটার প্রতি দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ টাকারও বেশি। শোধনাগার থেকে বেরিয়ে এবার বিভিন্ন রাজ্যের পেট্রোল পাম্পের জন্য বেরিয়ে যায় পেট্রোল বা ডিজেল। এই পেট্রোল থেকে ভারত সরকার লিটার পিছু প্রায় ২৭.৯০ টাকা কর আদায় করে। আবগারি কর, সড়ক করের মতো কর রয়েছে এর মধ্যে। তবে পেট্রোলের ক্ষেত্রে এই কর গত বছর নভেম্বর মাসে প্রতি লিটারে ৫ টাকা কমানোর পরেই বর্তমান অঙ্কে এসে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে এর আগে আরও বেশি পরিমাণ কর দিতে হত এক লিটার পেট্রোল কেনার জন্য। কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া শুল্ক-সহ প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম হয় প্রায় ৯০ টাকা। একই সঙ্গে ডিজেলের জন্য প্রতি লিটারে ১০ টাকা কর কমিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

 

তারপর পেট্রোল পাম্প মালিক প্রতি লিটার পেট্রোল বিক্রির জন্য প্রায় ৩.৮৬ টাকা লাভ রাখেন। যার ফলে পেট্রোলের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৯৪ টাকা প্রতি লিটার। ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারের জন্য প্রায় ২.৬০ টাকা লাভ রাখেন পাম্পের মালিক। তাহলে হিসেব করে দেখুন, মাসে পেট্রোল বিক্রি করে কত অর্থ রোজগার করেন পাম্প মালিকেরা। প্রাথমিকভাবে পাম্প মালিকদের গড় মাসিক আয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকার ওপরে।

 

আরও পড়ুন: অল্প পুঁজিতে বিশেষ মুরগি পালন, লক্ষ টাকা রোজগারের হাতছানি, জেনে নিন কীভাবে

 

এখানেই শেষ নয় পেট্রোলের মূল্য ধার্য করার দিকটি। লিটার প্রতি পাম্প মালিকদের কমিশনের সঙ্গে যুক্ত হয় রাজ্য সরকারের কর, যা সব রাজ্যের জন্য ভিন্ন। আর এই কারণেই দেশের প্রতিটি রাজ্যে এক লিটার পেট্রোল বা ডিজেলের দাম আলাদা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রায় ২৫% লিটার পিছু কর আদায় করে। যার ফলে রাজ্যে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম বেড়ে হয় প্রায় ১১৫ টাকা। মনে রাখা প্রয়োজন, এই হিসেব ১৩ মে-র ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে তারতম্য দেখা গেলে এবং ডলার প্রতি ভারতীয় রুপির দামের ওঠানামার ওপর নির্ভর করে আমদানিকৃত তেলের দাম বাড়ে বা কমে।

 

জেনে রাখা দরকার, দিল্লি সরকার প্রতি লিটার পেট্রোলের জন্য ১৯.৪% এবং ডিজেলের জন্য ১৬.৭৫% কর আদায় করে। গত বছর নভেম্বর মাসে জ্বালানির খরচ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কেন্দ্রীয় সরকার কর ছাড়ের পথে হাঁটে। ২৭ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ডের মতো কিছু রাজ্যকে আমরা অনুরোধ করার পরেও কোনও কারণে তারা কর ছাড়ের ব্যবস্থা করে ওঠেনি এখনও। তাই রাজ্যবাসীর ভোগান্তিও জারি রয়েছে। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে সর্বাধিক কর আদায় করা হয় প্রতি লিটার পেট্রোল বাবদ। বিহার, কেরল রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ টাকা প্রতি লিটারে কর দেন রাজ্যবাসী।

 

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর ছাড়ের প্রসঙ্গে বলেছেন, "গত ৩ বছরে রাজ্য সরকার ১৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে পেট্রোল এবং ডিজেলের খরচবাবদ। আমাদের রাজ্যের এখনও ৯৭,০০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে। যেদিন এই পাওনা অঙ্কের অর্ধেক অর্থ পেয়ে যাব, তার পরের দিনই আমরা তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে দেব। আমার ভর্তুকি দিতে কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু এভাবে সরকার চালাব কীভাবে?"

 

 

 

More Articles