বাহাত্তুরে বুড়ো হয়েও এত চনমনে! কী রহস্য লুকিয়ে মোদির জীবনযাপনে?
Narendra Modi Fitness Mantra: মোদি নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন। সপ্তাহে এক বা দুবার যোগনিদ্রায় যান!
বয়স ৭২। বাহাত্তুরে বিষয়টা গোলমেলে। এমনিতে আম আদমি হলে অনেকেই মারা যান এই বয়সে, অনেকেই রোগে, বার্ধক্যে জর্জরিত হয়ে সেঁধিয়ে যান ঘরে, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হারিয়ে ফেলেন সমস্ত উদ্যম। বাহাত্তুরে বুড়ো বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে শীর্ণ, ন্যুব্জ, সাদা চুল দাড়ির দেহ। কিন্তু তিনি তো 'আম' নন। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। বয়স তাঁর ৭২ বছর, কিন্তু এদেশ সেদেশ ঘুরে, ভারতের জনসভায় বক্তৃতা দিয়ে, সারাক্ষণ বিরোধীদের কোনও না কোনও বিপাকে ফেলার পরিকল্পনা করে চলেছেন যিনি তিনি নরেন্দ্র মোদি। মোদির কার্যশক্তি অনেক কম বয়সিদেরও লজ্জায় ফেলে দিতে পারে। কীভাবে এত চনমনে প্রধানমন্ত্রী?
মোদি বলছেন, এই বিষয়ে তিনি বিশ্বে একমাত্র ব্যক্তি এমন নন। সারা বিশ্বে অনেক মানুষই আছেন যারা তাদের শক্তি, সময় এবং সম্পদের সম্পূর্ণ ব্যবহার করেন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। এক্ষেত্রে মোদি একা বা ব্যতিক্রমী নন। জীবনকে তিনি খুব তৃণমূল স্তরে প্রত্যক্ষ করেছেন বলে তাঁর দাবি। মোদি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রাজনীতিতে আসার আগে কয়েক দশক ধরে তিনি দেশের প্রায় সমস্ত জেলা ঘুরেছেন। সেখানে জনগণের মাঝে মিশে সক্রিয়ভাবে কাজ করে গেছেন। এই সফরটিই তাঁর শক্তির চাবিকাঠি। কীভাবে? এই যে তিনি প্রতিটি জেলায় অন্তত একদিন করে থেকেছেন বলে দাবি, এই থাকাকালীন এমন অনেক মানুষের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয় যারা তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগান। এই মানুষদের অনেকেই নিজেদের কোনও না কোনও উদ্দেশের লক্ষ্যে নিবেদিত করেছেন। নরেন্দ্র মোদি তাদের কাছ থেকে কর্মশক্তি শিখেছেন।
আরও পড়ুন- অভিজ্ঞতাই পুঁজি! ভারতের সব জেলায় একরাত থেকেছেন, দাবি নরেন্দ্র মোদির
ব্যক্তিগত স্তরে শরীর ও মন চাঙ্গা রাখতে শৃঙ্খলা এবং দৈনন্দিন অভ্যাসের বদলকে গুরুত্ব দেন মোদি। নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন। সপ্তাহে এক বা দুবার যোগনিদ্রায় যান! সক্কালবেলা উঠে হাঁটেন, সকাল ন'টার মধ্যে নিরামিশাষী মোদির প্রাতঃরাশ সারা হয়ে যায়। সাধারণ গুজরাতি খাবারই পছন্দ, তবে নিয়ম করে একবাটি দই খেতে ভোলেন না। আর খান হিমাচলের একটি বিশেষ মাশরুম, Macrula exulenta! গরম জল খান নিয়মিত। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে রাতে আক্ষরিক অর্থেই নাকে সরষের তেল দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপবাসে ভীষণ বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী মোদি গত ৩৫ বছর ধরে নবরাত্রির উত্সবে উপোস করছেন। সপ্তাহে একবার বা দুবার উপোস করার চেষ্টা তো করেনই।
আরও পড়ুন- ১৯৭১-এ সংসার ছেড়েছিলেন মোদি! প্রধানমন্ত্রীর বাকি পরিবারের কথা কেন জানেই না দেশ
তবে মোদি বলছেন, উচ্চাকাঙ্খা এবং লক্ষ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে। যখন কেউ উচ্চাকাঙ্খী হয়ে কাজ করেন তখন যদি তিনি কোনও উত্থান বা পতনের মুখে পড়েন, তারা অস্থির হয়ে যান। উচ্চাকাঙ্খা অবস্থান, ক্ষমতা, স্বাচ্ছন্দ্যর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কেউ যদি কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য কাজ করেন তখন ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কোনও কিছু লাভ করার নেই। তাই এসব উত্থান-পতন তাদের প্রভাবিত করতে পারে না। লক্ষ্যে নিয়োজিত হওয়া মানে অবিরাম আশাবাদ এবং শক্তির উত্স খুঁজে পাওয়া।
মোদি বলছেন, লক্ষ্যে স্থির থাকতে গেলে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া দরকার। নরেন্দ্র মোদি নিজে ১৯৭১ সালে পরিবার ছেড়েছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের মতাদর্শ অনুযায়ী একজন 'প্রচারক'কে পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেই হয়। সবার আগে কাজ! গার্হস্থ্য এবং পারিবারিক ঝুট ঝামেলা, মায়া থেকে মুক্ত হয়ে তবেই সবটুকু দেওয়া যাবে সংঘের মত প্রচারের জন্য। আরএসএসের বিশ্বস্ত নরেন্দ্র মোদি তখন থেকেই নরেন্দ্র মোদি 'ব্রহ্মচারী' জীবনযাপন শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক বা পূর্ণ-সময়ের কর্মী হয়েছিলেন। তাই এখন এত যে শক্তি তিনি সঞ্চয় করেন, উৎপাদন করেন তা দিয়ে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করাই আমার লক্ষ্য। কাজই তাঁকে শক্তি জোগায়।

Whatsapp
