নিজেকে অতিরিক্ত ভালবাসেন? জানেন কোন কঠিন অসুখে ভুগছেন?

এই ধরনের মানুষদের সম্পর্কে সচেতনভাবে পড়াশোনা বা জানার চেষ্টা করতে পারেন।

আপনার প্রিয় বন্ধু বা কাছের মানুষের মধ্যে কেউ কি খুব আত্মকেন্দ্রিক? হতে পারে, তিনি 'নার্সিসিস্ট'। আর একজন নার্সিসিস্ট কিন্তু তাঁর পাশের মানুষগুলোর জীবন নরক করে তুলতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, আপনার পার্টনার যদি নার্সিসিস্ট হয়ে থাকে, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন। কারণ এমন সম্পর্কে অপর ব্যক্তি কখনই ভালো থাকতে পারে না। নিজেকে ভালবাসা এবং নার্সিসিস্টিক চরিত্রের মধ্যে কিন্তু বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেকেই আছেন, যাঁরা সারাদিন নিজের সেলফি তুলতে পছন্দ করেন। অনেক সময় তাঁদের ক্ষেত্রেও নার্সিসিস্ট কথাটি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এর অর্থ অনেক গভীর, যা জানলে অবাক হবেন। চলুন বোঝা যাক, নার্সিসিস্ট কারা? কী করে বুঝবেন, আপনার প্রিয় মানুষদের মধ্যেও কেউ এমন সমস্যায় ভুগছে কি না!

নার্সিসিজিম কী?
প্রথমদিকে মনে করা হত, নার্সিসিজম কোনও রোগ নয়, বরং একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তবে এটি যে এক ধরনের মানসিক সমস্যা, তা বর্তমানে সব মনোবিজ্ঞানীই প্রায় মেনে নিয়েছেন। নার্সিসিজম কথাটির অর্থ হল, নিজের প্রতি মুগ্ধ হয়ে থাকা এবং সেই মুগ্ধতার কারণেই আশপাশের মানুষকে একপ্রকার অবজ্ঞা করে চলা। মোটা দাগে দেখতে গেলে, নিজেকে ভালবাসা বা আত্মপ্রেম কিন্তু খারাপ কিছু নয়। তবে অতিরিক্ত আত্মপ্রেম মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে।আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষ অন্যের প্রতি কম সহানুভূতিশীল হয়ে থাকেন। হেলথ গাইড এবং হেলথ লাইন অনুসারে, নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (এনপিডি) এমন একটি অবস্থাকে বোঝায়, যেখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের তুলনায় বড় এবং আদর্শ বলে মনে করেন। এছাড়াও তাঁরা সবসময় আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে চান।নিজের সম্পর্কে সমালোচনা এঁরা মোটেও ভালোভাবে নেন না। নার্সিসিস্ট লোকেরা খুবই অহংকারী হয়ে থাকেন।

নার্সিসিজম নিয়ে একটা মজার গল্প আছে, যা হয়তো অনেকেরই অজানা। গ্রিক মাইথোলজিতে পাওয়া যায়, নার্সিসাস নামে এক সুদর্শন যুবক ছিল। ইকো নামের এক দেবী তাঁকে প্রেমনিবেদন করলে, সে তা প্রত্যাখ্যান করে। ইকো তখন তাঁকে অভিশাপ দেন, এক সময় সে তার নিজের রূপের অহংকারে নিজেই শেষ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: আতঙ্কের স্মৃতি কী ভাবে ধরে রাখে মস্তিষ্ক, হাতেকলমে দেখালেন বিজ্ঞানীরা

একসময় সত্যি তাই-ই হয়। একদিন সে জল খেতে গিয়ে পুকুরে নিজের ছায়া দেখে নিজের প্রেমেই পড়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। দিনের পর দিন এমন চলতে থাকলে সে মারা যায়। পরে সে একটি ফুলে পরিণত হয়। যার নাম দেওয়া হয় নার্সিসাস ফুল।

আপনার চারপাশে যাঁরা নার্সিসিস্ট, তাঁদের চিনবেন কী করে?

আপনার কাছের মানুষদের মধ্যে এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি আছে কি না, ভালোভাবে লক্ষ করুন।

১. অতিরঞ্জন: নার্সিসিস্ট ব্যক্তিরা সাধারণত নিজেদের সব অ্যাচিভমেন্টকে বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলিকে অতিরঞ্জিত করে মানুষের কাছে তুলে ধরেন।

২. দৃষ্টি আকর্ষণকারী: এই ধরনের মানুষরা সবসময় তাঁর পাশের মানুষদের থেকে প্রশংসা আশা করেন।নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন।

. অবুঝ: নার্সিসিস্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এমন ব্যক্তি কখনওই পাশের মানুষকে বোঝার চেষ্টা করেন না। কাছের মানুষটি কোনও পরিস্থিতিতে কেমন অনুভব করেছেন, তাও বুঝতে অক্ষম এঁরা। তাই এমন কোনও মানুষ জীবনসঙ্গী হলে ঝামেলা-অশান্তি লেগেই থাকে। সম্পর্কে থাকা অন্য ব্যক্তি কখনওই সুখী হন না।

৪. ইগোসর্বস্ব: নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এঁদের প্রচণ্ড ইগো থাকে। অর্থাৎ, নিজে কখনওই হার মানতে চান না। অন্যের কোনও মতামত ভালো লাগলেও কিছুতেই মানতে পারেন না। যে কোনও অবস্থাতেই নিজেকে বড় হিসেবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন।

. অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস: এঁরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন। এঁদের মধ্যে লজ্জা বা অপরাধবোধ খুব কম কাজ করে।

. জ্ঞান দেওয়া: এই ধরনের মানুষ অন্যের উপকার করতে ভালবাসেন। তবে প্রতিনিয়ত মানুষকে উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করেন। সব ক্ষেত্রেই নিজের জ্ঞানের প্রদর্শন করার চেষ্টা করেন।

৭. দিবাস্বপ্ন: নার্সিসিজমে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন। নিজেকে অনেক সফল হিসেবে কল্পনা করাই তাঁদের প্রিয় কাজ। ভবিষ্যতে অনেক সফল এবং প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি হিসেবে কল্পনা করতে পছন্দ করেন নার্সিসিস্ট মানুষরা। তাঁরা নিজেকে বাকি সবার থেকে বেশি ক্ষমতাবান এবং আলাদা ভাবতে ভালবাসেন। তাছাড়া ধনী হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থাকে এঁদের মধ্যে।

কেমন ব্যবহার করবেন এই ধরনের মানুষের সঙ্গে?

 

১. একজন নার্সিসিস্ট ব্যক্তির থেকে অবশ্যই দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করুন। এতটাই দূরত্ব রেখে চলুন, যাতে তিনি কখনওই তা টপকে আপনাকে বিরক্ত করতে না পারেন।

২. যখন আপনি কোনও নার্সিসিস্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন, খুব বুঝে শব্দ ব্যবহার করুন। এঁদের নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করলেও কিন্তু তাঁরা বিরক্ত বোধ করেন।

৩. এই ধরনের মানুষদের সম্পর্কে সচেতনভাবে পড়াশোনা বা জানার চেষ্টা করতে পারেন। তাহলে বুঝতে পারবেন, এঁদের সাথে কী ধরনের ব্যবহার করতে হয়। এর ফলে আপনি নিজেও তাঁদের সঙ্গে মোকাবিলা করার কৌশল সাজাতে পারবেন।

৪. খুব কাছের বা ভালবাসার মানুষের মধ্যে এই ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকলে ভুলেও তাঁর থেকে কিছু আশা রাখবেন না। কারণ এঁরা কখনওই আপনার পছন্দ বা অপছন্দ নিয়ে ভাবেন না। তাই এঁদের থেকে কিছু প্রত্যাশা না রাখাই ভালো।

More Articles