সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললেই মুক্তি হাঁপানি থেকে, জেনে নিয়ে সতর্ক হন আজই
আপনি যদি হাঁপানির সমস্যায় ভুগতে থাকেন, তাহলে আপনার কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা উচিত। হাঁপানি কিংবা অ্যালার্জি না হলেও মেনে চলুন এইসব পদ্ধতি। কারণ সাবধানের মার নেই।
এই মুহূর্তে পরিবেশে দূষণ এতটাই মারাত্মক চেহারা নিয়েছে যে, সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুশকিল। হাঁপানির রোগে ভোগেন যাঁরা, তাঁদের পক্ষে এই পরিস্থিতি কষ্টকর। কোনও কোনও ঋতুতে এই সমস্যা আরও বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। ধোঁয়া-ধুলো এবং অন্যান্য নানা বিষয় আমাদের শ্বাসকষ্ট আরও বাড়িয়ে তুলছে দিনে দিনে, কিন্তু এর সমাধানের উপায় কী? সহজ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই হাঁপানির অসুখ এড়ানো সম্ভব।
হাঁপানি রোগের সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
শুধুমাত্র আমাদের চারপাশে ধোঁয়া-ধুলোই নয়, আরও অনেক কারণে আমাদের শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কর্মব্যস্ততার মাঝে আমাদের সারাদিন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থেকে শুরু করে দূষিত গ্যাস এবং ধোঁয়ার মধ্যেই জীবন অতিবাহিত হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় হাঁপানি দেখা গেলে চিকিৎসার ভাষায় তাকে 'অকুপেশনাল অ্যাজমা' বলা হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের অনেক ক্ষেত্রে অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রধানত কারণ হিসেবে পোকামাকড়, বিভিন্ন দূষিত খাবার, ফুলের রেণু, ধুলো কিংবা কোল্ড ড্রিঙ্ক থেকেও এই অ্যালার্জি হতে পারে। শুনলে অবাক হতে পারেন, তবে আমাদের ঘরে পোষা জীবজন্তুদের লোম কিংবা স্যালাইভা থেকেও অ্যালার্জির সমস্যা অনেক সময় বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরবর্তীকালে তা শ্বাসকষ্টকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
অ্যালার্জি সম্পর্কে আমাদের কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণা অনেক সময় আমাদের হাঁপানি কিংবা অ্যাজমা হলে চিকিৎসকদের কোনওরকম পরামর্শ নিই না, বরং দিনে অনেকবার নিজেদের ইচ্ছেমতো ইনহেলার নিয়ে থাকি। তবে এটি আখেরে লাভের থেকে ক্ষতিই আরও বেশি করে। হয়তো ইনহেলার সাময়িকভাবে আপনাকে স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু পরবর্তীকালে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ঘনঘন ওষুধ না খেয়ে কীভাবে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? এক্ষেত্রে নিয়মগুলি বলার আগে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, তা হলো, সবসময় চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। একই সঙ্গে যদি কয়েকটি পদ্ধতি মেনে চলেন, তবে তা আপনাকে স্বস্তি দেবে।
আরও পড়ুন: বদহজম কাটাতে মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন, অজান্তেই ডেকে আনছেন মারণ রোগ
হাঁপানি কমানোর জন্য মেনে চলা কয়েকটি নিয়ম
আপনি যদি হাঁপানির সমস্যায় ভুগতে থাকেন, তাহলে আপনার কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা উচিত। হাঁপানি কিংবা অ্যালার্জি না হলেও মেনে চলুন এইসব পদ্ধতি। কারণ সাবধানের মার নেই।
আমরা প্রত্যেকদিন অবসর সময়ে মোবাইল ঘাঁটা থেকে শুরু করে টিভি দেখার মতো কাজ করে থাকি। তবে তা থেকে কিছুটা সময় বের করে প্রতিদিন ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা প্রয়োজন। এই ধরনের অভ্যেস যদি আপনি প্রতিদিনের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ এবং বের হওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা আপনাকে সুস্থ থাকতে কিংবা হাঁপানি রোধ করতে সহায়তা করবে।
অনেকের বাড়িতেই কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে অন্যান্য একাধিক জীবজন্তু পোষ্য হিসেবে থাকে, এক্ষেত্রে তাদের লোম কিংবা স্যালাইভা থেকে আমাদের অ্যালার্জি পর্যন্ত হতে পারে। যদি আপনার এই সমস্যাটি থেকে থাকে, তবে তাদের খুব একটা কাছে না যাওয়াই ভালো।
তৃতীয়ত, যদি মরশুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার হাঁপানি রোগ বৃদ্ধি পায়, তাহলে সচেতন থাকুন। যদি আপনার শীতকালে 'ঠান্ডা' লাগার ধাত থাকে, তবে সাবধান থাকা উচিত। এক্ষেত্রে শীতকালে গরম পোশাক সবসময় নিজের কাছে রাখুন এবং গরমকালে এয়ার কন্ডিশনড ঘরেও বেশিক্ষণ থাকা উচিত না। এক্ষেত্রে সময় রাখুন নির্দিষ্ট। এমনকী, বর্ষাতেও আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টিতে ভেজার হাত থেকে বাঁচতে হবে এবং যদি কোনওমতে জলের ফোঁটা শরীরে প্রবেশ করে, তবে ঘরে প্রবেশ করে তৎক্ষণাৎ পোশাক পরিবর্তন করে নেবেন।
এছাড়াও আমাদের মধ্যে অনেকেরই গ্রীষ্মকালে ফ্রিজের ঠান্ডা জল না হলে একপ্রকার চলে না। তবে আপনি যদি হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে এই মুহূর্ত থেকে এই অভ্যেসটি থেকে বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানীয় কখনওই আপনার শরীরের জন্য উপযোগী নয়।
মেনে চলুন আরও কয়েকটি নিয়ম
হাঁপানি কিংবা অ্যাজমা রোগীদের রাস্তাঘাটে বেরিয়ে যদি আচমকা সমস্যা বৃদ্ধি পায়, সেক্ষেত্রে সবসময় ব্যাগে ইনহেলার রাখা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে যতটা কম সম্ভব, এটি ব্যবহার করা উচিত।
আমাদের মধ্যে আরও একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, দিনের যে কোনও সময়, বিশেষত মাঝরাতে যদি শ্বাসের সমস্যা বৃদ্ধি পায়, তবে আমরা অনেকেই চা কিংবা কফি খেতে পছন্দ করি। আমরা অনেকেই ভাবি যে, চা-কফি খেলে আমাদের শারীরিক সমস্যা কমে যাবে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে চা-কফি পান আমাদের সমস্যা আরও বৃদ্ধি করে। যদি গভীর রাতের দিকে এই সমস্যা আপনাকে কষ্ট দেয়, তবে একগ্লাস জল নিন এবং সেখানে কিছুটা নুন দিয়ে পান করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার শরীরে কোনওরকম সমস্যা সৃষ্টি হবে না এবং হাঁপানির সমস্যা কিছু সময়ের মধ্যে কমে যাবে।
আরও একটি ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে, যার সম্পর্কে বলে রাখা ভালো। উল্লেখ্য, সরষের তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই পরিচিত। হাঁপানির ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার অনস্বীকার্য। কম পরিমাণ সরষের তেল নিয়ে যদি বুকে মাসাজ করা যায়, তবে হাঁপানি থেকে স্বস্তি মেলা সম্ভব। তবে এসব পদ্ধতি আপনাকে স্বস্তি দিলেও সর্বদা ডাক্তারি পরামর্শ মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
শেষে একটি কথা বলতে হয় এবং সেটি হলো, যদি গর্ভাবস্থায় কোনও মহিলা ধূমপান করে থাকেন, তবে তার শিশুর হাঁপানি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে আপনি যদি সুস্থ এবং স্বাভাবিক বাচ্চা প্রত্যাশা করে থাকেন, তবে তৎক্ষণাৎ ধূমপান বন্ধ করতে হবে।