টেসলার শেয়ারে বড়সড় ধস! ট্রাম্প-মাস্ক বাকযুদ্ধের পরিণতি কী?

Elon Musk vs Donald Trump : ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের সম্পর্কের তিক্ততায় আমেরিকার অন্তর্বর্তী রাজনীতি নতুন বাঁক নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে আমেরিকার অর্থনীতিতেও।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের বিরোধ এখন প্রকাশ্য। সমাজমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে মেতেছেন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দুই ব্যক্তি। তবে কিছুদিন আগেও তাদের বন্ধুত্ব ছিল  আলোচনার বিষয়। ইলন মাস্ক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগযুদ্ধে কী প্রভাব পড়বে?

হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের রিপাবলিকানরা খুব কম সময়ে একটি বিশাল কর ও ব্যয় বিল পাস করে। ট্রাম্প এবং অন্যান্য রিপাবলিকানরা প্রায়শই এটিকে "বড় সুন্দর বিল" বলে উল্লেখ করেছেন। এতে বর্ধিত কর বাদ, ফেডারেল সুবিধার পাওয়ার জন্য যোগ্যতার সীমা বাড়ানো, জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি রয়েছে। বিলটি এখন সিনেটে যাচ্ছে। ট্রাম্পের ডেস্কে পৌঁছানোর আগে বিলের বিধানগুলি পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে।মাস্ক ঘাটতি কমাতে চান, কিন্তু সিনেটে তার উল্টো হচ্ছে। এরপর আমেরিকার সরকারের কর ও ব্যয়নীতির সমালোচনা করে‌ 'জঘন্য' বলে উল্লেখ করেন ইলন মাস্ক। এই মন্তব্যের পর থেকেই ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়ে। বলে রাখা ভালো, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গভীর হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কুর্সিতে বসাতে প্রকাশ্যে প্রচারেও নেমেছিলেন ইলন মাস্ক। এখন ট্রাম্পের সঙ্গে ক্রমশ তিক্ত হচ্ছে আমেরিকার অন্যতম ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্কের সম্পর্ক।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের সম্পর্কের তিক্ততায় আমেরিকার অন্তর্বর্তী রাজনীতি নতুন বাঁক নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে আমেরিকার অর্থনীতিতেও। আমেরিকার সরকারের উপর ভর করে ইলন মাস্কের যেসব ব্যবসা চলছে সেগুলো নিয়ে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা ভালো, এসব ব্যবসা মাস্কের স্পেসএক্স কর্মসূচির একপ্রকার প্রাণ। সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে  ট্রাম্প লিখেছেন, "আমাদের বাজেটে কোটি কোটি ডলার সাশ্রয়ের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইলনের সরকারি ভর্তুকি এবং চুক্তি বাতিল করা।"

ট্রাম্প ইতোমধ্যেই মাস্কের কোম্পানিগুলির সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিলের কথা বলেছেন। তিনি তাঁর প্রশাসন থেকে মাস্কের মিত্রদেরও সরিয়ে দিতে পারেন। মাস্কের ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়ে বাইডেনের আমলের তদন্তও আবার শুরু করতে পারেন। অন্যদিকে, ইলন মাস্কেরও অগাধ সম্পত্তি রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বিরোধ চলতে থাকলে আগামী বছর আমেরিকার নির্বাচন ও প্রাইমারিতে রিপাবলিকানদের বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বীদের তিনি অর্থ সাহায্য করতে পারেন।

ট্রাম্প যদি সত্যিই তাঁর সরকারকে মাস্কের বিরুদ্ধে উস্কে দেন, তাহলে মাস্কের চিন্তা বাড়তে পারে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার (৫,জুন) টেসলার (মাস্কের মালিকানাধীন ইলেকট্রিক গাড়ি ও ক্লিন এনার্জি কোম্পানি) শেয়ারের দামও ১৪ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে পাল্টা ইলন মাস্কও তাঁর কোম্পানিগুলির তহবিল কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। জবাবে বলেছেন, তিনি তাঁর ড্রাগন মহাকাশযানটি বাতিল করার কথাও ভাবছেন। যদিও পরে এই মন্তব্য থেকে সরে এসেছেন মাস্ক।

মাস্কের প্রধান দুটি কোম্পানি স্পেস এক্স এবং টেসলা আমেরিকা সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের সাহায্য পেয়েছে। স্পেস এক্সের অনেক চুক্তি আবার অতিগোপনীয় কাজ সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত। এতে অনুদানের আসল হিসেব পাওয়া কঠিন। স্পেস এক্সের প্রেসিডেন্ট গোয়েন শটওয়েল  আগেই জানিয়েছিলেন, আমেরিকা সরকারের সঙ্গে কোম্পানিটির ২২ বিলিয়ন ডলারের মতো চুক্তি রয়েছে। আমেরিকার সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবছরে স্পেস এক্স মার্কিন সরকারের কাছ থেকে ৩৮০ কোটি ডলার অর্থ সাহায্য পেয়েছে। মার্কিন সরকারের সঙ্গে স্পেস এক্সের বড়ো চুক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন কর্মসূচি। এই চুক্তির আর্থিক মূল্য ৭৩৩ মিলিয়ন ডলার। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা হয়েছে, বিগত বছরগুলিতে চুক্তি, ঋণ ও ভর্তুকির ভিত্তিতে ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলি আমেরিকার সরকারের কাছ থেকে অন্তত ৩৮ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।

উল্লেখ্য, ইলন মাস্ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হয়তো জিততে পারবেন না, কিন্তু রাজনীতিতে ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের এটি একটি চিন্তার বিষয় হবে। এ কথা বুঝতে পেরেই হয়তো বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে নিজের কথার রাশ টেনেছেন ট্রাম্প। দেখা গিয়েছে হোয়াইট হাউসের একটি অনুষ্ঠানেও আজকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে জল এতদূর গড়িয়েছে যে সহজে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন। এই সংঘাতের পরিণাম কী হবে, তার উত্তর দেবে সময়।

More Articles