চাঁদে বা মহাকাশে কীভাবে অন্তর্বাস কাচেন মহাকাশচারীরা? অবাক করবে যে তথ্য
Space Laundry: চাঁদে বা তার বাইরে স্পেসস্যুটের অভ্যন্তরীণ পোশাকগুলি নিয়মিতভাবে ধোয়া নাও সম্ভব হতে পারে
জামাকাপড় কাচা। শুনলেই রোদ ঝলমলে দিনও বিষণ্ণ হয়ে যায়, মেঘলা দিন হয়ে ওঠে কেয়ামতের শেষ পর্যায়। এই একটি কাজ খুব ভালোবেসে যে কেউ করেন, তার বিশেষ প্রমাণ নেই। সারা সপ্তাহ যদি ব্যস্ত তাহলে ছুটির দিনের বড় বেলাই চলে যায় জামা কাচতে। শুধু তো কাচা না, তাকে মেলো রে, শুকোও রে, ইস্ত্রি করে গুছিয়ে রাখো রে! পোশাক কেনার সময়, বা তা পরে তাক লাগানোর সময় মেজাজ যতটা ফুরফুরে থাকে, পোশাক পরিষ্কারের বেলা সেই মেজাজই একেবারে সপ্তমে ওঠে। নানাবিধ ডিটারজেন্ট এবং ওয়াশিং মেশিন মানুষের কায়িক শ্রম অনেক লাঘব করেছে একথা সত্য, তবে সেই বিরক্তি রয়ে গিয়েছে একই। সে না হয় আপনি পৃথিবীতেই থাকেন, জামা কাচার জলও আছে, সাবানও চাইলেই পাবেন, মেশিন না থাক বাথরুমেই বালতিতে ভরে কেচে নেবেন, বারান্দায়, উঠোনে, রাস্তায় শুকিয়েও নেবেন। ধরুন মহাকাশে গেলেন, সেখানে ওই মহাকাশযানের ভেতর যখন ভাসছেন, তখন কাচবেন কীভাবে? মাসের পর মাস যতই ঘাম না হোক, একই জামা পরে থাকা যায় নাকি! নিদেনপক্ষে অন্তর্বাস তো বদলাতে হবেই! ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে বসে, ওয়াশিং মেশিন, এমনকী জল ছাড়া কীভাবে জামা কাপড় কাচেন মহাকাশচারীরা?
মহাকাশচারীরা ২০২৫ সালের মধ্যেই সম্ভবত আর্টেমিস মিশনে চাঁদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই বিজ্ঞানীরা এখন মহাকাশচারীদের চাঁদের পৃষ্ঠের কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার যেমন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাদের নতুন স্পেসসুটগুলিকেও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করার জন্য সেরা কাপড়ের সন্ধানও করছেন।
মহাকাশে কী কী অবস্থার মধ্যে পড়তে হতে পারে? চরম তাপমাত্রা, স্থান বিকিরণ এবং ধূলিকণার সংস্পর্শ। এই ধূলিকণা এক বড় সমস্যা। অ্যাপোলো স্পেসসুটগুলি এই ধূলিকণাতে ঢেকে গিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। আর্টেমিস দল ভবিষ্যতে চাঁদের পৃষ্ঠে প্রায় ২,৫০০ ঘণ্টা কাটাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সমুদ্রে স্নান করে পোশাকে বালি ঢুকলে কেমন লাগে টের তো পেয়েছেন নিশ্চয়ই, এবার ভাবুন ওই অতক্ষণ যদি বালির ঘর্ষণের মধ্যে থাকতে হয়, অবস্থাটা কী দাঁড়াবে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, স্পেসসুটের মধ্যে জীবাণুর বৃদ্ধি। যেহেতু স্পেসস্যুটগুলি সকলে ভাগাভাগি করে পরেন তাই জীবাণুদের রোধ করার চেষ্টাও ভাবাচ্ছে।
আরও পড়ুন- চাঁদে কি আদৌ কোনও দিন পা দিয়েছিলেন নীল আর্মস্ট্রং?
রোজ পৃথিবীতে অন্তর্বাস পরিষ্কার করার বিষয়টা তেমন খটোমটো না। ডিটারজেন্ট, ওয়াশিং মেশিন এবং ড্রায়ার থাকলে তো কোনও ব্যাপারই না। কিন্তু চাঁদে বা তার বাইরে স্পেসস্যুটের অভ্যন্তরীণ পোশাকগুলি নিয়মিতভাবে ধোয়া নাও সম্ভব হতে পারে, বলছেন ইওরোপিয় স্পেস এজেন্সির (ESA) উপকরণ এবং প্রক্রিয়া প্রকৌশলী মালগোরজাটা হলিন্সকা।
স্পেসসুটগুলি বিভিন্ন মহাকাশচারীর মধ্যে ভাগ করে পরা হয় এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহারের কারণে বিবিধ অণুজীবের বৃদ্ধির অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি হয় তাতে। অণুজীবের বৃদ্ধি এড়াতে বিকল্প সমাধান খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। ESA এই নতুন স্পেসসুটগুলির জন্য উপযুক্ত অভিনব উপকরণ নিয়ে কাজ করছে যা অ্যাপোলোর যুগে ছিল না। অস্ট্রিয়ার বায়োসিডাল অ্যাডভান্সড কোটিং টেকনোলজি ফর রিডিউসিং মাইক্রোবিয়াল অ্যাক্টিভিটি (BACTeRMA) স্যুটগুলির ভিতরের আস্তরণের মধ্যে, মূলত মহাকাশচারীদের অন্তর্বাসের মধ্যে জীবাণুর বৃদ্ধিকে ঠেকানোর উপায় খুঁজছে৷
আরও পড়ুন- চাইলেও মৃত্যু হয় না কখনও, পৃথিবী হোক বা মহাকাশ, সর্বত্র কার্যত অমর এই আণুবীক্ষণিক জীব
এর জন্য খানিক কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পথেই এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, এতে তাঁদের আস্থা 'সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটস'-এর উপর। এগুলি জীবাণু দ্বারা উত্পাদিত যৌগ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থার বিরুদ্ধে জীবাণুকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। রুপো এবং তামার মতো সুপরিচিত অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হতে পারে এবং মহাকাশচারীদের ত্বকের পক্ষে আরামদায়ক নাও হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের দলটি এই সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটগুলি থেকে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করেছে। এই ব্যাকটেরিয়া মেটাবোলাইটগুলির সঙ্গে পোশাকের প্রক্রিয়াকরণ কৌশল নিয়ে পরীক্ষা চলছে। এই অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল টেক্সটাইলগুলি যদি সফল হয় স্পেসসুটের জন্য তো বটেই, আরও নানা কিছুর ক্ষেত্রেই তা নতুন পথের জন্ম দেবে। PExTex এবং BACTeRMA-এর ফলাফলগুলি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল চিকিত্সার ক্ষেত্রে এবং স্মার্ট টেক্সটাইল প্রযুক্তির নতুন এক ধাপ বলা যেতে পারে৷ স্পেস আন্ডারওয়্যারের ক্ষেত্রে এই স্মার্ট টেক্সটাইল প্রযুক্তির মহাকাশেও আরামদায়ক অনুভূতি নিয়ে আসবে মহাকাশচারীদের জন্য৷