কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা কীভাবে বদলে দেবে নতুন চ্যাটজিপিটি-৫?
Chatgpt-5 : সফটওয়্যারের ক্রমোন্নতি থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই জিপিটি-৫ গভীরভাবে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে গবেষণার শীর্ষস্থানীয় সংস্থা ওপেন এআই (OpenAI) তাদের বহু প্রতীক্ষিত নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল জিপিটি-৫ (GPT-5) প্রকাশ করেছে। সংস্থার সিইও স্যাম অল্টম্যান এই মডেলটিকে 'আপনার পকেটে থাকা পিএইচডি-স্তরের বিশেষজ্ঞ' (PhD-level experts in your pocket) বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর এই উক্তিটি কেবল বিজ্ঞাপনের জন্য বলা নয়, বরং এটি জিপিটি-৫-এর গভীর বিশ্লেষণ ক্ষমতার পরিচায়ক। এখন থেকে চ্যাট জিপিটি-র সমস্ত ব্যবহারকারী, এমনকি যারা বিনামূল্যে পরিষেবা ব্যবহার করেন, তাঁরাও এই নতুন এবং শক্তিশালী মডেলটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন-
সৌরজগতে ঢুকে এসেছে অচেনা ধূমকেতু, ‘অ্যাটলাস’ সম্পর্কে কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
জিপিটি-৫-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর সিস্টেমশৈলী (Unified System Architecture)। পূর্ববর্তী মডেলগুলির ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন-ভিন্ন মডেল বা মোড বেছে নিতে হত। কিন্তু জিপিটি-৫-এর এই ধারণাকে আমূল পরিবর্তন করেছে। এর ভেতরে একটি রিয়েল-টাইম রাউটার সিস্টেম কাজ করে, যা ব্যবহারকারীর প্রশ্নের জটিলতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে। যদি প্রশ্নটি সহজ বা সাধারণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে হয়, তবে একটি দ্রুত এবং কার্যকর মডেল সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দেয়। অন্যদিকে, যদি প্রশ্নটির ক্ষেত্রে জটিল, বিশ্লেষণধর্মী বা গভীর চিন্তাভাবনার প্রয়োজন হয়, তখন সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি গভীর যুক্তি-ভিত্তিক (deeper reasoning) মডেলকে সক্রিয় করে।

জিপিটি-৫
মনে করা হচ্ছে, এই স্বয়ংক্রিয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার ফলে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি সাবলীল এবং কার্যকর হবে। ব্যবহারকারীকে আর ভাবতে হবে না কোন মোড ব্যবহার করা উচিত। ওপেন-এআই জানিয়েছে যে, এই সিস্টেমটি ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে ক্রমাগত নিজেকে উন্নত করতে থাকে। ব্যবহারকারীরা যখন কোনো উত্তরের পক্ষে বা বিপক্ষে মত দেন, তখন সেই সংকেতগুলি সিস্টেমকে আরও নির্ভুল হতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ব্যবহারকারীরা চাইলে ইচ্ছাকৃতভাবে 'গভীর যুক্তি'-র মোডটি সক্রিয় করতে পারেন। এর জন্য তাদের প্রশ্নে 'এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন' (think hard about this) বা এই ধরনের কোনো বাক্যাংশ যোগ করতে হবে।
ডেভেলপারদের মধ্যে এটি 'ভাইব কোডিং' (vibe coding) নামক একটি নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। এর অর্থ হলো, ব্যবহারকারী বিষয়টি সম্পর্কে শুধুমাত্র একটি সাধারণ ধারণা দিলেই জিপিটি-৫ প্রায় সম্পূর্ণ একটি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে দেবে, যেখানে ব্যবহারকারীর নির্দেশক ভূমিকা থাকবে ন্যূনতম। Cursor, Windsurf, এবং Vercel-এর মতো সংস্থাগুলি, যারা প্রাথমিক পর্যায়ে মডেলটি পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছে, তারা জানিয়েছে যে আগের মডেলগুলির তুলনায় এর কোডের মান অনেক উন্নত এবং ভুলের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
আরও পড়ুন-
ঘোড়ার দড়ি ছিঁড়ে জন্ম নিল ‘একাকী ঢেউ’! বিজ্ঞানের সব বোঝাপড়া তোলপাড় যে আবিষ্কারে…
তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি বড় মুশকিল হলো, তা অনেক সময় ভুল তথ্য সরবরাহ করতে পারে। ওপেন এআই জানিয়েছে যে, ওয়েব সার্চিং সক্ষম থাকা অবস্থায় জিপিতি-৫ তার পূর্বসূরি জিপিটি-৪০-এর তুলনায় ৪৫ শতাংশ কম ভুল করে। এবং এর গভীর যুক্তি মোডটি আগের '০৩' মডেলের তুলনায় ৮০ শতাংশ কম ভুল ফলাফল দেয়। এই পরিসংখ্যানগুলি প্রমাণ করে যে জিপিটি-৫ তথ্যের নির্ভুলতা এবং নির্ভরযোগ্যতার উপর কতটা জোর দিয়েছে।
ওপেন এআই এই শক্তিশালী মডেলটিকে সকল স্তরের ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। যাঁরা বিনামূল্যে পরিষেবা ব্যবহার করেন, তাঁরা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত জিপিটি-৫ ব্যবহার করতে পারবেন। সীমা অতিক্রম করলে তাদের জিপিটি-৫ মডেলে পরিবর্তিত করা হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে এন্টারপ্রাইজ এবং শিক্ষাক্ষেত্রের গ্রাহকদের জন্যও এই পরিষেবা চালু করা হতে চলেছে।

স্যাম অল্টম্যান
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে এর সুরক্ষার প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই বিষয়ে ওপেন এআই একটি নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, যার নাম 'সেফ কমপ্লিশনস' (Safe Completions)। এই পদ্ধতির লক্ষ্য হলো, বিপজ্জনক বা অনুপযুক্ত কোনো প্রশ্নকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে, সুরক্ষাসীমার মধ্যে থেকে একটি সহায়ক এবং নিরাপদ উত্তর প্রদান করা। ওপেন এআই-এর সুরক্ষা-গবেষণার প্রধান অ্যালেক্স বেউটেলের মতে,
এই পদ্ধতির ফলে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ব্যবহারকারীরা একাধারে নিরাপদ এবং বেশি সহায়ক উত্তর পেয়েছেন। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও দায়িত্বশীল এবং ব্যবহারকারীর বন্ধু করে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সফটওয়্যারের ক্রমোন্নতি থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই জিপিটি-৫ গভীরভাবে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্যাম অল্টম্যানের ভাষায়, পকেটে একজন পিএইচডি-স্তরের বিশেষজ্ঞ রাখার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে, জিপিটি-৫-এর সৃজনশীলতার এক নতুন যুগের সূচনা করল।

Whatsapp
