কোয়ান্টাম দূরত্বের আবিষ্কার কীভাবে বদলে দেবে যাবতীয় কম্পিউটারের চেহারা?
Quantum Distance : দুটি ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম অবস্থা একে অপরের থেকে কতটা ভিন্ন বা একই রকম, তার একটি গাণিতিক পরিমাপ হল কোয়ান্টাম দূরত্ব।
এই প্রথমবার একদল আন্তর্জাতিক গবেষক কোনো কঠিন পদার্থের মধ্যে 'কোয়ান্টাম মেট্রিক টেনসর' বা 'কোয়ান্টাম দূরত্ব' সরাসরি পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এই যুগান্তকারী গবেষণা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৫ জুন ২০২৫, 'সায়েন্স' পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন-
কোয়ান্টাম মেকানিক্সে সাড়া জাগানো এই আবিষ্কারই নোবেল এনে দিল তিন পদার্থবিজ্ঞানীকে
কোয়ান্টাম দূরত্ব আসলে কী? এতদিন পর্যন্ত 'কোয়ান্টাম দূরত্ব' ধারণাটি শুধুমাত্র তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সহজ ভাষায়, এটি দুটি ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম অবস্থা একে অপরের থেকে কতটা ভিন্ন বা একই রকম, তার একটি গাণিতিক পরিমাপ হল কোয়ান্টাম দূরত্ব। যদি দুটি ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম অবস্থা সম্পূর্ণ এক হয়, তবে তাদের মধ্যে কোয়ান্টাম দূরত্ব হবে এক; আর যদি তারা সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী হয়, তবে দূরত্ব হবে শূন্য।

কোয়ান্টাম দূরত্বের গ্রাফিক্স-রূপ
এতদিন এই দূরত্ব গণনা করার কোনো প্রত্যক্ষ পদ্ধতি বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না। ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কিউন সু কিম এবং সিওল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বম-জুং ইয়াং-এর নেতৃত্বে গবেষকদলটি এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাঁরা পরীক্ষার জন্য বেছে নিয়েছিলেন 'ব্ল্যাক ফসফরাস' নামক একটি বিশেষ পদার্থকে। ব্ল্যাক ফসফরাস-এর সরল পারমাণবিক গঠনের কারণে এটি ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম দূরত্ব অধ্যয়নের জন্য একটি আদর্শ উপাদান হিসেবে প্রমাণিত।
আরও পড়ুন-
সৌরজগতে ঢুকে এসেছে অচেনা ধূমকেতু, ‘অ্যাটলাস’ সম্পর্কে কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
এই আবিষ্কারের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। গবেষণার প্রধান, অধ্যাপক কিম জানিয়েছেন যে,
কোয়ান্টাম দূরত্বের একটি নির্ভুল পরিমাপ আমাদেরকে 'ত্রুটি-সহনশীল কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন' (fault-tolerant quantum computation) প্রযুক্তি বিকাশে সহায়তা করবে।
বর্তমান কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সহজেই ভুল করে। কোয়ান্টাম দূরত্বের সঠিক পরিমাপের মাধ্যমে আরও স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা সম্ভব হবে, যা প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় বহুগুণ শক্তিশালী হবে। অধ্যাপক কিম একটি সুন্দর উপমা দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন,
একটি নিরাপদ অট্টালিকা নির্মাণের জন্য যেমন নির্ভুল দূরত্বের পরিমাপ অপরিহার্য, তেমনই কোয়ান্টাম প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্য পরিচালনার জন্য কোয়ান্টাম দূরত্বের সঠিক পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই গবেষণা শুধুমাত্র কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর মাধ্যমে আরও উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি, উচ্চ-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য কোয়ান্টাম ডিভাইস তৈরির পথ সুগম হবে। এটি স্ফটিক পদার্থের কোয়ান্টাম জ্যামিতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও এক নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে, যা আগামী দিনে প্রযুক্তিগত বিপ্লবের দিশা দেখাতে পারে। এক কথায়, এই গবেষণা কোয়ান্টাম জগতের এক নতুন দরজা খুলে দিল, যা এতদিন প্রায় অজানা ছিল।

Whatsapp
