ডিম খুঁজে বের করাই রীতি ইস্টারের, প্রচলিত এই প্রথার নেপথ্যে লুকিয়ে রয়েছে যে ইতিহাস

Easter Egg Hunting Significance : ইস্টার উদযাপন ডিম দিয়ে কেন পালিত হয়? কী এই প্রচলিত প্রথা?

খ্রিষ্টান সম্প্রদায় তো বটেই এমনকী গোটা বিশ্বের প্রায় সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই যীশু খিস্টের অস্তিত্ব এবং মাহাত্ম্য নিয়ে বর্ণনা রয়েছে। ঠিক যে কারণে গুড ফ্রাইডে পালিত হয় সর্বত্রই। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের প্রথম শুক্রবার পালিত হয় গুড ফ্রাইডে, আর ঠিক তার দুদিন পর যে রবিবার আসে সেই দিন পালিত হয় ইস্টার সানডে। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, গুড ফ্রাইড-এর দিনই যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। অবশ্য পাশাপাশি এও বিশ্বাস করা হয় যে, এর ঠিক দুদিন বাদেই নাকি আবারও ফিরে এসেছিলেন যীশু খ্রীষ্ট। আর সেই ফিরে আসার দিনটিকে স্মরণ করেই পালন করা হয় ইস্টার সানডে। বহু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এই দিন চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করেন। বিশেষ এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও দুটি বিষয়, একটি হল ডিম হান্টিং এবং অপরটি খরগোশ। কিন্তু এই দিনের সঙ্গে এই দুটি শব্দের সম্পর্ক কি জানেন?

উল্লেখ্য, সতেরো’শ শতকে জার্মানি ও ফ্রান্সে প্রথম শুরু হয় এই পরম্পরা। ওই ডিম আসলে কীসের প্রতীক তা নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন মত। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মনে করা হয় ওই ডিমটি আসলে যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থানের প্রতীক। ইস্টার ডিম হান্টিং একটি মজার রীতি, যা সারা বিশ্বে পালন করা হয় এবং অনেক অ-খ্রিস্টানরাও এই খেলায় অংশগ্রহণ করে। ইস্টারের সবচেয়ে সুপরিচিত ঐতিহ্যগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। যে সপ্তাহে ইস্টার হয়, সেই সপ্তাহে খ্রিস্টানদের ডিম খেতে বারণ করেন খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা। কেউ কেউ মনে করেন, দেবী ইওস্ট্রের কাছ থেকে এসেছে ইস্টারের ডিম। এই উৎসবের সঙ্গে যোগ রয়েছে বসন্ত ঋতুর।

কথিত আছে, হাজার হাজার বছর আগে জেরুজালেমের পাহাড়ে ইহুদিরা যিশু খ্রিস্টকে ফাঁসি দিয়েছিল। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল। কথিত আছে যে, যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর পর তৃতীয় দিনে তাকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল। মন্দের উপর ভালোর জয়ের কারণে খ্রিস্টানরা সেই দিনটিকে ইস্টার সানডে করে। পুনরুত্থিত হওয়ার পর, যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে ৪০ দিন অবস্থান করেছিলেন এবং হাজার হাজার লোকের কাছে আবির্ভূত হন এবং তারপরে যিশু খ্রিস্ট স্বর্গে চলে যান।

আরও পড়ুন - কেবল যিশু খ্রিস্টই ক্রুশবিদ্ধ হননি, বিশ্বের ভয়ংকর এই শাস্তির পেছনে রয়েছে কোন ইতিহাস?

পেনসিলভেনিয়ার ডাচ সম্প্রদায় বিশ্বাস করত যে, ওস্টারহেস নামে একটি খরগোশ ছিল, যে ইস্টার খরগোশের পূর্বসূরী। তারা ঘাসে ডিম পাড়ে। ইস্টার ডিম হান্টিং, এই খেলাটি এসেছে সেই সূত্র ধরেই। খেলার বিষয়বস্তু ছিল, শিশুরা ওস্টারহেসের ডিমের সন্ধানে যাবে। এই খেলার মধ্যে ছিল, খরগোশের বাসা এবং ঝুড়ি তৈরি করা। শিশুদের এই দিন এই উপহার সন্ধানের রীতি থেকে ডিম হান্টিং শুরু হয়, যা ইস্টারের ঐতিহ্য স্বরূপ আজও টিকে আছে।

পরবর্তীকালে ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডে আসল ডিমের বদলে প্রথম কৃত্রিম ডিমের প্রচলন শুরু হয়। ছোটদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিতে সেই সময় থেকেই এই রং বেরঙের কৃত্রিম ডিমের মধ্যে ছোটদের জন্য উপহার রাখা হত। এই সময় ইউরোপের মিছরি নির্মাতারা ইস্টার ডিমের আকৃতির চকোলেট এবং ক্যান্ডি তৈরি করতেও শুরু করেন। সেই থেকেই এই দিনে ডিমের আকারের ক্যান্ডি তৈরি করা হয়, এবং পরিবারের শিশুদের তা খুঁজে বের করতে বলা হয়। খুঁজে পেলেই বিশ্বাস করা হয় শিশুটির কাছে সুখ এবং জয়ের উৎস যা কিনা যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান7 স্বরূপ তা ফিরে আসছে। সেই থেকেই মানা হয় এই রেওয়াজ।

More Articles