ওঁর দু'চোখ জোড়া স্বপ্ন রক্ত হয়ে ঝরতে দেখেছি: আরজি কর কাণ্ডে মৃতার মা-বাবা
RG Kar Doctor's Death: মেয়ে নেই প্রায় ২ মাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিজের চিকিৎসক মেয়ের ওই ক্ষতবিক্ষত মুখ চোখের সামনে থেকে সরে না বাবা-মায়ের। তাঁদের সেই যন্ত্রণার কথাই পদে পদে ফুটে উঠল অর্ক দেবের সঙ্গে একান্ত কথাবার্তায়।
৫৫ দিন হয়ে গেল মেয়েকে হারিয়েছেন। এখনও চোখের জল শুকোয়নি আরজি কর কাণ্ডে মৃত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের। টিভিতে তাঁরা দেখেছেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনতাকে নিদান দিচ্ছেন, 'এবার উৎসবে ফিরুন।' সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মৃতার বাবা বললেন, 'নিজের বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটলে উৎসবে ফেরার ডাক দিতে পারতেন তিনি?'
সোদপুরকে আগে লোকে চিনত চৈতন্য স্মৃতিধন্য পানিহাটির জন্য। তবে গত কয়েকদিনে গোটা দেশে তো বটেই, গোটা বিশ্বের চর্চায় উঠে এসেছে এই শহর। কারণ আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষিতা, মৃতা চিকিৎসক বেড়ে উঠেছেন এই এলাকাতেই।
আমরা যখন মৃতার বাড়িতে পৌঁছই, তখন সূর্যাস্ত আসন্নপ্রায়। বাড়ির নীচেই মৃতার বাবার কাপড়ের ছোট কারখানা। এই কারখানায় সেলাইফোঁড়াইয়ের কাজ করেই তিনি মেয়েকে ডাক্তারি পড়িয়েছেন। মৃতার বাবা-মা একে একে আমাদের সামনে গোটা ঘটনাবলী মনে করতে থাকেন। কীভাবে তাঁদের বিভ্রান্ত করা হল, কীভাবে তাঁদের মেয়ের শেষকৃত্যটুকু হাইজ্যাক হয়ে গেল, টাকা দিয়ে চুপ করাতে চাইল পুলিশ, সব কিছু তুলে ধরেন ওঁরা এই কথাবার্তায়। 'আমাদের পদে পদে বিভ্রান্ত করা হয়েছে'— বললেন মৃতার বাবা। স্পষ্ট জানালেন, 'মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করেছিলাম, অথচ মেয়ের যখন এই অবস্থা হল, মুখ্যমন্ত্রীই দায় নিলেন না।'
আরজি কর কাণ্ডের পর, ১৪ অগস্ট থেকে বারবার অভূতপূর্ব নাগরিক সমাবেশ হয়েছে কলকাতা এবং শহরতলিতে, পথে নেমেছেন অসংখ্য আন্দোলনকর্মী। কোনও দলীয় পতাকাই জায়গা পায়নি এই প্রতিবাদে। বলা ভালো, এমন প্রতিবাদ স্বাধীনতার পর থেকে এই শহর দেখেনি। এই রংহীন আন্দোলনই এখন মৃতার বাবা-মায়ের ভরসা। এই সাক্ষাৎকারে তাঁরা জানালেন, 'সবাইকে বলছি, রং বাদ দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।' দাঁতে দাঁত চেপে সুবিচারের জন্য অপেক্ষা করছেন ওঁরা, রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে ওঁদের অনুরোধ, 'মেয়ে যেন বিচার পায়।'
আরও পড়ুন: সেমিনার রুম নয়? কেন আরজি করের বন্ধ লিফটকেই রহস্যের চাবিকাঠি বলছে সিবিআই?
এই ঘটনার কথা আপনারা কী ভাবে জানতে পেরেছিলেন, আমাকে সময় ধরে বলা সম্ভব?
মৃতার বাবা: ৮ অগস্ট, সকালবেলা আমার মেয়ে অনান্য দিনের মতোই কাজে বেড়িয়ে যায়। সেদিন সারাদিনে ৭ বার আমাদের সঙ্গে ওর ফোনে কথা হয়েছিল। রাত ১১টা ১৫-তে শেষবার ওর সঙ্গে আমাদের কথা হয়। ৯ অগস্ট সকাল ১০টা ৫৩ মিনিট নাগাদ প্রথম ফোন আসে, ফোনের ওপারে অচেনা মহিলাকণ্ঠ। উনি বলেন, 'আপনার মেয়ে অসুস্থ। আমি শুনে বার বার জিজ্ঞেস করি, 'বলো ওর কী হয়েছে'। উনি সে ব্যাপারে কিছু না বলে আমায় তাড়া দিয়ে বলতে থাকেন, 'আপনারা একটু তাড়াতাড়ি আসুন'। তারপর ফোন কেটে দেন। মনে তখন প্রবল উচাটন শুরু হয়েছে, আমাদের গাড়ির চালককে খবর দিই। তিনি আসতে আসতে এর মধ্যে আমি আরও একবার ওই নম্বরেই ফোন করে জিজ্ঞেস করি, মেয়ের কী হয়েছে? আমাকে বলা হয়, আমার মেয়ে অসুস্থ তাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গাড়িতে উঠতে না উঠতেই আমার কাছে আবার ফোন আসে। এবার আমাকে বলা হলো, 'আপনার মেয়ে মনে হয় আত্মহত্যা করেছে। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন।' আমার প্রতিবেশী অনিল দাশ, মিতা হংস এবং আমি আর আমার স্ত্রী হাসপাতালের দিকে রওনা দিই। প্রথম এবং দ্বিতীয় ফোনটি একই মহিলা করেছিলেন। আমরা রওনা দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে আবার ফোন। এবার একজন পুরুষ ফোনের ওপারে। তখন আমরা বিটি রোড অবধি পৌঁছেছি। আমাকে জিজ্ঞেস করা হল, 'আপনারা কি আসছেন?' তাগাদা দিয়ে বললেন, 'একটু তাড়াতাড়ি আসুন।'
আরজি করের সামনে কি আপনাদের জন্য কেউ অপেক্ষা করছিল? তাঁরই কি আপনাদের সেমিনার হলে নিয়ে গেলেন?
মৃতার বাবা: আমরা গিয়ে যথারীতি ইমারজেন্সিতে মেয়েকে খুঁজছিলাম। তারপর একজন নিরাপত্তারক্ষীকে মেয়ের নাম বলে জিজ্ঞেস করি, ওকে কোথায় রাখা হয়েছে? তখন তিনি আমাদের চেস্ট মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখি সেমিনার হলের সামনে প্রচুর লোক ভিড় করে রয়েছে। ঘরের ভিতর বহু সাধারণ মানুষ ঘোরাঘুরি করছে। কিন্তু আমাদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হল না। উল্টে আমাদের চেস্ট মেডিসিন বিভাগে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেওয়া হল। চেস্ট মেডিসিন বিভাগে অনেকগুলি ঘর রয়েছে, নানা ঘরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই অসময়ে ওরা আমাকে আর আমার স্ত্রীকে একসাথে থাকতে দিচ্ছিলেন না। হঠাৎই কয়েক জন লোক এসে একটি সাদা কাগজ দিয়ে বলেন, 'এখানে একটা সই করে দিন, বাকিটা আমরা দেখে নেব।' আমার স্ত্রী তখন অন্য ঘরে ছিল। আমি হয়তো সই করে দিতাম, এতটাই দিশেহারা ছিলাম। আমার একজন দাদা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি চেঁচিয়ে ওঠেন৷ আমাকে কোথাও না বুঝে সই করতে বারণ করেন।
দু-তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখার ঘটনা কি সত্যিই?
মৃতার বাবা: আমরা ১২:১০ নাগাদ পৌঁছেছিলাম আর ৩টে নাগাদ বিনীত গোয়েল আমাদের সেমিনার রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন। হয়তো তখনও আমাদের মেয়েকে দেখতে পেতাম না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ফোন করার পর আমরা আমাদের মেয়েকে দেখতে পেয়েছিলাম।
ইতিমধ্যে বাইরে শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। দুপুর ২টো ২০ মিনিট নাগাদ ২৫ থেকে ৩০ জন জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলন শুরু করে দেন। এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আগে ওঁরা আমাদের থেকে অনুমতিও নেন।
সেমিনার রুমে ঢুকে কী দেখলেন? ক্রাইম স্পট কি ঘিরে রাখা হয়েছিল?
মৃতার বাবা: তখনও ক্রাইম স্পট ঘিরে রাখা ছিল না। হাসপাতালে যে সাদা কাপড় থাকে সেটা দিয়ে মেয়ের শরীর ঢাকা দেওয়া ছিল। দেহটিকে যে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছিল, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।
ময়নাতদন্ত কারা করবে সে নিয়ে আপনাদের কিছু জানানো হয়েছিল?
মৃতার বাবা: ময়নাতদন্তে কে কে থাকছেন, সেই নিয়ে আমাদের একটা লিস্ট দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি ওদের কাউকেই কিন্তু থাকতে দেওয়া হয়নি। জুনিয়র ডাক্তারেরা আমাদের বললেন, ময়নাতদন্ত করতে হবে। কিন্তু সবাই বলেছিল ময়নাতদন্ত সন্ধের আগেই করতে। অনেক বলার পরও সন্ধের আগে ময়নাতদন্ত করা হয়নি। সবাই বলল, এখানেই ময়নাতদন্ত হোক, আমরাও তারপর বললাম এখানেই হোক তাহলে। কিন্তু তখনও বুঝিনি তালিকায় থাকা লোকজন সেই ময়নাতদন্তে জায়গাই পাবে না।
এই ঘটনাপ্রবাহে রাজনৈতিক নেতারা কী ভাবে ঢুকে পড়লেন?
মৃতার বাবা: আমি গিয়েছিলাম টালা থানায় এফআইআর করতে। আমি আসার আগেই তৃণমূল নেতা সোমনাথ দে দেহ হস্তান্তর করার কাগজে আমার স্ত্রী-কে সই করিয়ে নেন। আমরা কোনও কথাবার্তার সুযোগ পাইনি। আমার গাড়ির চালক আমায় পরামর্শ দেন, আরেকবার ময়নাতদন্তের জন্য দেহ রেখে দিতে, তাহলে যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে। এই নিয়ে কথা বলতে আমরা টালা থানায় যাই। টালা থানায় পৌঁছতেই আমাদের গাড়ি যিনি চালান তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল পুলিশ। তিনশো থেকে চারশো পুলিশ আমাদের ঘিরে ধরল। তাদের মধ্যে সকলে উর্দি পরে ছিলেন না। হঠাৎ জানতে পারি, আমাদের সঙ্গে কথা হওয়ার আগেই গ্রিন করিডোর করে বডি নিয়ে আমাদের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে পুলিশ।
আমরা পুলিশকে বললাম, বডি আপনারা ফেরত আনুন নয়তো আমরা যাব না। এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হল। আমাদের ওখান থেকে চলে যেতে বলা হল।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের বাড়ি থেকে ফোন করে জানানো হয়, তিনশো পুলিশ আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। আমাদের মনে হল, আমরা যদি এখানে বেশিক্ষণ থাকি তাহলে দেহ দাহ করে দিতে পারে ওরা। আমার মেয়েকে শেষ দেখাটাও দেখতে পাব না। এই ভেবে আমি আবার সস্ত্রীক বাড়ি ফিরে এলাম যত দ্রুত সম্ভব।
বাড়িতে পৌঁছে কী দেখলেন? পুলিশের কোনও আচরণ আপনাদের সে সময় অপ্রীতিকর লেগেছিল?
মৃতার বাবা: আমার নীচতলাটা গেঞ্জির কাপড়ের কাজ হয়। উপরেই মেয়ে থাকত। মেয়েকে উপরে নিয়ে গেলাম। সবে মেয়ের পাশে বসেছি, তখন ডিসি নর্থ এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যান। ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি আমায় এক বান্ডিল টাকা ধরিয়ে বলেন, 'রাখুন এটা আপনার লাগবে।' আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। ওঁর উর্দির স্টারগুলি দেখিয়ে বলি, 'আপনার এইটা পেতে যত কষ্ট করতে হয়েছে, আমার মেয়েটাকে এখানে পৌঁছতে এর থেকে অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়েছে, তাঁকে অসম্মান করবেন না।' ওরা আমাকে নিরিবিলিতে কিছুক্ষণ মেয়েটার পাশে বসতে দেয়নি। তখনই দেহ দাহ করতে নিয়ে যাওয়ার তাড়া শুরু হয়ে যায়। আমরাও বাধ্য হয় বেরিয়ে পড়ি। আমরা ওখানে পৌঁছনোর আগেই দেখি, স্থানীয় এমএলএ নির্মল ঘোষ এবং সোমনাথ দে মিলে সব কাজ করিয়ে নিয়েছে আগেভাগেই। মৃতদেহ পোড়ানোর চালানও কেটেছে ওরাই। এটা তো ওদের করার কথা ছিল না! শ্মশানে আগে থেকেই তিনটে মরদেহ ছিল। নির্মল ঘোষ এবং তাঁর সঙ্গীরা ওই সব দেহের আগে আমার মেয়েকে নিতে বাধ্য করে। সেই সময়ের নিয়মকাজ করার জন্যও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি আমাদের। আশ্চর্য এই যে, দিনভর ওরা আমায় হয়রান করেছে, কিন্তু চুল্লিতে আমার মেয়ের দেহ দিতেই ওরা হাত ঝেড়ে ফেলল। সব্বাই চলে গেল।
কলকাতা পুলিশ তো প্রথম পাঁচ দিন তদন্ত চালিয়েছিল। ওদের কাজে কী কী ত্রুটি ছিল বলে মনে হয়?
মৃতার মা: আমরা জানি না তখন কী তদন্ত হয়েছে। প্রমাণ তো সব লোপাট হয়ে গিয়েছে। একটা অপরাধের প্রমাণ সরাতে গিয়ে আরও অনেক অপরাধ করা হয়েছে। আগেই বলেছি, আমার মেয়ের সহকর্মীদেরও ময়নাতদন্তের সময় রাখা হয়নি। আমি চাই না, আর কাউকে এমন কষ্ট ভোগ করতে হোক।
সিবিআই-এর তদন্তে আপনাদের আস্থা রয়েছে?
মৃতার মা: সিবিআই যেমন ভাবে তদন্ত করছে, আমাদের ভরসা আছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া যে ভাবে চালিয়েছে কলকাতা পুলিশ, তাতে সব প্রমাণ একজায়গায় করতে সময় লাগবে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় নাগরিকদের সহ্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। প্রতিবাদ করেছেন বহু মানুষ, আপনারাও সেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। সাধারণ মানুষের এই চিৎকার কি আপনাদের সামান্য হলেও আশ্বস্ত করেছে?
মৃতার মা: তাঁরা যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষাটুকুও আমার নেই। আজ তাঁরা প্রতিবাদ না করলে সবটাই হয়তো ধামাচাপা থেকে যেত। ঘটনাটা এই জায়গাতেই আসত না, যদি না এত প্রতিবাদ, এত আন্দোলন হত। আর কারও সঙ্গে যাতে এমন না হয় তা নিশ্চিত করতে এই প্রতিবাদ জরুরি। আমি আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করব, তাঁরা যেন আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যান। পাশাপাশি আমি এই বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের দৃষ্টিও আকর্ষণ করতে চাই। তারা যেন গোটা বিষয়টায় হস্তক্ষেপ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী তো রাজ্যবাসীর অভিভাবক। এই গোটা ঘটনায় তাঁর ভূমিকা আপনারা কীভাবে দেখেন?
মৃতার বাবা: ওঁর ভরসাতেই তো আমরা মেয়েটাকে কলেজে ভর্তি করেছিলাম। আমার মেয়ে অন ডিউটি মারা গিয়েছে। উনি তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওর তত্ত্বাবধানে থাকা হাসপাতালে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, ওঁর দায় নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উনি কোনও দায় নেননি। যে বিনীত গোয়েল (প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার) আমাদের মেয়েকে দেখতে দিচ্ছিলেম না, তাঁর বিরুদ্ধে উনি নিজে থেকে কোনও ব্যবস্থা নেননি। সন্দীপ ঘোষকে চাইলেই উনি বরখাস্ত করতে পারতেন, করেননি। বরং পুরস্কার দেওয়ার মতো করে অন্য কলেজে (ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ) বদলি করেছেন। এই ঘটনাগুলি আমাদের স্তম্ভিত করেছে।
আরও পড়ুন: আরজি কর: ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহে গাফিলতি? কতটা ক্ষতি করতে পারে তদন্তের?
উনি কি আপনাদের সরাসরি অর্থ নেওয়ার জন্যে বলেছিলেন?
মৃতার বাবা: উনি আমাদের ক্ষতিপূরণের কথা বলেন। তারপর ১৫ অগস্টের মঞ্চ থেকে আমাদের উদ্দেশ্যেই বলেন, ১০ লাখ টাকা দিতেই পারি। পরে উনি এ কথা অস্বীকার করেন।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে আপনি কী বার্তা দিয়েছেন?
মৃতার বাবা: সবাইকেই একটা কথা বলেছি, রঙ নিয়ে, দলীয় পতাকা নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াতে আসবেন না। কোনও ব্যানার ছাড়া লক্ষ লক্ষ লোক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা সাহস পেয়েছি। আমরা তাঁদের দিকেই তাকিয়ে আছি, বিশ্ববাসীকে আমাদের পাশে চাই।
সামনে তো দুর্গাপূজা। আপনার মেয়ে তো পুজো করত?
মৃতার বাবা: হ্যাঁ, আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েই ও পুজো শুরু করে। আত্মীয়স্বজন সবাই আসত পুজোয়। নিজে সবাইকে নিমন্ত্রণ করত। এ বছর পুজোর সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমার বাড়িতে আর কোনওদিন ঢাক বাজবে না। আমার মেয়েটা বড় চুপচাপ ছিল। পড়াশোনা নিয়ে থাকত। নিজের পেশায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাইত। সুনাম চাইত। দু'চোখ জোড়া স্বপ্ন ছিল ওঁর। আমরা ওঁর সব স্বপ্ন রক্ত হয়ে ঝরতে দেখেছি।
কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতার বাবা। আমরা কথাবার্তা এখানেই থামাই।
(লিখন সহায়তা: তনভিয়া বড়ুয়া)