অবশেষে স্বস্তি! ডাউকি-দর্শনা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলেন অজস্র ভারতীয়

Bangladesh: শুধু ডাউকি বর্ডারই নয়, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন ভারতীয় পড়ুয়া দেশে ফিরেছেন।

সংরক্ষণের বিরোধিতায় আগুন জ্বলছে বাংলাদেশে। বিক্ষোভকারীদের দমনে ক্রমশ চরমপন্থার দিকে হাঁটছে সরকার। মঙ্গলবার আন্দোলনরত পড়ুয়াদের অবস্থানে গুলি চালায় পুলিশ ও আধাসেনা। মোট ৬ পড়ুয়ার মৃত্য়ু হয়েছিল সেই ঘটনার। তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার গোটা বাংলাদেশ জুড়ে কমপ্লিট শাটডাউনের ডাক দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। তাতে গোটা দেশের সফল সাড়া মিললেও অশান্তি হল দিনভরই। বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় সংঘর্ষে প্রাণ গেল অন্তত ৩৯ জনের। তার মধ্যে যেমন রয়েছেন সাধারণ পড়ুয়া, রয়েছেন সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীও। জখম হলেন অসংখ্য। এরই মধ্যে রক্তস্নাত বাংলাদেশ ছেড়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন অজস্র ভারতীয়। যারা শিক্ষা বা চাকরির প্রয়োজনে বাংলাদেশে ছিলেন। মেঘালয়ের ডাউকি, চুয়াডাঙার দর্শনা বর্ডার দিয়ে শুক্রবার ঘরে ফিরেছেন অজস্র পড়ুয়া। সীমান্তগুলিতে সকাল থেকেই ভিড় বেড়েছে স্বজনবান্ধবদের।

বাংলাদেশে বাড়ছে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভমিছিল। তবে প্রশাসনের লাল চোখের পরোয়া না করেই রাস্তায় রাস্তায় নেমেছে জনসমুদ্র। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এতদিন যে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ পেতে, তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন পড়ুয়া ও চাকরিপ্রার্থীরা। যদিও সেই গোটা ব্যাপারটা আদালতের উপরেই ছাড়তে চাইছে শেখ হাসিনা সরকার। দিন দুয়েক আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে সন্ত্রাসীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বাস্তবে শাস্তি পাচ্ছেন কেবল পড়ুয়ারাই। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাজোয়া গাড়ির কনভয়ের ছবি ঘুরতে দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছাত্রবিক্ষোভ রুখতে সত্যিই কি ট্যাঙ্কারের মতো যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োজন হয় প্রশাসনের, উঠে গিয়েছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন, মৃত্যু নিয়ে কেন চুপ হাসিনার ‘বন্ধু’ ভারত?

এরই মধ্যে বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারতের বিদেশমন্ত্রক। যত দিন যাচ্ছে, ততই খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এদিকে ভারত থেকে অজস্র পড়ুয়া, অজস্র চাকরিজীবী বাংলাদেশে যান প্রতিবছর। কেউ যান পড়তে, কেউ চাকরি করতে তো কেউ বা ব্যবসার প্রয়োজনে। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইতিমধ্যেই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসে। হাইকমিশনের তরফেও বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য জারি করা হয়েছে নির্দেশিকা। তাঁদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে বিধিনিষেধ। এমনকী তাঁদের বাড়ি থেকে বেরোতে পর্যন্ত বারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ স্কুল-কলেজ। বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করেছেন বলে খবর। জায়গায় জায়গায় বাড়ছে বিক্ষোভ। স্বজন-বন্ধুদের জন্য উদ্বেগে এ পার বাংলা। এরই মধ্যে বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়রা দেশে ফেরা শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, হিংসা কবলিত বাংলাদেশ থেকে বৃহস্পতিবারই মেঘালয়ে ঢুকেছেন ২০২ জন ভারতীয় ও ১০১ জন নেপালি মানুষ। ওই ২০২ জনেক মধ্যে ১৯৮ জন পড়ুয়া ও ৬৭ জন মেঘালয়ের বাসিন্দা রয়েছেন। রয়েছেন ৭ জন ভুটানি নাগরিকও। ডাউকি চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে ঢুকে এসেছেন তারা। তাঁদের মধ্যে ৪ পর্যটক রয়েছেন বলেও খবর। বাংলাদেশে বসবাসকারী অসমের বাসিন্দাদের নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে সে রাজ্যের প্রশাসনও। কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রেখে চলেছেন তারা। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব রকম চেষ্টা করছে উত্তরপূর্বের রাজ্যটি। শুধু ডাউকি বর্ডারই নয়, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন ভারতীয় পড়ুয়া দেশে ফিরেছেন। ভারতে ফেরায় অপেক্ষায় আরও অনেকে ভিড় জমিয়েছেন সীমান্তে।

এদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাংলাদেশের মৃত্যুর সংখ্যা। সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩৯ জন পড়ুয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে অসমর্থিত সূত্র বলছে, ৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ খুইয়েছেন এই আন্দোলনের জেরে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য চিন্তা বাড়ছেই। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের হাইকমিশন বেশ কয়েকটি জরুরি নম্বরের কথা ঘোষণা করেছে। সেখানে ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ করে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারবেন আটকে পড়া ভারতীয়রা।

আরও পড়ুন: আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ! কী ঘটছে বাংলাদেশে জানবেন না আর কেউই?

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো'র রিপোর্ট অনুযায়ী, শুক্রবারও ঢাকার উত্তরা, মহম্মদপুর, বাড্ডা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে আন্দোলনকারী ছাত্রদের। সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় দেখা গিয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ব়্যাব, বর্ডার গার্ডদের। এদিকে আওয়ামি লিগের বহু নেতা-কর্মীরাও লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে আন্দোলন দমন করতে। এদিন সকাল সকাল ১০টা নাগাদ রামপুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে আন্দোলনকারীদের। পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করলে পালটা ইটপাটকেল ছোড়েন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি আজও পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে ছাত্রদের লক্ষ্য করে। গতকাল এই রামপুরাতে অবস্থিত বিটিভির স্টেশনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এর জেরে বাংলাদেশের জাতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা গুলশান ১ নম্বরের দিকে যাওয়ার রাস্তাতেও শুক্রবার সকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এদিকে উত্তরাতেও উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা পুলিশ থানার কাছে অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। জবাবে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে বলে অভিযোগ। এই আবহে উত্তরায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। মহম্মদপুর, যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, মালিবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের সংঘর্ষ হয় বলে দাবি করা হয়েছে প্রথম আলোর রিপোর্টে। এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ নিয়েছে হাসিনা সরকার।

More Articles