ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অধিনায়করা এখন কে কোথায়?

অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শীর্ষস্তরের ক্রিকেটের ঠিক আগের ধাপে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতাগুলির মধ্যে অন্যতম। বছরের পর বছর ধরে, তরুণ খেলোয়াড়ের উৎসাহ এই প্রতিযোগিতাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ১৪ টি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয়েছে এ যাবৎ।  ১৯৮৮ সালে প্রথমেই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন অবশ্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ কে বলা হত যুব বিশ্বকাপ। প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ানরা বিজয়ী হয়েছিল।

কিন্তু পরের প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছিল দশ বছর পর। তারপর থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারত টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে চারবার চ্যাম্পিয়ন এবং দু'বার রানার্সআপ হয়েছে ভারত। ২০০০ সালে মহাম্মদ কাইফের অধিনায়কত্বে, ২০০৮ সালে বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বে, ২০১২ সালে উন্মুক্ত চাঁদের অধিনায়কত্বে এবং ২০১৮ সালে পৃথ্বী শাহের নেতৃত্বে আর এবার যশ ধুল্লে ভারতকে পঞ্চম অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ উপহার দেন।

ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় সফলভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিলেও অনেক ক্রিকেটারই পরবর্তী কালে হারিয়ে গিয়েছেন, এমনকী ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করতে পারেনি তারা। চলুন জেনে নিই ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সব অধিনায়কদের সম্পর্কে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তাঁরা কেমন পারফর্ম করেছিলেন এবং এখন তাঁরা কী করছেন?

মাইলুয়াহানান সেন্থিলনাথন

মাইলুয়াহানান সেন্থিলনাথন হলেন প্রথম ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অধিনায়ক১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের প্রথম বিশ্বকাপ খেলা হয়। ভারত ওই প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্স খুব খারাপ হয়েছিল। আটটি দলের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে শেষ করেছিল ভারত। 

পরবর্তী কালে ওই যুব দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়  ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে নয়ন মোঙ্গিয়া, প্রভিন আমরে, ভেঙ্কটপতি রাজু, নরেন্দ্র হিরওয়ানি এবং সুব্রত ব্যানার্জি রয়েছেন। এবার জেনে নেওয়া যাক অধিনায়ক মাইলুয়াহানান সেন্থিলনাথন সম্পর্কে। তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। প্রতিযোগিতায় ছয় ম্যাচে ১৪৯ রান করে সেন্থিলনাথন ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন। তিনি অবশ্য ভারতের হয়ে একটিও টেস্ট বা ওয়ানডে খেলেননি।

১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, সেন্থিলনাথন প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে তামিলনাড়ু এবং গোয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯২-৯৩ সালে রঞ্জি ট্রফির প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে, আসামের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর হয়ে ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ১৮৯ রান করেন। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে, সেন্থিলনাথন প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে শেষ ম্যাচ খেলেন। তিনি বর্তমানে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনের প্রধান কোচ।

অমিত প্যাগনিস (১৯৯৮)

দশ বছরের ব্যবধানে পরবর্তী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মুম্বাইকার অমিত পাগনিস ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নেতৃত্ব দেন। ভারত ১৯৮৮ সালে থেকে অনেক ভালো খেলেছিল। তবে, খারাপ নেট রান রেটের কারণে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে ছিটকে যায়।

অমিত পাগনিস ছিলেন একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে ছয় ইনিংসে ২৯.১৬ স্ট্রাইক রেটে ১৭৫ রান করেন। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর তিনি মুম্বাইয়ের হয়ে প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান। ঘরোয়া পর্যায়ে পাগনিসের পারফর্ম তেমন দাগ কাটতে পারেনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯৫ ম্যাচে ৫৮৫১ রান করেন। পরবর্তী কালে তিনি মুম্বাই ছেড়ে রেলওয়েজে চলে যান এবং ২০০৮ সালে রেলওয়ের হয়ে খেলে অবসর গ্রহণ করেন।

হরভজন সিং এবং বীরেন্দ্র শেওয়াগ ১৯৯৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন এবং পরবর্তীকালে উভয়েই ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন।

মহম্মদ কাইফ (২০০০)

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম চাম্পিয়ান অধিনায়ক হলেন মহম্মদ কাইফ। তার নেতৃত্বে ভারত 2000 সালে শ্রীলঙ্কায় প্রথমবার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতেছিল। সেই দলের সদস্য যুবরাজ সিং পরবর্তীকালে ভারতের সেরা সীমিত ওভারের ক্রিকেটারদের একজন লেজেন্ড হয়ে ওঠেন। তিনি ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর।

কাইফ ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি ১৯৯৮ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। তবে কাইফ ২০০০ সালে তেমন ভালো করতে পারেননি। তিনি ৮ ম্যাচে ৩৪.৫৭ গড়ে ১৭০ রান করেছিলেন।

কাইফ অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপের ঠিক পরে, ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুতে তাঁর টেস্ট অভিষেক করেছিলেন। কিন্তু ওই সিরিজের পরই বাদ পড়েন। ২০০১-২০০২ মৌসুমে কাইফকে একদিনের দলে ডাক পান।

কিন্তু ২০০২ সালে ইংল্যান্ডে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে কাইফ তার প্রতিভা প্রমাণ দেন। ফাইনালে তাঁর অপরাজিত ৮৭ রান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। এরপর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন।

তিনি ভারতের হয়ে ১৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩২.৮৪ গড়ে ৬২৪ রান করেছেন। কাইফের একটি টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে।

টেস্ট ক্রিকেটের তুলনায় তিনি একদিনের ক্রিকেটে কাইফ বেশি সফল। কাইফ মোট ১২৫টি ওডিআই খেলেন এবং ৩২.০১ গড়ে ২৭৫৩ রান করেন। তাঁর দুটি একদিনের সেঞ্চুরি এবং ১৭টি হাফ সেঞ্চুরি আছে।                  

পার্থিব প্যাটেল (২০০২)

নয়ন মোঙ্গিয়ার পর, ২০০২ সালে পার্থিব প্যাটেলই ভারতের একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের অপেক্ষার অবসান ঘটে। দেশের সর্বকনিষ্ঠ উইকেটরক্ষক হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। সেই বছর, তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দেশের  অধিনায়কত্ব করেন। দুর্ভাগ্যবশত, ভারত সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যায়। তবে বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করতে পারেননি পার্থিব। সাত ম্যাচে ১৮৪ রান করেছিলেন তিনি। তবে সামগ্রিক ভাবে, পার্থিব প্যাটেল খুব কম্প্যাক্ট ক্রিকেটার ছিল। তাই, তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী তাঁকে ইংল্যান্ড সফরে দলে নেই। মাত্র ১৭ বছর বয়সে পার্থিব প্যাটেলের টেস্ট অভিষেক হয়।

প্রথম দিকে তিনি সফল হলেও উইকেট কিপিংয়ে দুর্বলতার কারণে ২০০৪ সালে দল থেকে বাদ পড়েন।  প্রথমে দীনেশ কার্তিক এবং পরে এমএস ধোনির আবির্ভাবে পার্থিব আস্তে আস্তে হারিয়ে যান। তিনি ক্রিকেটের সব ফরম্যাটই বেশ কয়েকটি ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারেননি।

আরও পড়ুন-বিদায়ের বিষাদে ফিরে দেখা ভারতের নাইটিঙ্গলের জীবন

পার্থিব প্যাটেল ভারতের হয়ে ২৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩১.১৩ গড়ে ৯৩৪ রান করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ছয়টি হাফ সেঞ্চুরি আছে। অন্যদিকে, পার্থিব ৩৮টি ওডিআই খেলেন এবং ২৩.৭৪ গড়ে ৭৩৬ রান করেন। তিনি ভারতের হয়ে দুটি টি-টোয়েন্টিও খেলেছেন।  

 আম্বাতি রায়ডু (২০০৪)

২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের হয়ে দুইজন অধিনায়ক ছিলেন। আম্বাতি রায়ডু পুরো বিশ্বকাপের জন্য  আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে টসে গিয়েছিলেন দীনেশ কার্তিক। সেই ম্যাচে খেলছিলেন না রায়ডু।

রায়ডু ভারতকে ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিল। সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে পরাজিত হয় ভারত। টুর্নামেন্টে তিনি ৬ ইনিংসে ১৪৯ রান করেন, ইনিংসে প্রতি গড়ে ২৪.৮৩ রান।

বিশ্বকাপের পর খেলোয়াড় এবং রাজ্য অ্যাসোসিয়েশনের সাথে মতবিরোধের কারণে রায়ডু বিদ্রোহী ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৯ সালে, তিনি বিসিসিআই-এর কাছে ক্ষমা ক্ষমা চেয়ে  ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বরোদা এবং আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে লাগাতার ভালো পারফরম্যান্সের পর, তাঁকে ২০১২ সালে প্রথম বারের মতো ভারতীয় দলে ডাক পান। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ওডিআই-তে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়।

রায়ডু ভারতের হয়ে ৫৫টি ওডিআই খেলেছেন এবং ৪৭.০৬ গড়ে ১৬৯৪ রান করেছেন। তিনটি সেঞ্চুরি ও দশটি হাফ সেঞ্চুরি কাছে তাঁর। রায়ডু ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিও খেলেছেন।

শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, রবীন উথাপ্পা, আরপি সিংও ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন।

রবিকান্ত শুক্লা (২০০৬)

এই তালিকায় সব ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ রেকর্ড হল রবিকান্ত শুক্লার। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ২০০৬ সংস্করণে, শুক্লা ভারতকে ফাইনালে নিয়ে যান। কিন্তু তাঁরা আবারও পরাজিত হয় পাকিস্তানের কাছে।

উত্তরপ্রদেশের বাঁহাতি ব্যাটার শুক্লার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স ছিল ভয়ঙ্কর। কারণ তিনি ৫ ইনিংসে মাত্র ৫৩ রান করেছিলেন প্রতি ইনিংসে গড়ে ১০.৬০ রান। 

অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের পর শুক্লা উত্তর প্রদেশের হয়ে বেশ কয়েক মৌসুম প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেট খেলান। তিনি ৪০টি প্রথম-শ্রেণির ম্যাচে ১৯৬২ রান করেছেন, তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে মাত্র দুটি সেঞ্চুরি আছে। ২০১৪ সালে প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।

আরও পড়ুন-ভারতীয় টেস্ট দলের দরজা কি রাহানে,পূজারার জন্য বন্ধ হতে চলেছে?

সেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য ছিলেন বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা রবীন্দ্র জাদেজা, পীযূষ চাওলা, মনীশ পান্ডে এবং চেতেশ্বর পূজারার মতো খেলোয়াড়। ২০০৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য সিরিজ হয়েছিলেন পূজারা।

বিরাট কোহলি (২০০৮)

ভারত থেকে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিরাট কোহলি এখনও পর্যন্ত সেরা আবিষ্কার। কোহলি নিঃসন্দেহে এই তালিকায় সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার। ২০০৮ সালে তিনি মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে নেতৃত্ব দেন। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খুব কঠিন ম্যাচে ভারত D/L তে ১২ রানে জিতেছিল।

২০০৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিরাটের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। তিনি ছয় ম্যাচে ৪৭ গড়ে ২৩৫ রান করেন এবং একটি সেঞ্চুরিও করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের পর রাতারাতি খ্যাতি পেয়ে যান কোহলি। সেই বছর তিনি আইপিএল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

কোহলিই একমাত্র ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ অধিনায়ক যিনি সিনিয়র টেস্ট দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি সব ধরনের ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সফল অধিনায়ক এবং একইসঙ্গে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। অসংখ্য ব্যাটিং রেকর্ড ভেঙেছেন কোহলি এবং সচিন তেন্ডুলকারের পরবর্তীকালীন তিনি ভারতীয় ব্যাটিং এর সবচেয়ে বড় স্টার।

সেই দলে হোলির সহ-অধিনায়ক ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। মণীশ পান্ডে, অভিনব মুকুন্দ, এবং সিদ্ধার্থ কৌলও পরবর্তীকালে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব।   

অশোক মেনারিয়া (২০১০)

ভারতীয় ২০১০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ভারতের অধিনায়ক ছিলেন অশোক মেনারিয়া। তিনি একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবং বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলার। কিন্তু বিশ্বকাপে তিনি মোটেও পারফর্ম করতে পারেননি। পাঁচ ইনিংসে মাত্র ৩১ রান করেন এবং ছয় উইকেট নেন। মেনারিয়া রাজস্থান অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন। অনূর্ধ্ব ১৭ বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে তিনি কর্নাটকের বিরুদ্ধে ২২৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

২০০৮ সালের নভেম্বরে, মেনারিয়া মুম্বাইয়ের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক করেন। তিনি ৭৯টি প্রথম-শ্রেণির ম্যাচ খেলেন এবং রাজস্থানের হয়ে মোট ৪৬৭৭ রান করেন। তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ২৩০ রান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ২০ উইকেটও নেন মেনারিয়া।

অশোক মেনারিয়া ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল খেলেছেন।

কেএল রাহুল, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, জয়দেব উনাদকাট ভারতের ২০১০ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অংশ ছিলেন।

উন্মুক্ত চাঁদ (২০১২)

উন্মুক্ত চাঁদ ভারতীয় ক্রিকেটের একজন দুর্ভাগা ক্রিকেটারের নাম। ২০০৮সালে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ের চার বছর পর দিল্লির আরেক তরুণ একই সম্মান অর্জন করেন। প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে অসামান্য পারফরম্যান্সের পর, উন্মুক্ত চাঁদকে বিরাট কোহলির সঙ্গে তুলনা করা হয়।

প্রতিযোগিতায় উন্মুখ চাঁদের পারফরম্যান্স ছিল খুবই ভালো। তিনি ৬ ইনিংসে ৪৯.২০ গড়ে ২৪৬ রান করেছেন। চাঁদ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে ১৩০ বলে ছয়টি ছক্কা এবং সাতটি চারের সাহায্যে অপরাজিত ১১১ রান করেন। মূলত তার ইনিংসের উপর ভিত্তি করে সেবার ফাইনালের বৈতরণী পেরোয় ভারত। 

একজন স্কুলপড়ুয়া হিসেবে দিল্লির হয়ে রঞ্জিতে অভিষেক হয়েছিল উন্মুক্ত চাঁদের। দিল্লির হয় চতুর্থ ম্যাচে তিনি প্রথম সেঞ্চুরি করেন। ১৮ বছর ১৫ দিন বয়সে তার আইপিএল অভিষেক হয়। ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় এ দলের হয়ে তিনি খেলতে থাকেন। এ দলের হয়ে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে তাঁর কখনও খেলা হয়নি।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে উনমুক্ত চাঁদ ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি ২০২১ সালের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় টি-২০ লিগে যোগদান করেছেন। চাঁদ মাইনর লিগ ক্রিকেটের সিলিকন ভ্যালি স্ট্রাইকারে এখন খেলছেন।      

বিজয় জোল (২০১৪)

২০১৪ সালে বিজয় জোল ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপের অধিনায়ক ছিলেন। জোল মহারাষ্ট্রের একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি  সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। উন্মুক্ত চাঁদের দল অস্ট্রেলিয়ায় কাপ জেতার দুই বছর পর, জোল অধিনায়কত্বে ভারত সেই বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।

গ্রুপ পর্বের সবকটি খেলায় জয়ী হলেও ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের হেরে যায়। প্লে-অফ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে তাঁরা পঞ্চম স্থানের শেষ করে।

২০১২ সালে, তিনি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বর্তমানে তিনি তার রাজ্য দলে খেলছেন।

তবে তাঁর দলের অনেকেই ইতিমধ্যে ভারতের হয়ে খেলেছেন। যেমন, কুলদীপ যাদব, শ্রেয়াস আইয়ার, সঞ্জু স্যামসন এবং দীপক হুডা।

ইশান কিষাণ (২০১৬)

ঝাড়খণ্ডের আরেক উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যান ইশান কিশান২০১৬ সালে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে  নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভারত কাপ জয়ের ফেভারিট হিসেবে শুরু করেছিল। টুর্নামেন্টটি আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশে। পুরো টুর্নামেন্ট ভারত দুর্দান্ত খেললেও ফাইনালে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কাছে পরাজিত হয়েছিল। ব্যক্তিগত ভাবে ইশান কিশানের পারফরম্যান্স ছিল খুব খারাপ। ছয় ম্যাচে ১২.১৬ গড়ে মাত্র ৭৩ রান করেছিলেন। 

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঝাড়খণ্ডের হয়ে ঈষাম কৃষাণের প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ১৭ বছর বয়সে, গুজরাট লায়ন্স তাঁকে ২০১৬ আইপিএল নিলামে ৩৫ লাখ টাকায় ($ ৫২,000 আনুমানিক) টাকায় দলে নেয়।

কিশান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের  ভারতের টি-২০ আন্তর্জাতিকের জন্য ভারতীয় দলে ডাক পান। তারপর ২০২১ সালের জুনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের জন্য ভারতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) এবং টি-টোয়েন্টি দলে নির্বাচিত হন। ১৮ জুলাই, ২০২১-এ, তিনি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে তার ওডিআই অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে ৪২ বলে ৫৯ রান করেছিলেন।        

পৃথ্বী শাহ (২০১৮)

২০১৮ সালে ভারত আবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ছিল মুম্বই ওয়ান্ডার কিড পৃথ্বী শাহ।

ছোটবেলা থেকেই লাইমলাইটে চলে আসেন পৃথ্বী। ২০১৩ সালে মুম্বাইয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হ্যারিস শিল্ডে ১৪ বছর বয়সী পৃথ্বী শাহ নজরে আসেন। ওই টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচে তাঁর স্কুল রিজভি স্প্রিংফিল্ডের হয়ে ৩৩০ বলে ৫৪৬ রান ছিল। ভারতীয় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের তখন থেকেই তাঁর উপর নজর রাখছে।

শাহ ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য হিসাবে ২০১৬সালে নভেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কায় যুব এশিয়া কাপ জিতেছিল। দুই মাস পর তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়। সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে পৃথ্বীশ। তাঁর ইনিংস মুম্বইকে আরও একবার রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে দেয় জিততে সাহায্য করেছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সচিন তেন্ডুলকরের দুলীপ ট্রফিতে অভিষেকের সেঞ্চুরি করার রেকর্ড ভেঙে দেন, যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর।

নিউজিল্যান্ডে ২০১৮ সালের তাকে ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনোনীত করা হয়ে। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে শাহের অবদান ছিল বেশ ভাল। তিনি দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৫ গড়ে ২৬১ রান করেন।

ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য  ২০১৮ সালে  আগস্টে ভারতের টেস্ট দলে ডাক পান শাহ। তবে টেস্ট খেলার সুযোগ হয়নি। 

৪ অক্টোবর, ২০১৮-এ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শাহের টেস্ট অভিষেক হয়। সেই ম্যাচেই তিনি সেঞ্চুরি করেন। তিনি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি রেকর্ড করেন (১৮ বছর ৩১৯ দিন)। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০-এ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে তাঁর ওডিআই অভিষেক হয়। ২৫ জুলাই, ২০২১ এ, তিনি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক করেন।  

প্রিয়ম গর্গ (২০২০)

ভারত ২০২০ অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিল প্রিয়ম গর্গের নেতৃত্বে। পুরো টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খেলে ভারত ফাইনালে ওঠে। কিন্তু ফাইনালে হাইভোল্টেজ ম্যাচে ভারত হেরে যায় বাংলাদেশের কাছে। বিশ্বকাপে গর্গ তিন ইনিংসে মোট ৬৮ রান করেন।

উত্তর প্রদেশের প্রিয়ম গর্গ একজন প্রাকৃতিক প্রতিভা ডানহাতি ব্যাটার।

২০১৮ সালের নভেম্বরে, গার্গ তার রাজ্য দল উত্তরপ্রদেশের হয়ে কানপুরে গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন। অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

More Articles