বিজেপিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল! কেন এই দাবি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের?
BJP Most Important Party : সামনের বছরই লোকসভা নির্বাচন। তৃতীয়বারের জন্য সিংহাসনে বসবেন নরেন্দ্র মোদি, নাকি উঠে আসবে কোনও বিকল্প শক্তি?
এই মুহূর্তে ভারত একটা বড় ভোটের মরসুমের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে। মাত্র কয়েকদিন আগেই ত্রিপুরা সহ উত্তরপূর্বের রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেল। তার আগে গুজরাত আর হিমাচল প্রদেশের ‘মেগা শো’ দেখে নিয়েছে গোটা দেশ। আপাতত প্রতিটা দলই ২০২৪ সালের জন্য নিজেদের তৈরি করে নিচ্ছে। সামনের বছরই লোকসভা নির্বাচন। তৃতীয়বারের জন্য সিংহাসনে বসবেন নরেন্দ্র মোদি, নাকি উঠে আসবে কোনও বিকল্প শক্তি? তারও আগে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট রয়েছে। সব মিলিয়ে এমনিতেই ভারতের রাজ্য রাজনীতির হাওয়া প্রবল গরম।
এতসবের মধ্যেই সামনে উঠে এসেছে বিখ্যাত গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি বিশেষ প্রতিবেদন। ওয়াল্টার রাসেল মিডের লেখা সেই প্রতিবেদনটি নিশ্চয়ই ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির চোখে পড়েছে এতক্ষণে। কারণ, ওয়াল্টারের বিশেষ এই কলামের বিষয়ই ছিল বিজেপি। সেখানে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিকে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে, আমেরিকার দিক থেকে দেখতে গেলে গেরুয়া শিবির যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে, এমনটাই তাঁর মতামত। আপাতত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিজেপিকে নিয়ে এহেন প্রতিবেদন সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ বিজেপিকে কেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বলে অভিহিত করলেন ওয়াল্টার মিড? গোটা ব্যাপারটাকেই তিনি ব্যাখ্যা করেছেন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ঠিক কী লেখা হয়েছে, এক এক করে বিস্তারে আসা যাক। সেইসঙ্গে যুক্তিগুলিও একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক।
ওয়াল্টার মিড পরিস্কারভাবে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমেরিকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হল বিজেপি দলটিকে বোঝা এবং তাদের রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করে দেখা। কেন? প্রথমত সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ। এই মুহূর্তে ভারতের জনসংখ্যার দিকে তাকালে দেখা যাবে, অধিকাংশই তরুণ যুবক যুবতী। ভারতের সিংহভাগ জনগণের গড় বয়স ৪০-র নীচে। আর এটাই ভারতকে আলাদা করে রেখেছে অন্যান্য দেশের থেকে। মেধাবী, কর্মঠ এবং প্রতিভাবান একটা প্রজন্ম এই দেশের বুকে বসে আছে। যা ভারতের অর্থনীতি ও সমাজের ক্ষেত্রে একটা বড় অবদান রাখবে। শুধু ভারত কেন, বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত। জাপানের মতোই প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে এই দেশের নাম উঠে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই সেটা আমেরিকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সেইসঙ্গে রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট। এই মুহূর্তে এশিয়ার বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে চিন। আমেরিকার সঙ্গে তার সংঘাত নতুন কিছু নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় চিনের কার্যকলাপ বেশ সন্দেহজনক ঠেকেছে আমেরিকার কাছে। যার মধ্যে রয়েছে গুপ্তচর বেলুন। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। আমেরিকার ওয়াশিংটনের পাশাপাশি অন্যান্য বেশকিছু জায়গায় রহস্যময় সাদা বেলুন দেখা যায়। পরে তদন্ত করে জানা যায়, এটি চিনের স্পাই বেলুন বা গুপ্তচর বেলুন। পাশাপাশি আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি ও কর্পোরেট সেক্টরে একের পর এক কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত। অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়। ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে চিন। ওয়াল্টার মিডের দাবি, এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা সহ গোটা বিশ্বের উচিত ভারতকে গুরুত্ব দেওয়া। ভারতের এই বিশাল সংখ্যক যুবশক্তি ও অর্থনীতিকে কাজে লাগানো। তাই তাঁর মতে, আমেরিকারও উচিত ভারতের সঙ্গে সবরকমভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাব রাখা।
আর ওয়াল্টারের মতে, এই কাজটি করার জন্য অবশ্যই ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে বুঝতে হবে। সেইসঙ্গে বিজেপিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ওয়াল্টার স্বীকার করেছেন, গেরুয়া শক্তির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত হানার অভিযোগ রয়েছে। হিন্দুরাষ্ট্র কায়েম করার স্বপ্ন নিয়ে বিজেপি আর আরএসএস এগোচ্ছে, সেটাও অস্বীকার করার নয়। তাদের কাজকর্মও অনেকটা সেই ইঙ্গিতই দেখাচ্ছে। কিন্তু ওয়াল্টারের মতে, এটা সত্যি হলেও, মুদ্রার একটি পিঠ। অপর দিকে উত্তরপ্রদেশের মুসলিমদের একটা অংশ এই বিজেপিকেই ভোট দিয়েছে। উত্তর-পূর্বের খ্রিস্টানরাও গেরুয়া শিবিরকে ভোট দিয়েছে। মোরবি ব্রিজ দুর্ঘটনার পরও গুজরাতে কার্যত রেকর্ড গড়ে জিতেছে বিজেপি।
সেইসঙ্গে ওয়াল্টারের দাবি, আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনেও যে বিজেপি জিতবে, এটা অনেক মহলই ধরে নিয়েছে। এখনই কোনও শক্তিশালী বিরোধী উঠে আসেনি। তাই ২০২৪-এও নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। এমন অবস্থায় বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেখলে বিজেপিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ওয়াল্টার। আমেরিকাকে যদি চিনকে থামাতে হয়, তাহলে বিজেপিকে বুঝতে হবে। ভারতের সংস্কৃতি, রাজনীতিকে বুঝতে হবে।