আইপিএলের কিং কোহলি নন, সব ধরনের ক্রিকেটের আজীবন 'ঈশ্বর' সচিনই
Inscript Debate: একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সচিন তেন্ডুলকর মোট রান, বাউন্ডারি, নট আউট, মোট অর্ধশতরান, মোট শতরানের সংখ্যায় বিরাটের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন।
২০০৩-০৪ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজ চলাকালীন সচিন তেন্ডুলকর কয়েকটি ম্যাচে কভার ড্রাইভ মারতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন। কভার ড্রাইভ সচিনের প্রিয় শটগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক স্টিভ ওয়া সিডনিতে আয়োজিত চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে এক পরিকল্পনা তৈরি করেন। তিনি তাঁর বোলারদের সচিনকে কভার ড্রাইভ শট খেলার জন্য প্রলুব্ধ করতে বলেছিলেন। অস্ট্রেলিয় বোলাররা তাঁদের অধিনায়কের কথা মতো বল করলেও সচিনকে পুরো ম্যাচে আউট করতে পারেননি। বহুবার কভার ড্রাইভ শট খেলার জন্য প্রলুব্ধ করার মতো বল করা হলেও সচিন পুরো ম্যাচে একবারও কভার ড্রাইভ শট খেলেননি। তা সত্ত্বেও প্রথম ইনিংসে তিনি ২৪১ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন।
সচিন তেন্ডুলকর এবং বিরাট কোহলি! মাস্টার ব্লাস্টার এবং চেস মাস্টার। গড অব ক্রিকেট এবং কিং কোহলি। ভারত তথা ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরিচিত দুটো নাম। দু'জনের অসংখ্য পুরস্কারের মতোই অগণিত ভক্ত সংখ্যা। যদিও দু'জন সম্পূর্ণ আলাদা সময়ের ক্রিকেটার, তবুও সমর্থকরা বহুবার দু'জনের মধ্যে তুলনা করেছেন। দুই বিখ্যাত এবং আলাদা সময়ের ক্রিকেটারের মধ্যে তুলনা করার বিষয়টি সম্পর্কে বিতর্ক তো হবেই পারে কারণ এই দুই ক্রিকেটার আলাদা আলাদা সময়ে আলাদা পরিবেশ, নিয়মের মধ্যে নিজেদের ক্রিকেট খেলেছেন। তবুও তর্কের খাতিরে যদি তুলনা করা হয় সেই তুলনার মাপকাঠি অনুযায়ী ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএল বাদ দিয়ে তাঁদের ক্রিকেট জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। টেস্ট ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং টি টোয়েন্টি ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ম্যাচের পরিসংখ্যানের বিচারে বিরাট কোহলি সচিন তেন্ডুলকরের থেকে এগিয়ে থাকবেন কারণ সচিন নিজের ক্রিকেটীয় জীবনে কেবলমাত্র একটি টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। যদিও আইপিএলে তিনি ৭৮ টি ম্যাচ খেলেছেন, তবুও মোট ম্যাচ, রান, সর্বোচ্চ রান, বাউন্ডারি সব ক্ষেত্রেই বিরাট সচিনের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। এই বিষয়ে বিতর্ক হতে পারে যে সচিন যেই সময়ে ক্রিকেট খেলেছেন তাঁর ক্রিকেটীয় জীবনের প্রথম নব্বই শতাংশ সময়ে ভারতে টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের অস্তিত্ব ছিল না। তাই সচিন নিজেও টি টোয়েন্টি ম্যাচ বেশি খেলতে পারেননি। সেই ক্ষেত্রে তুলনা করার জন্য কেবলমাত্র ক্রিকেটের দু'টি সংস্করণ বাকি থাকে। টেস্ট ক্রিকেট এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
টেস্ট ক্রিকেটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, বিরাটের সর্বোচ্চ রান, স্ট্রাইক রেট এবং মোট দ্বিশতরানের সংখ্যা সচিনের তুলনায় বেশি। অপরদিকে মোট রান, বাউন্ডারি, নট আউট, মোট অর্ধ শতরান এবং শতরানের ক্ষেত্রে সচিন অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এই পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে একটি বিতর্ক তৈরি হতে পারে। বিতর্ক এই কারণেই যে, সচিন তেন্ডুলকর বিরাট কোহলির তুলনায় অনেক বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। তাই তাঁর মোট রান, নট আউট এবং বাউন্ডারির সংখ্যা বিরাট কোহলির তুলনায় বেশি। সেই ক্ষেত্রে পাল্টা যুক্তি হিসাবে সচিন তেন্ডুলকরের গড় রানের পরিসংখ্যান দেখা যেতে পারে কারণ টেস্ট ক্রিকেটে সচিনের গড় রান বিরাটের তুলনায় বেশি। তার মানে পরিসংখ্যান অনুযায়ী সচিন তাঁর প্রত্যেক টেস্ট ম্যাচে বিরাটের তুলনায় বেশি রান ভারতের স্কোরবোর্ডে যুক্ত করেছেন। উল্লেখযোগ্য, সচিন যে সময়ে নিজের বেশিরভাগ ক্রিকেট খেলেছেন সেই সময়ে টেস্ট ক্রিকেটের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি ছিল।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সচিন তেন্ডুলকর মোট রান, বাউন্ডারি, নট আউট, মোট অর্ধশতরান, মোট শতরানের সংখ্যায় বিরাটের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। যদিও বিরাট কোহলি ব্যাটিং গড় এবং স্ট্রাইক রেটের হিসাবে মাস্টার ব্লাস্টারের থেকে এগিয়ে রয়েছেন। সচিনের ঝুলিতে একদিনের ক্রিকেটের একটি দ্বিশতরান রয়েছে যা বিরাটের ঝুলিতে এখনও আসেনি। এই ক্ষেত্রে বিতর্ক আসতেই পারে যে, সচিন যদি টেস্ট ক্রিকেটের বেশি গড় রান থাকার কারণে দলের স্কোরবোর্ডে প্রতি ম্যাচ হিসাবে বিরাটের তুলনায় বেশি রান যোগ করেছেন তাহলে বিরাট একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতি ম্যাচে সচিনের তুলনায় বেশি রান প্রতি ম্যাচে টিমের স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন। এই যুক্তির পাল্টা যুক্তি হিসাবে কখনই বলা যায় না যে, সচিন যেই ধরনের বোলার এবং দলের বিরুদ্ধে খেলেছেন বিরাট সেইরকম বোলার অথবা দলের বিরুদ্ধে খেলেননি। বরং বিরাট কোহলির কৃতিত্বকে দশমিক শতাংশ না কমিয়ে বলা যায়, ক্রিকেটের বিভিন্ন নিয়ম পরিবর্তনের ফলে ব্যাটারের সুবিধা একটু বেড়েছে। ফ্রি হিট, পাওয়ার প্লের মতো বিভিন্ন জিনিস ব্যাটারদের একটু বেশি স্বাধীনতা দিয়েছে। এছাড়া রয়েছে বর্তমান ডিআরএস পদ্ধতি। এই পদ্ধতি সচিনের খেলার সময় থাকলে আম্পায়ার স্টিভ বাকনার এবং ডি সিলভাকে হয়তো ভারতীয়রা মনেও রাখত না।
টেস্ট এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মোট পরিসংখ্যান অনুযায়ী সচিন তেন্ডুলকর এবং বিরাট কোহলি প্রায় সমান হলেও একটি বিভাগে সচিন বিরাট কোহলির থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। সেই বিষয়ে বিরাট চাইলেও সচিনের থেকে এগোতে পারবেন না। সচিন তেন্ডুলকর ভাবলেই আমরা ব্যাটার সচিন তেন্ডুলকরকে মনে করি। যদিও বোলার সচিন তেন্ডুলকর বহু খেলায় ভারতকে জয়ের দিকে এগিয়ে দিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেট পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সচিন প্রায় সাড়ে তিন রান প্রতি ওভার খরচ করে মোট ৪৬ উইকেট নিয়েছেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর কাছে ১৫৪ টি উইকেট রয়েছে। এমনকী তাঁর খেলা একমাত্র টি টোয়েন্টি ম্যাচেও তিনি একটি উইকেট নিয়েছেন। ভারতের ক্ষেত্রেই একদিনের ক্রিকেটে ওপেনার হয়ে দেড়শোর বেশি উইকেট নেওয়া অথবা টেস্ট ক্রিকেটে চার নম্বরের ব্যাটারের ৪৬ উইকেট সংগ্রহকারীদের নাম খুঁজলে বিগত এক দশকের উপর ভারতের কোনও খেলোয়াড়ের নাম পাওয়া যাবে না।
যে কোনও দলের কাছে অলরাউন্ডার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সচিন ছিলেন সেই অলরাউন্ডার। মানুষ হয়তো তাঁকে অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্য মনে রাখেন। তাই সেই বিখ্যাত ইডেন টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে হরভজন সিংয়ের ছয় উইকেটের আড়ালে কোথাও ঢাকা পড়ে যায় সচিন তেন্ডুলকরের নেওয়া তিন উইকেট। যেখানে প্রথমে এক ওভার বল করার সুযোগ পেয়ে হরভজন সিংয়ের সঙ্গে তিনি অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে ধস নামিয়েছিলেন। বিরাট কোহলি এবং সচিন তেন্ডুলকর। দুই মহান ক্রিকেটার ব্যাটার হিসাবে সমান সমান হলেও সর্বতোভাবে বিচার করলে অলরাউন্ডার ক্রিকেটের ভগবান ব্যাটিংয়ের রাজার থেকে একটু এগিয়ে থাকবেন।