ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ! কোন পক্ষের কতটা লাভ, ক্ষতির খতিয়ান কত?
Iran-Israel war: মনে রাখতে হবে, এই যুদ্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ইজরায়েলের পক্ষে নীরব সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ ও হুথি গোষ্ঠী ইরানের পক্ষ নিয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার আবহ জারি রাখবে।
গত ১২ দিন গোটা বিশ্বের নজর ছিল মধ্যপ্রাচ্যে। ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলা তীব্র সংঘাত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলির ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল। এক নাগাড়ে বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ আর পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের খবরের পর অবশেষে গত ২৪ জুন যুদ্ধবিরতির কথা জানান দিয়েছে দুই পক্ষ। আর এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, এই যুদ্ধ সত্যিই শেষ হলো? যুদ্ধশেষে ইরান ইজরায়েল, কে কোথায় দাঁড়িয়ে?
গত ১৩ জুন ইজরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায়। দাবি করে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা বিশ্বের জন্য হুমকি। ইরানও পাল্টা হামলা চালায়, তেল আভিভ ও হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ক্রমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। ইরানের ফোর্ডো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে হামলা করে মার্কিন সেনা। ২৪ জুন জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অবশেষে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়, যদিও উত্তেজনা পুরোপুরি প্রশমিত একথা বলার সময় এখনও আসেনি।
নেতানিয়াহু বলছেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নষ্ট করেছি।” অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “আমাদের প্রতিরোধ অটুট আছে, যা নষ্ট হয়েছে তা এবং আমরা আবার গড়ে তুলব।” ফলে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা আপাতত বিশ বাঁও জলে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।
ইজরায়েল এই যুদ্ধে তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করেছে। অন্যদিকে আমেরিকার সমর্থন যে তাদের দিকেই, তাও বিশ্বের সামনে তুলে ধরা গিয়েছে। নেতানিয়াহু ব্রিগেডের হামলায় ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক কেন্দ্র অন্তত আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ কথা স্বীকার করে নিয়েছে তেহরান। ফলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজ শ্লথ হবেই।
আরও পড়ুন-ইজরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রের তথ্য ফাঁস করায় ১৮ বছর জেল! কে এই ব্যক্তি?
আবার তেল আভিভ ও হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইজরায়েলের সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ভালোই। ইজরায়েলের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। এই পরিস্থিতি নেতানিয়াহু প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ইরানের ক্ষেত্রে পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস হওয়া বড় ধাক্কা হলেও যুদ্ধবিরতিকেও তারা নৈতিক ভাবে জয় হিসেবে দেখবে। কারণ তারা ইজরায়েলের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে সাহসের পরিচয় আর কেউই দিতে পারেনি। ইরানের নেতৃত্ব দেশের জনগণের কাছে বিজয় হিসেবে তুলে ধরছে এই ঘটনা। এর রেশ থাকবে। তবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের ক্ষতি তাদের অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে এ কথা খোমেনি প্রশাসন ঢেকেচেপে রাখতে পারবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে নেতানিয়াহুর অক্ষে যোগ দিয়েছিলেন। ১২ দিনে তিনি অন্তত ১২টি পোস্ট করেছেন ট্রুথ সোশ্যালে। লিখেছেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছি।” তবে এই হামলায় মার্কিন যোগ ঘরে বাইরে ট্রাম্পকে চাপে ফেলেছে। দেশেই প্রশ্ন উঠেছে তাঁর অতিতৎপরতার কার্যকারণ নিয়ে। অন্য দিকে মধ্যপ্রাচ্যে বিষয়ে অন্য স্বার্থগোষ্ঠী, বিশেষত চিন ও রাশিয়া ভবিষ্যতে মার্কিন বিরোধিতায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা নিয়ে দোলাচল সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন-বাহ ১২! ১২ দিনের যুদ্ধে ট্রাম্পের ১২টি পোস্ট
মনে রাখতে হবে, এই যুদ্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ইজরায়েলের পক্ষে নীরব সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ ও হুথি গোষ্ঠী ইরানের পক্ষ নিয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার আবহ জারি রাখবে।
এ যাত্রায় জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও, বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্গঠনের চেষ্টা জারি রাখবে, আর ইজরায়েল তা রোধে আবার হামলার পরিকল্পনা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদরা মনে করছেন, এই সংঘাত জারি থাকলে তেলের দাম বাড়বেই। বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থায়ী প্রভাব পড়বে।, গোটা বিশ্বের ভূ-রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাগরিক জীবন। বিপন্ন হয়েছে জীবন জীবিকা। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, জানতে চায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

Whatsapp
