ফের হু হু করে দেশে বাড়ছে করোনা-সংক্রমণ, ভারতে চতুর্থ ঢেউ?
একটানা ৩৪ দিন পর দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার এক শতাংশের বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা-বিধিনিষেধ শিকেয় ওঠার জন্যই ফের রাজ্য-সহ দেশজুড়ে বাড়ছে সংক্রমণ।
শক্তি হারিয়েও থামছে না করোনা অতিমারীর চোখরাঙানি। ফের রাজ্য-সহ গোটা দেশে ঊর্ধ্বমুখী করোনার গ্রাফ। একটানা ৩৪ দিন পর দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার এক শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কোভিড বুলেটিন থেকে জানা গেছে, সোমবার দেশে করোনা-আক্রান্তর সংখ্যাও বেড়েছে কিছুটা। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫১৮ জন, অন্যদিকে করোনা-মুক্ত হয়েছেন ২৭৭৯ জন। রবিবার আক্রান্তর সংখ্যা ছিল ৪২৭০ জন। নতুন করে আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ায় দেশে এখনও পর্যন্ত মোট করোনা-আক্রান্তর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪ কোটি ৩১ লক্ষ ৮১ হাজার ৩৩৫। এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা-আক্রান্তর সংখ্যা ২৫,৭৮২। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৯ জন। যার ফলে মোট মৃতর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫,২৪,৭০১ জন। গত সপ্তাহের তুলনায় দেশে ৪৫% বেড়েছে সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭১৪ জন। মৃত্যু হয়েছে আরও সাত জনের।
কেরল ও মহারাষ্ট্রেই ৬০% সংক্রমণ ধরা পড়েছে নতুন করে। দৈনিক সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে কেরল। ওই রাজ্যে রবিবার নতুন করে ১৫৪৪ জন করোনা-আক্রান্ত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে কেরলে আট হাজারেরও বেশি কেস ধরা পড়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র। গত একদিনে মহারাষ্ট্রে করোনা-আক্রান্তর সংখ্যা ১৪৯৪ জন। গত সপ্তাহে ৭২৪৩টি নতুন কেস নথিভুক্ত হয়েছে সে-রাজ্যে। দিল্লিতে রবিবার নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৩ জন, কর্নাটকে ৩০১ জন এবং হরিয়ানায় ১৪৮ জন। তামিলনাডু, কেরল, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্র- এই পাঁচ রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই রাজ্যগুলিকে নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
বলিউডে করোনার থাবা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। একাধিক তারকা নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে এসেছে। শাহরুখ খান, ক্যাটরিনা কাইফ, আদিত্য চোপড়া, কার্তিক আরিয়ান করোনা-আক্রান্ত হয়ে এই নিভৃতবাসে রয়েছেন। জানা যাচ্ছে, করণ জোহরের জন্মদিনের পার্টি থেকে বলিউডে ছড়িয়েছে কোভিড সংক্রমণ। করোনা-আক্রান্ত সোনিয়া গান্ধীও।
আরও পড়ুন: এবার ভারতে হানা নরোভাইরাসের! কতটা ভয়াবহ এই ভাইরাস, কীভাবে সংক্রমণ?
রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি
দেশের সংক্রমণের সঙ্গেই বেড়েছে রাজ্যের করোনা-আক্রান্তর সংখ্যাও। রাজ্যের ৫ জায়গায় সংক্রমণের হার বেশি। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে ওই ৫ জায়গায় বিশেষ নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। যে পাঁচটি জায়গায় বাড়তি নজরদারির কথা বলছে স্বাস্থ্যভবন, সেগুলি হল পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, নন্দীগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগণা ও বসিরহাট। সোমবার স্বাস্থ্যভবনের তরফে বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে নিয়মিতভাবে বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর কথাও বলেছে স্বাস্থ্যভবন।
স্বাস্থ্যভবনের দৈনিক বুলেটিন বলছে, ৬ জুন, ২০২২ তারিখে এ-রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ জন। এই সময় সুস্থ হয়েছে ৩৯ জন। রাজ্যে সুস্থতার হার ৯৮.৯৩% ।
কোভিড বিধিনিষেধ
এই অবস্থায় চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা-বিধিনিষেধ শিকেয় ওঠার জন্যই ফের রাজ্য-সহ দেশজুড়ে বাড়ছে সংক্রমণ। দেশে এখনও পর্যন্ত ১৯৪.১২ কোটি ডোজেরও বেশি করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। অনেকেরই বুস্টার ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাও সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে চিন্তিত চিকিৎসক মহল। তবে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনের নামও নেই, তা বাইরে বেরোলেই টের পাওয়া যায়।চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, কোভিড-বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেই ঠেকানো সম্ভব সংক্রমণ। ফাঁকা জায়গায় মাস্ক ব্যবহার না করলেও ভিড়ের মধ্যে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। বেঙ্গালুরু, দিল্লিতে ইতিমধ্যেই জনসমক্ষে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। মহারাষ্ট্র সরকারও রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করেছেন মাস্ক পরার জন্য। ওই রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে সোমবার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখনও হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়নি। তবে করোনার বিধিনিষেধগুলি যথাসম্ভব মেনে চলুন। রাজ্যে কোভিডের চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে, তবে এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঙ্গে সামনের মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলুন যতটা সম্ভব। চোখে-মুখে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন। বারবার স্যানিটাইজার ব্যবহার করা খুব কঠিন কাজ নয়, তাই বাইরে বেরোলে স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে রাজ্যগুলিকে করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরাও বলছেন যে, কোভিডের কোনও লক্ষণ প্রকাশ পেলেই দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এতে গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এলে আগের মতোই আইসোলেশনে থাকতে হবে। এই সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধ খাওয়া উচিত রোগীদের। আর অবশ্যই এখনও যাঁদের করোনার টিকা নেওয়া হয়নি, তাঁদের টিকা নেওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় ডোজের ন'মাস কেটে গেলে বুস্টার ডোজও সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করবে।