মোদির পাখির চোখ সিঁদুর! দুর্নীতির ইস্যু নিয়ে মাথাব্যথা নেই?
West Bengal: বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই ইস্যুতে কেন্দ্রকে সমর্থন করলেও, ভেতরে অভিযোগ ছিলই যে আসলে অপারেশন সিঁদুরও ভোট টানারই কৌশল। রাজ্যে শিক্ষকদের লড়াই, দুর্নীতি ইত্যাদি ইস্যু ছাপিয়ে এখন সিঁদুরের ছাপ।
সিঁদুর শব্দটি নিয়ে মাসখানেক ধরেই ভারতবর্ষ উত্তাল। ধর্মে যারা হিন্দু, সেই মহিলাদের বিবাহপরবর্তী চিহ্ন। কেন সিঁদুর নিয়ে তরজা? কারণ পহেলগাঁওয়ে লস্করের ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বেছে বেছে হিন্দুধর্মের পুরুষ পর্যাটকদের খুন করে (তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে স্থানীয় মুসলিম যুবকের প্রাণ যায়)। অর্থাৎ এই পুরুষদের স্ত্রীদের সিঁদুর মুছে দেওয়া হয় এক অর্থে। তারপর ভারত অপারেশন সিঁদুর নামে প্রত্যাঘাত করে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসী ডেরাগুলিতে। এরপর আরও সংঘাত বাড়ে। তবে অপারেশন সিঁদুর নামটি নিয়ে চর্চা থামেনি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই ইস্যুতে কেন্দ্রকে সমর্থন করলেও, ভেতরে অভিযোগ ছিলই যে আসলে অপারেশন সিঁদুরও ভোট টানারই কৌশল। রাজ্যে শিক্ষকদের লড়াই, দুর্নীতি ইত্যাদি ইস্যু ছাপিয়ে এখন সিঁদুরের ছাপ।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'সিঁদুর' নিয়ে মন্তব্য করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই অগভীর মন্তব্যগুলি পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের নিবিড় চর্চার সঙ্গে সম্পর্কিতই নয়। অপারেশনের নামকরণ নিয়ে মমতা বলেছেন, "সব নাম কেন্দ্রীয় সরকারই ঠিক করে। অপারেশন সিঁদুর নামটা দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে ক্যাচ করার জন্য। আমি এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হলাম। প্রথমবার নির্বাচনের আগে (মোদি) বলেছিলেন চা-ওয়ালা। তার পরের বার বললেন, পাহারাদার (চৌকিদার)। আর এখন কি সিঁদুর বেচতে এসেছেন? মনে রাখবেন, সিঁদুর বেচা যায় না। এটা মা-বোনেদের আত্মসম্মান। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রত্যেক মহিলার সিঁদুরের প্রতি সম্মান রয়েছে। তাঁরা স্বামীদের থেকে সিঁদুর নেন। কিন্তু আপনি তো সকলের স্বামী নন!"
কেন হঠাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঁদুর বিষয়ে এতখানি সময় ব্যয় করলেন? বৃহস্পতিবার বাংলায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরে মোট ৩২ মিনিট বক্তব্য রাখেন মোদি। ১৮ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ, ৮ মিনিট অপরেশন 'সিঁদুর'-এর প্রসঙ্গ, বাকি ৬ মিনিট সম্ভাষণ-সহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে দলের স্লোগানও তৈরি করে দিয়েছেন, "বাংলার নির্মম সরকার, আর নেই দরকার।"
মোদি বলেন, “আজ সিঁদুর খেলার বাংলার ভূমিতে এসেছি। তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের নতুন সংকল্প নিয়ে চর্চা হওয়া খুব স্বাভাবিক। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তারপর পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যেও অনেক ক্ষোভ জন্মেছিল। সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল। আমাদের সেনারা সিঁদুরের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ওই আতঙ্কবাদীদের মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে যেটা পাকিস্তান কল্পনাও করতে পারেনি। পাকিস্তানের কাছে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানো ছাড়া আর কিছু নেই। ওদের কোনও ভালো দিক নেই। দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই ওরা শুধু আতঙ্কবাদীদের পুষেছে। দেশভাগের পর থেকে ওরা শুধু ভারতের উপর হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশে যেভাবে খুন, ধর্ষণ চালিয়েছিল পাকিস্তানের সেনা সেটা কেউ ভুলবে না। এটাই ওদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যখন সম্মুখ সমর হয় তখন পাকিস্তান নিজের অবস্থান বুঝে যায়। এজন্যই ওরা সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য নেয়। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পর ভারত বিশ্বকে বলে দিয়েছে ভারতে সন্ত্রাসী হামলা হলে শত্রুকে তার বড় দাম দিতে হবে। পাকিস্তান মনে রাখুক আমরা তিনবার ওদের ঘরে ঢুকিয়ে মেরেছি। আমরা শক্তির পূজা করি। আমরা মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো করি। এটা ১৪০ কোটির ভারতবাসীর বার্তা – অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গকে এখন হিংসা, তোষণ, দাঙ্গা, মহিলাদের উপর অত্যাচার, দুর্নীতির রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে হবে।”
তারপরেই মমতাও আক্রমণ শানান। মনে রাখতে হবে, ৩৩টি দেশে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অবস্থান তুলে ধরতে কেন্দ্র সরকার যে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গড়েছে, সেই দলে রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন যে, অভিষেক মাতৃভূমির জন্য বিদেশে গিয়েছেন। "যতদিন আমাদের পার্টি বেঁচে আছে, আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাব। দেশ কারও একার নয়। দেশ আমাদের সবার," বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অভিষেক নিজে বলেছেন, "বাইরের শক্তি দেশে বিভাজন তৈরি করতে চাইলেও আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। আমি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের সদস্য। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে আমাদের ৪২ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। কেন্দ্রের শাসকদলের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে হয়তো মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু যখন সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্ন আসে, তখন আমরা দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ করি।"
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, সিঁদুর শব্দ নিয়ে এত অহেতুক চর্চা কেন হচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি নিশ্চিত যে শিক্ষকদের নিয়োগে দুর্নীতি ইস্যুকে ঢেকে দিতে পারে সিঁদুরচর্চাই? বিজেপিও বাংলায় এসে কেন দুর্নীতি সংক্রান্ত ইস্যুগুলি নিয়ে স্বল্প সময় ব্যয় করে সিঁদুরের বিজ্ঞাপনই করে গেল? বাংলায় নির্বাচনের আগে অপারেশন সিঁদুরই কি তবে একমাত্র ভোট-বাগানোর অস্ত্র হতে চলেছে?

Whatsapp
