১ কোটি মানুষকে তাড়াতে চান ট্রাম্প! পুশব্যাকই বিশ্ব জুড়ে ট্রেন্ড?
US amid Trump's anti-immigrant campaign: সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, সাড়ে পাঁচ কোটি ভিসা যাচাই করা হবে। ওয়াকিবহাল মহল আশঙ্কা করছে, এই প্রক্রিয়ায় ভিসা বাতিল হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে আমেরিকার অনেক অভিবাসীরই।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি নিয়ে আবারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন তিনি। ক্ষমতায় আসার পর কথা মতো অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে একের পর এক সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের মাস ডিপোর্টেশন প্ল্যান কী? এখনও অবধি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন?
সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, সাড়ে পাঁচ কোটি ভিসা যাচাই করা হবে। ওয়াকিবহাল মহল আশঙ্কা করছে, এই প্রক্রিয়ায় ভিসা বাতিল হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে আমেরিকার অনেক অভিবাসীরই। বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার পর যদি কেউ কোনো অপরাধমূলক কাজ করেন থাকেন, তাঁদের চিহ্নিত করবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিসা বাতিলও করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আপাতত বিদেশি ট্রাকচালকদের জন্য কোনো কর্মভিসা দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, বিদেশি চালকদের ফলে স্থানীয় চালকদের কাজের সুযোগ কমছে।
আরও পড়ুন- দেশজুড়ে বাঙালি খেদাও অভিযান! কী বলছে বাংলার বুদ্ধিজীবী মহল?
এপি-র এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ভিসা থাকা সবার উপরই সব সময় নজর রাখা হচ্ছে। যদি দেখা যায়, কেউ ভিসার নিয়ম ভেঙেছে বা ভিসার যোগ্য নন, তাহলে তাঁর ভিসা বাতিল করা হবে। এমনকি দেশ থেকে নির্বাসিতও করা হতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর যে সব বিষয় খতিয়ে দেখছে তার মধ্যে আছে— ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, কেউ জননিরাপত্তার মতো বিষয়ে হুমকি কিনা, কেউ কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিনা।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য ভিসা দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু তা বলে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা দেশটিতে থেকে যান, তাঁদের শনাক্ত করার জন্য এই যাচাইকরণের কাজ খুবই জরুরি।’’
উল্লেখ্য, ৪ বছরের ব্যবধানেই দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটে জয়ের পরেই সে দেশের অভিবাসন ঠেকাতে একের পর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। ক্ষমতায় এসেই বলেছিলেন, ‘‘যে সব বিদেশি নাগরিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন, তাঁরা যে আমেরিকার নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান কিংবা আদর্শের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করেন না, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ ২০ জানুয়ারি আদেশ জারি করেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চাওয়া বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে নিয়মকানুন যেন আরও কঠিন করা হয়। চলতি বছরের জুন মাসে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, বাইরের দেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা সকলের সমাজ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলিও খতিয়ে দেখা হবে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া পড়ুয়াদের উপরও কড়া বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। প্রথমে বিপজ্জনক অপরাধীদের শনাক্ত করার কথা বলা হলেও এখন দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের পরিবারই ‘অনুপ্রবেশকারী’! কেন অভিবাসীদের নিয়ে কড়া আমেরিকা?
নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালে প্রায় চার লক্ষ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগও জানিয়েছিল, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যেই ২০ হাজারেরও বেশি অনথিভুক্ত তথা অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে দাবি করেছে অভিবাসন অধিকার সংগঠনগুলি। এনবিসি নিউসের তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটি মানুষকে তাড়ানোর পরিকল্পনা ট্রাম্পের।
সারা বিশ্ৱ জুড়েই অভিবাসন নীতি জোড় দিচ্ছে দক্ষিণপন্থী নেতারা। দেখা যাচ্ছে তাঁরা এই নীতিতে ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন। ট্রাম্প মোদি-র মতো নেতারা এখানেই মিলে যান। সারা ভারত জুড়ে যেমন চলেছে বাঙালি ক্ষেদাও নীতি। এনআরসি এনে বলা হয়েছিল মুসলিম তাড়ানো হবে। এখন বাংলার বাইরের রাজ্যেগুলিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এ ভাবেই কি দেশে দেশে অভিবাসন নীতি প্রণয়ণ করে, আমরা ওরা-র রাজনীতি করে এক পক্ষকে ভয় দেখানো হবে আর আরেক পক্ষকে তুষ্ট করা হবে। মানুষ খেদানোর স্লোগান তুলেই কি টিকে থাকবে বড় বড় নেতারা? অভিবাসন নীতিই কি ক্ষমতাসীনদের মূল হাতিয়ার? সেই প্রশ্ন উঠছেই।

Whatsapp
