নাক ডাকিয়ে ঘুম মানেই সুখনিদ্রা নয়! মৃত্যুকে রোজ রাতে ডেকে আনছে আপনার ছোট্ট ভুলই

Snoring Problem: অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ঘুমের সময় ঘণ্টায় কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ বার শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে।

নাক ডাকা নিয়ে ইয়ার্কি-ফাজলামির অন্ত নেই। অল্পবিস্তর নাকডাকা নিয়ে ভুক্তভোগী সকলেই। নাক ডাকিয়ে ঘুমনোকে অনেকে সুখনিদ্রা বলে পাশ কাটিয়ে যান ঠিকই, কিন্তু সুখের এই ভুল ধারণা আসলে ঠেকে দেয় মৃত্যুর দিকেই। নাক ডাকার সমস্যা থেকেই একদিন ঘুমের মধ্যেই কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে হৃদপিণ্ড, বন্ধ হয়ে যেতে পারে জীবনের সমস্ত স্পন্দন। দীর্ঘস্থায়ী নাক ডাকা এমন একটি সাধারণ সমস্যা যাতে ভোগেন বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্করাই। আর এই নাক ডাকার জ্বালায় জেরবার হতে হয় সঙ্গে ঘুমনো মানুষটিকে। নাক ডাকায় অন্য মানুষের ঘুমের সমস্যা হয় ঠিকই, তার থেকেও বড় ক্ষতি হয় নিজের। নাক ডাকা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মারাত্মক লক্ষণও হতে পারে। নাক ডাকা হার্ট ফেলিওরের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

হার্ট ফেলিওর বা কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওর দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যার জন্য চিকিৎসার অবশ্যই প্রয়োজন। যদি হৃদপিণ্ড শরীরের প্রয়োজন মেটাতে পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প না করে তাহলে এই সমস্যা দেখা দেয়। আর স্লিপ অ্যাপনিয়া হার্ট ফেলিওরের একটি কারণ হতে পারে। এটি এমন এক রোগ যা ঘুমের সময় শ্বাস আচমকা বন্ধ করে এবং ফের শুরু করে। দুই ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া দেখা যায়:

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)- এটিই সবচেয়ে সাধারণ। হার্ট ফেলিওর, হাইপারটেনশন, অ্যারিথমিয়া এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে এই রোগ।
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (সিএসএ)- নাক ডাকার সঙ্গে এটি কম সম্পর্কিত। তবে হার্ট ফেলিওরের একটি উপসর্গ তো বটেই।

আরও পড়ুন- অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াই কেড়ে নিল বাপ্পি লাহিড়ির প্রাণ, নিঃশব্দে হানা দেয় এই ঘাতক অসুখ

নাক ডাকা কি হার্ট ফেলিওরের লক্ষণ?

নাক ডাকা হার্ট ফেলিওরের লক্ষণ নয়। তবে এটি স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ হতে পারে। যেহেতু স্লিপ অ্যাপনিয়া হৃদযন্ত্র বন্ধের এবং অন্যান্য গুরুতর অবস্থার কারণ হতে পারে, তাই নাক ডাকার অন্তর্নিহিত কারণ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি নাক ডাকার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী এবং জোরে হয়।

নাক ডাকা, স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং হার্টের কাজের মধ্যে সংযোগ কী?

যখন মস্তিষ্ক ডায়াফ্রামের সেই পেশিতে সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয় যা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে তখন সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া দেখা দেয়। নাক ডাকা সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা পাওয়ার কারণে হয়। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ঘুমের সময় ঘণ্টায় কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ বার শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে। এই ক্রমাগত ব্যাঘাতের ফলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। যখন অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, তখন আপনার মস্তিষ্ক দেহকে ঝাঁকুনি দেয় যাতে আপনি গভীর শ্বাস নিতে পারেন। সাধারণত এই ঘটনা ঘুমের সময় মনেও থাকে না, আর অনেকে অবহেলাও করেন। এক রাতে কয়েকশো বার এই ঘটনা ঘটতে পারে।

শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার কারণে কর্টিসোন এবং অ্যাড্রেনালিন, এই দু'টি স্ট্রেস হরমোনের বৃদ্ধি ঘটতে পারে। এই হরমোনগুলি হার্ট ফেলিওর এবং উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ। এদের ফলে হার্ট অ্যাটাকও ঘটতে পারে।

স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলি কী কী?

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সাধারণ লক্ষণ জোরে নাক ডাকা। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে আছে,

হাঁপানো

দম বন্ধ হওয়া

নিজের নাক ডাকার শব্দে নিজে চমকে যাওয়া

ঘুমের সময় অনেকবার জেগে ওঠা

সকালে নিয়মিত মাথা ব্যথা বা শুষ্ক মুখ নিয়ে ঘুম থেকে উঠা

দিনের চরম ক্লান্তি

আরও পড়ুন- কেন ঘুমের জন্য ওষুধের দরকার পড়ল মানুষের? অবাক করবে স্লিপিং পিল আবিষ্কারের ইতিহাস

সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

শ্বাসকষ্ট, ঘুমের সময় হঠাৎ জেগে ওঠা

অনিদ্রা

দিনের চরম ক্লান্তি

মেজাজ পরিবর্তন

ক্রমাগত মাথাব্যথা

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন

নকটুরিয়া (রাতে অত্যধিক প্রস্রাব)

এনুরেসিস (বিছানায় প্রস্রাব)

স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ কী?

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়ার বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কারণ রয়েছে। OSA উপরের শ্বাসনালীতে বাধা এবং বায়ু প্রবাহে বাধার কারণে ঘটে। CSA মস্তিষ্কের সংকেত সংক্রান্ত সমস্যার কারণে হয় যা নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটায়।

More Articles