কলকাতা থেকে অদূরেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দির! যে তথ্য জানতেই হবে ভক্তদের

আগামী বছরেই পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে যাবে এই মন্দিরের দ্বার।

এটা যেন স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্নপূরণের গল্প। মাঝে কেটে গেছে সাড়ে চার দশকেরও বেশি সময়। স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে নানা বাধা এসেছে পথে, কিন্তু অবিচল লক্ষ্যেই অবশেষে আশাপূরণ। অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে বহু পুণ্যার্থীরও। আগামী বছরেই পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে খুলে যেতে চলেছে বিশ্বের সবেচেয়ে বড় মন্দির। কলকাতা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে নদিয়া জেলার মায়াপুরই ইসকনের প্রধান কেন্দ্র। সেখানেই দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি হচ্ছিল বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়ামটি, যা ২০২৩ সালের জুলাই বা অগাস্ট নাগাদ খুলে যাবে সকলের জন্য।

মন্দির স্থাপনের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা
১৯৭৬ সালে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীপ্রভুপাদ প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন, একটি বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম তৈরি করার। তাঁর মনে হয়েছিল ইসকন মন্দিরের পাশে একটি ভবন থাকা প্রয়োজন, যেখানে বৈদিক জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা হবে। পাশাপাশি বিশ্বের সৃষ্টি কীভাবে হলো, সেই তথ্যও সকলের কাছে তুলে ধরা হবে। বৈদিক জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে সামগ্রিক সচেতনতা গড়ে তুলতেই এমন ভবন তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। ওয়াশিংটনে থাকাকালীন তিনি অম্বরীশ প্রভুর কাছে মন্দির তৈরির জন্য অর্থ সাহায্য চান। শ্রীপ্রভুপাদের সেই স্বপ্নই পূরণ করলেন অ্যালফ্রেড ফোর্ড তথা অম্বরীশ দাস। বিখ্যাত ফোর্ড মোটর কোম্পানির মালিকানা আগামী দিনে তাঁর হাতেই আসতে চলেছে । জানা গেছে, এই মন্দির তৈরির প্রধান উদ্যোক্তা তিনি। ১৯৭৫ সালে তিনি ইসকনে যোগ দেন। তাঁর নতুন নাম হয় অম্বরীশ দাস। এই মন্দির তৈরির জন্য তিনিই ৩০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করছেন বলেই জানা যাচ্ছে। যতদূর জানা যায় , নৈহাটির বাঙালি মেয়ে শর্মিলা ভট্টাচার্য অ্যালফ্রেড ফোর্ডের স্ত্রীও ইসকনেরই ভক্ত।

২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রথমে ঠিক হয় ২০১৬ সালের মধ্যেই সম্পূর্ণ হবে মন্দির নির্মাণের কাজ। কিন্তু নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি কাজ। এরপর ২০১৯ সাল থেকে করোনার হানায় স্থগিত হয়ে যায় মন্দির নির্মাণের কাজ। তবে অতিমারী খানিক কাটতেই ফের পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে বাকি কাজ। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী বছরে শেষ হয়ে যাবে কাজ এবং তারপরই পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে যাবে এই মন্দিরের দ্বার।

আরও পড়ুন:কলকাতার দুর্গাপুজোয় বিশেষ আকর্ষণ অষ্টধাতুর প্রতিমা! দৈর্ঘ্য থেকে ওজন, সবেতেই চমক 

ইসকন মন্দিরের অজানা কথা
মায়াপুর ইসকনে গড়ে ওঠা নতুন এই বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়ামটি আকার ও আয়তনে পিছনে ফেলে দেবে বহু ধর্মীয় স্থান বা সৌধকে। আধুনিক ভারতে গড়ে ওঠা এই মন্দির তাজমহল বা ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পল ক্যাথিড্রালের থেকেও বড়। এটিই বিশ্বের সবথেকে বড় হিন্দু মন্দির। ৪০০ একর জমির ওপর তৈরি আঙ্কোর ভাটের মন্দিরকেও হার মানাবে এই নির্মাণ।

বিশালকার এই মন্দিরটি ৭০০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এর উচ্চতা প্রায় ১১৩ মিটার এবং মন্দিরের মেঝে ২.৫ একরজুড়ে।

মন্দিরের তিনটি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে একটি বড় এবং বাকি দু'টি ছোট।

৪০০ কোটির বেশি অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা এই মন্দিরের প্রতিটি তলায় একসঙ্গে দশ হাজার মানুষ শ্রীকৃষ্ণর কাছে প্রার্থনা করতে পারবেন। ফুটবল মাঠের চেয়েও বড় মন্দিরের প্রতিটি তলা।

ভিয়েতনাম দেশ থেকে আনা নীল বলিভিয়ান পাথর দিয়ে তৈরি করা মন্দিরের গম্বুজগুলি। মন্দিরের গম্বুজ থেকে ২০ মিটার দীর্ঘ বৈদিক ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে।

প্ল্যানেটোরিয়ামের ভেতরে রয়েছে সৌরজগৎ ও তার গ্রহের ব্যাপারে বর্ণিত এক বিশালকার ঘূর্ণায়মান মডেল যা ভগবৎ পুরাণমতে তৈরি। একই সঙ্গে থাকবে মানুষের কাছে দৃশ্যমান পৃথিবীর সঙ্গে কীভাবে সৌরজগতের গতি জড়িত, তার ব্যাখ্যা। একবারে নীচ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ফ্লোরে যাওয়ার জন্য থাকবে চলমান সিঁড়ি।

বৈদিক এই প্ল্যানেটোরিয়াম, চন্দ্রোদয়া মন্দিরের ভেতরে দু'টি সুদর্শন চক্র নির্মাণ করা হয়েছে, যা ২৪ ক্যারাটের সোনা দিয়ে তৈরি। বড় চক্রের ওজন ১.৫ টন এবং ছোটটির ওজন ৫ কুইন্টাল। রাশিয়া থেকে কারিগরের হাতে তৈরি এই চক্র তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এগুলিকে স্থাপন করা হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল ভবনের নকশা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে নবনির্মিত চন্দ্রোদয়া ভবনের নকশা।

দেশ-বিদেশের ভক্তরা যেন মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সহজেই যোগ দিতে পারেন, তাই ইতিমধ্যেই রাজ্যের পর্যটন বিভাগর সঙ্গে কথা বলেছেন ইসকন কর্তৃপক্ষ।

More Articles