২৪ ঘণ্টায় শহর খালি করার নির্দেশ! ইজরায়েল ঠিক কী করতে চলেছে গাজায়?

Israel Palestine Attack : ইজরায়েল বলছে, হামাস সেদেশের সাধারণ মানুষকে 'মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করছে।

মারাত্মক হুমকি! ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বাসা ছেড়ে, এলাকা ছেড়ে না চলে গেলে বধ্যভূমিতেই শেষ হয়ে যাবেন গাজা শহরের সাধারণ নাগরিকরা। শুক্রবার সকালে এই হুমকিই ঘোষণা করেছে ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স! আইডিএফ গাজা শহরের সমস্ত নাগরিকদের তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণ দিকে চলে যেতে বলেছে। গাজার উত্তর পূর্ব দিকে রয়েছে ইজরায়েল, আর গাজার দক্ষিণে আছে মিশর। একটি ম্যাপে নির্দিষ্ট করে দেওয়া ওয়াদি গাজার এলাকায় চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইজরায়েল। হামাস সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইজরায়েলে ব্যাপক হামলা চালায়। গাজা শহর হচ্ছে এমন একটি এলাকা যেখানে সারাক্ষণই সামরিক অভিযান হয়। নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্যই নাকি ইজরায়েল এই আগাম ঘোষণা করেছে।

ইজরায়েল যখন ফের অনুমতি দেবে তখনই নাগরিকরা গাজা শহরে আবার ফিরে আসতে পারবেন। ইজরায়েলের সীমান্তের ধারেকাছেও ঘেঁষতে বারণ করা হয়েছে নাগরিকদের। ইজরায়েল জানাচ্ছে, হামাসের সন্ত্রাসবাদীরা গাজা শহরের নিরীহ নাগরিকদের ঘরে এবং বাড়ির নিচে সুড়ঙ্গের ভিতরে লুকিয়ে আছে। সন্ত্রাসীদের নিকেশ করতে হলে ওই এলাকা ধ্বংস করে দিতেই হবে। তবে হামাস যেভাবে ইজরায়েলে হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষ খুন করেছিল ইজরায়েল এবার খানিক যেন বার্তা দিতেই সেই পথে হাঁটেনি। সাধারণ মানুষকে আগে থেকেই সতর্ক করে সরে যেতে বলা হয়েছে।

গাজা শহরের সাধারণ বাসিন্দাদের নিজেদের নিরাপত্তা এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ দিকে চলে যেতে বলার পাশাপাশি হামাসের সন্ত্রাসবাদীদের থেকেও দূরে থাকতে বলেছে ইজরায়েল। ইজরায়েল বলছে, হামাস সেদেশের সাধারণ মানুষকে 'মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করছে। জাতিসংঘকেও নিজের কর্মীদের নিকটবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে ইজরায়েল।

 

আরও পড়ুন- থিয়েটার করতেন চুটিয়ে, স্ত্রী-শিশুদের খুন করে ইজরায়েল! হামাসের মাস্টারমাইন্ড দেইফ এক রহস্য

হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ইসরায়েল গাজা স্ট্রিপের কাছে ব্যাপক সৈন্য নামিয়েছে। হামাসের আক্রমণে শনিবার ইজরায়েলে ১,৩০০ মানুষ প্রাণ হারান। পাল্টা প্রতিশোধ নিতে ইজরায়েল বিমান হামলা চালায় যাতে গাজায় ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য হামাসকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলেই মনে করে। এই হামাস, শুক্রবার সারা মুসলিম বিশ্ব জুড়ে 'Day of Rage' পালনের ডাক দিয়েছে। গাজায় এই ইজরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকলে ইরান বহুমুখী যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইতিমধ্যেই। অন্যদিকে, মার্কিন কূটনীতিকরা ইজরায়েলের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা রোধের উদ্দেশে এই অঞ্চলে যাচ্ছেন নিয়মিত।

মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার জর্ডন এবং কাতারে বৈঠক করার পাশাপাশি বাহরাইন সফর করবেন বলে খবর। তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী হাকান ফিদান তুরস্ক থেকে গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করতে মিশরে যাচ্ছেন। জার্মান বিদেশমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক শুক্রবার ইজরায়েল সফরে যাচ্ছেন। ইউরোপ;ইয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন এবং ইউরোপিয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলাও শুক্রবার সেদেশে যাবেন।

আসন্ন এই হামলার ইঙ্গিত দেওয়ার পরেই ইজরায়েলের সীমান্তে নেমেছে যুদ্ধের ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি। ঘনবসতিপূর্ণ গাজা স্ট্রিপে রাস্তা অত্যন্ত সরু, বাড়িও প্রচুর। বোমা হামলায় ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষও রয়েছে ছড়িয়ে। সরু রাস্তা দিয়ে বিশাল ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়াগাড়ি চলাচল করাও বেশ কঠিন। তবে যে হামাসকে নিকেশ করতে এত আয়োজন, সেই হামাস পাল্টা গাজার নাগরিকদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে নিষেধ করেছে। যদি সাধারণ মানুষ ওখানে থাকতে বাধ্য হন, তাহলে ইজরায়েলের এই হামলার পর কী পরিণতি হবে তা ভেবেই শিউরে উঠতে হয়। হাতে সময় ২৪ ঘণ্টা, কী ঘটতে চলেছে, বিশ্ব জানে না।

More Articles