৫০ বছরের প্রতিশোধ! ৫০০০ রকেটের হামলা! গান শুনতে এসে লাশ হয়ে গেলেন ওরা...

Israel Palestine War : এই মর্মান্তিক আক্রমণে অন্তত ৭০০ ইজরায়েলির প্রাণ গেছে। অপহৃত বহু।

গান হবে, নাচ হবে, সঙ্গে হুল্লোড়। শুক্রবারের সন্ধ্যাটা এমনভাবে কাটাতেই জড়ো হয়েছিলেন হাজারে হাজারে মানুষ। আনন্দ ও উদযাপনের স্বপ্ন খানখান করে দিল রক্ত, মাংস, আর বারুদের গন্ধ। চারদিক থেকে ছুটে আসা এলোপাথাড়ি গুলি সঙ্গীতের শব্দকে ঢেলে দিয়ে মানুষের আর্তনাদকে বাড়িয়ে তুলেছে ক্রমশ। হাজার হাজার কমবয়সি লাশ শুয়ে আছে গাজায়, একটু আগেই সেখানে হুল্লোড়, নাচ-গানের কথা ছিল। গণহত্যা দেখল শুক্রবারের ইজরায়েল! ২৬ তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য দক্ষিণ ইজরায়েলের ওই নাচের পার্টিতে গিয়েছিলেন আরিক নানি, কেউ বা গেছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করে আনন্দ করতে, কেউ কেউ বন্ধুদের নিয়ে... পরিণতি একই! লাশ হয়ে যাওয়া। হামাসের বন্দুকধারীদের আক্রমণ এক নৃশংস গণহত্যার দৃশ্য আঁকল গাজায়। গাজার নিকটস্থ কিবুতজ রেইমের কাছে একটি নেচার পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন ওই তরুণ তরুণীরা। গত কয়েক দশকে সেদেশে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা।

চারদিক থেকে গুলির শব্দ, সব দিক থেকে এলোপাথাড়ি গুলি উড়ে আসছে। পালানোর চেষ্টা করে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে দেহ। অভাবনীয় বিশৃঙ্খলা। একটি বিস্ফোরণ হতেই আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার আর প্রাণ বাঁচানোর দৌড়! প্রাণ বাঁচাতে গাড়ির উপর লাফ দিয়ে দিয়ে পালাচ্ছিলেন তরুণ তরুণীরা। গাড়িতেও আগুন ধরে যায়। কেউ বেঁচেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লুকিয়ে থেকে, কেউ মরেছেন, কেউ আবার নিখোঁজ! গাজায় এই মর্মান্তিক আক্রমণে অন্তত ৭০০ ইজরায়েলির প্রাণ গেছে। অপহৃত বহু। শুধু ওই নেচার পার্টিতেই ২৬০ টিরও বেশি মৃতদেহ মিলেছে। আসলে কেবল ওই পার্টিতে হামলা নয়, পুরো দক্ষিণ অংশ জুড়েই আগুন জ্বলেছে।

প্যালেস্তাইনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস গাজা থেকে ইজরায়েলের সব দিক দিয়ে হামলা চালায়। হামাসের জঙ্গিরা ঘরে ঘরে হামলা চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা, অপহরণ করা সমস্তটাই চলছে ভয়ানকভাবে। ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপপুর যুদ্ধের পর ইজরায়েলের মাটিতে সবচেয়ে নৃশংস হামলা এটিই। ক্যামেরা, গ্রাউন্ড-মোশন সেন্সর এবং নিয়মিত সেনা টহলদারি সহ গাজা-ইজরায়েল সীমান্তে উচ্চ প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হামাসের গেরিলা আক্রমণ সফল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি বুলডোজার ইজরায়েল-গাজা সীমান্তের দুর্ভেদ্য লোহার প্রাচীর ভেঙে ফেলছে। হামাস যোদ্ধারা সীমান্ত পেরিয়ে, গর্ত কেটে, নৌকা ও প্যারাগ্লাইডারে করে সমুদ্রপথেও হামলা চালিয়েছে।

দুই বিখ্যাত ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা পরিষেবা শিন বেট এবং মোসাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই হামলা এবং মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। অথচ মোসাদ বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা! ৩ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাজেট তাঁদের, ৭,০০০ শক্তিশালী কর্মী রয়েছেন। মোসাদ সিআইএর পরে পশ্চিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম গোয়েন্দা সংস্থা। ২০২১ সালের জুন মাসে ডেভিড 'ডাডি' বার্নিয়া মোসাদের প্রধান নির্বাচিত হন। অত্যন্ত গোপনীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হন তিনি।

মোসাদের বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে, তবে এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো কেমন তা বাইরের কেউই জানে না। এই মোসাদের সদস্যরা লুকিয়ে থাকেন প্যালেস্টাইনের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মধ্যেই। ভেতরকার খবর এনে দেয় গোয়েন্দাদের। লেবানন, সিরিয়া এবং ইরানের মতো শত্রু দেশগুলিতেও মোসাদের এজেন্ট রয়েছে৷ এই গোয়েন্দা সংস্থার বিশাল গুপ্তচর নেটওয়ার্ক জঙ্গি নেতাদের গতিবিধির পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দেয়। এই এত গুপ্তচর, এজেন্ট নিয়েও হামাস কীভাবে ইজরায়েলে এমন হামলা চালাল আর গোয়েন্দারা জানতেও পারলেন না? কেন ইজরায়েলের চিরকালের নির্ভরযোগ্য আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গাজা থেকে আসা রকেট ঠেকাতে পারল না? শয়ে শয়ে সাধারণ মানুষের লাশ গুনছে বিশ্ব।

More Articles