ক্যানসারকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে হ্যাটট্রিক! এভাবেও ফিরে আসা যায়, দেখালেন ফুটবলার হলার
Sebastien Haller Cancer fighter Borussia Dortmund : তারপর বাসেলের বিরুদ্ধে আট মিনিটে তিনটে গোল। এভাবেও যে ফিরে আসা যায়! এভাবেও লড়াই করা যায়!
‘সত্তর মিনিট! সির্ফ সত্তর মিনিট হ্যায় তুমহারে পাস…’
এখানে সত্তর মিনিট নয়। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড বনাম বাসেলের প্রীতি ফুটবল ম্যাচে সেই সময়টা লাগল ঠিক আট মিনিট। এই আট মিনিটে ঠিক কী কী হতে পারে? কী কী করা সম্ভব? এইসব ভাবনার মধ্যেই গোল করে বেরিয়ে যাচ্ছে একটা শ্যামলা, লম্বা চেহারার ছেলে। নিজের ঈশ্বরকে, দলের কোচকে কথা দিয়েছিলেন, ৯ নম্বর জার্সিটির সদ্ব্যবহার করবেন তিনি। ঠিক সেটাই করলেন সেবাস্তেইন হলার। আইভরি কোস্টের এই খেলোয়াড় মাত্র আট মিনিটেই করলেন হ্যাটট্রিক। কিন্তু এটা বললে গল্পটা পুরো বলা হয় না। হলারের এই আট মিনিটের আগের আরও অজস্র মিনিট, ঘণ্টা, সেকেন্ড কেটেছে যন্ত্রণায়। কষ্টে। কারণ? ততক্ষণে শরীরের ভেতর বাসা বেঁধেছে ক্যানসার…
সেবাস্তেইন হলার মেসি, রোনাল্ডো বা নেইমার নন। নিদেনপক্ষে জুলিয়ান আলভারেজ, ভিনিসিয়াস জুনিয়র বা হ্যালান্ডও নন। বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে খুব পরিচিত কেউ নন একেবারেই। মাঝারি ক্লাবে খেলেছেন বহুদিন। তারপর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ওয়েস্ট হ্যাম ক্লাবে গিয়েও সেভাবে সফল হননি। কেরিয়ার শেষ হয়েই যেত; তবুও একবার শেষ চেষ্টা করলেন জার্মানির আয়াক্স আমস্টারডামের হয়ে। সেখানে বেশ সফলই ছিলেন তিনি। তারপর সেই পুরস্কারেই ডাক পেলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে। জার্মানি তো বটেই, বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শক্তিধর এই ক্লাবে তিনি ছিলেন বদলি। বরুশিয়ার হ্যালান্ড ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে চলে যাওয়ার পর তাঁর বদলি হিসেবেই আসেন হলার। নামেও মিল, কাজেও যাতে মিল হয় সেই আশাই রাখলেন কোচ।
কিন্তু জীবনে মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক! প্রীতি ম্যাচ খেলতে দলের সঙ্গেই সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন সেবাস্তেইন হলার। প্র্যাকটিস করতে করতে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীর খারাপে জেরবার হয়ে পড়েন হলার। ব্যাপারটা কী? সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে জয়া হল। যাবতীয় পরীক্ষার পর রিপোর্ট দেখে আর কোনও কথা বলতে পারেননি হলার। চোখের সামনে পৃথিবীটা যেন অন্ধকার হয়ে গেল। রিপোর্টে লেখা – ‘ডায়াগনসড উইথ টেস্টিকিউলার ক্যানসার’…
ডাক্তার জানিয়েছিলেন, হলারের অণ্ডকোষে টিউমার পাওয়া গিয়েছে। এবং সেটি কার্সিনোজেনিক। মানে, ক্যানসার। মারণ রোগে আক্রান্ত সেবাস্তেইন হলার। থমকে গেল ডর্টমুন্ড। থমকে গেলেন হলার। ক্লাবের জার্সি গায়ে ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর। তাহলে কি স্বপ্ন দেখার পালা এখানেই শেষ?
কিন্তু হলারের শরীরে বইছে আফ্রিকান রক্ত। বইছে জেদ, লড়াই, হার না মানা মনোভাব। এত কষ্টের পর একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছেন তিনি। সেই জায়গাটা এত সহজে ভেঙে ফেলবেন? না, কখনই না। শুরু হল চিকিৎসা। অপারেশন, কেমোথেরাপির যন্ত্রণা সহ্য করলেন তিনি। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই জারি রাখলেন। শুকিয়ে যাচ্ছে শরীর, যন্ত্রণায় ঘুম আসে না রাতে। তবুও লড়াই জারি রাখলেন হলার। ছ’মাস ধরে চলল যমে-মানুষে টানাটানি।
শেষমেশ ফিরে এলেন সেবাস্তেইন হলার। ডাক্তার বললেন, এই মুহূর্তে ক্যানসারের ভয় নেই। ব্যস, এই খবরটির প্রত্যাশাতেই ছিলেন। গোটা সময় তাঁর পাশে থেকেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। ক্লাবের কাছে, কোচ-সতীর্থদের কাছে কথা দিলেন। যে করেই হোক, নিজের ফর্মে ফিরবেন তিনি। গোল করে নাস্তানাবুদ করে দেবেন বিপক্ষকে। তারপর?
তারপর বাসেলের বিরুদ্ধে আট মিনিটে তিনটে গোল। এভাবেও যে ফিরে আসা যায়! এভাবেও লড়াই করা যায়! সেবাস্তেইন হলারের স্বপ্ন এখনও থামেনি। এগিয়ে যেতে চান তিনি, আরও আরও দূরে।